ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ওরা পারলে, খালেদ-এবাদতরা কেন পারেন না?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৪, ২৭ মে ২০২২

নির্বিষ খালেদ আহমেদ

নির্বিষ খালেদ আহমেদ

‘সুইং’ শব্দটা ঠিক কতটা মাহাত্ম রাখে একজন পেসারের ক্যারিয়ারে, তা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার কিছু নেই। সুইংয়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। লাইন, লেন্থ, ইয়র্কার, বাউন্স- এসবই একজন পেসারকে ভয়ঙ্কর করে তোলে। সেই সঙ্গে গতিও। এই যে প্রতিপক্ষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার বিষয়টা, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টে সেটা কি আমরা আমাদের পেসারদের মধ্যে দেখেছি?

জবাব দিতে মস্তিষ্কে খুব বেশি জোর দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, এমন কোনো মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া আমাদের ভাগ্যেই যে জোটেনি। পুরো টেস্টের কোনো একটা স্পেলেই আমাদের দুই পেসার এবাদত হোসাইন ও খালেদ আহমেদ শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের মনে বিন্দুমাত্র ভয়ের সঞ্চার করাতে পারেননি। 

অথচ দুই টেস্টে বাংলাদেশের তিন পেসার মিলে হাত ঘুরিয়েছেন ৯৫টি ওভার! যা থেকে সাফল্য বলতে মাত্র চারখানা উইকেট। তাও পেয়েছেন এবাদত হোসাইন, এক ইনিংসেই। 

তো একটি বার ভাবুন তো! এই কড়া রোদ আর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রায় শ’খানেক ওভার করার ফলাফলটা আসলে কি পেলাম বা কি পেলেন পেসাররা? এমনটা কেন হয়? আমাদের পেসারদের এমন উইকেট খরার পেছনে কারণটা আসলে কি? 

এক্ষেত্রে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের হয়ত সব বড় বড় মত থাকতে পারে। তবে, সাদা চোখে যা বোঝা যায়, আমাদের বোলাররা নিজেদের কন্ডিশনই আসলে বুঝতে পারেন না! আমাদের পেসাররা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না যে, পিচ কেমন ব্যবহার করবে। আর পিচ হয়ত তাদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, তবে তারা হয়ত পিচের ভাষা বুঝে উঠতে পারেন না। তাই হয়ত উইকেট নামক সোনার হরিণও ধরা দেয় না এবাদত-খালেদদের হাতে।

তারা শুধু বল ছুড়েই যান। আর প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা যেন খুব বেশি সতর্ক। তারা কোনোভাবেই উইকেট দিতে নারাজ। অথচ ভিন্ন চিত্র আমাদের ব্যাটারদের ক্ষেত্রে। 

বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিজেদের উইকেটের মূল্যটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রেস কনফারেন্সে এসে সাকিব আল হাসান যেমনটা বলেছিলেন, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মানসিকতায় সমস্যা রয়েছে। সাকিব যখন বলেছেন, তখন তো নিশ্চয়ই মেনে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ দলকে আর কে ভালো করে বোঝে বলুন! সুতরাং প্রধান সমস্যা মানসিকতায়। আমরা আসলে মস্তিষ্ক দিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারি না। আর আমরা আমাদের প্রতিটি উইকেটের মূল্যও দিতে জানি না। তাইতো আমাদের পেসারদের উইকেটের কলামটা থেকে যায় ফাঁকা। 

অন্যদিকে, আসিথা ফার্নান্ডোর মত বোলারও বাগিয়ে নিয়ে যান ১৩ খানা উইকেট। যেখানে আগের তিন ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ছিল মাত্র ৪টি।

তাদেরকে যেন উইকেট উপহার দেয়ার মহড়া হয়। অন্যদিকে দেশি পেসারদের চলে হাহাকার। এর পেছনে আরেকটা যে দুর্বলতা রয়েছে, তা হচ্ছে- ‘পরিকল্পনার অভাব’। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের দুর্বলতার বিষয়ে তথ্য খুব কমই থাকে বলেই মনে হয়। তারা ঠিক জানেন না, কোন ব্যাটারকে কিভাবে কুপোকাত করা সম্ভব। কার দুর্বল জায়গাটা কোথায়। 

অথচ বিশ্বের নানা প্রান্তের পেসাররা ঠিকই প্রতিপক্ষ ব্যাটারের দুর্বলতা অনুযায়ী পরিকল্পনার ছক এঁকে সে অনুযায়ী ফিল্ডিং সাজান এবং ক্রমাগত একটা চ্যানেল ধরে বল করে যান। আমাদের বোলাররা সে কাজটা একেবারেই করতে পারেন না।

অবশ্য বাংলাদেশি বোলারদের এই ঘাটতির দায় টিম ম্যানেজমেন্টের উপরও বর্তায়। তাছাড়া আরেকটা অভিমত থাকতে পারে যে, আমাদের বোলাররা ঠিক মানসম্মত নন। হ্যা, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। 

তাই বলে এই কাসুন রাজিথা কিংবা আসিথা ফার্নান্ডোদের বোলিংও ঠিক বিশ্বমানের কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। বদলি বোলার হিসেবে খেলতে নেমেই চমকে দেয়া কাসুন রাজিথার সম্ভবত এই সিরিজে মাঠে নামার কথাই ছিল না।

নয় টেস্টে রাজিথার ঝুলিতে ছিল মাত্র ২৫টি উইকেট। নিশ্চয়ই তারা বিশ্বমানের টেস্ট বোলার নন। তবে আমাদের পেসার আর তাদের মধ্যে পার্থক্য সেই মানসিকতায়। আমরা যেখানে যেমন আছি, তেমন থেকে যেতে চাই। আমরা ভয় পাই, আমরা বুঝি না, আমাদের পরিকল্পনা থাকে না, আমরা জয়ের জন্যে খেলি না। 

মোদ্দাকথা, সাকিবের মত করেই বলতে হয়, টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য বাংলাদেশের বাকি ডিপার্টমেন্টগুলোর মতই পেসারদের মানসিক দৃঢ়তা নেই। কিন্তু ওদের আছে। তাই তো ওরা আমাদের বিপক্ষে নিয়মিতভাবেই সফল। আর আমরা বিফল, দিনশেষে ঘরে ফিরি শূন্য হাতে।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি