রেড’দের ‘প্রতিশোধ’, নাকি রিয়ালের ‘ট্রেবল’!
প্রকাশিত : ১৭:৫২, ২৮ মে ২০২২
২০১৮ সালের ফাইনালে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাজয়ের বেদনা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। শনিবার রাতে ফের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি দল দুটি।
ইতোমধ্যে ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। লিগ ও কোপা দেল রে জয়ের পর এবার থাকছে ‘ট্রেবল’ জয়ের হাতছানি। তবে ফিরতি মোকাবেলায় এবার লিভারপুলের লক্ষ্য আগের হারের প্রতিশোধ নেয়া। একইভাবে ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ থাকছে সালাহদের সামনেও।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বিগত ৫ মৌসুমে এটি হচ্ছে লিভারপুলের তৃতীয় ফাইনাল। ২০১৮-তে কিয়েভে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হারের এক বছর পর নিজ দেশের প্রিমিয়ার লীগ প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয় লিভারপুল।
স্তাদে ডি ফ্রান্সে এবারের ফাইনালেও কিছুটা ফেভারিট অল-রেড’রা। এটি তাদের জন্য সপ্তম বারের মতো ইউরোপীয় সেরা হবার সুযোগ।
অধিকবার শিরোপা জয় করা রিয়ালকে এই রাতে পরাজিত করতে পারলে শিরোপা জয়ের দিক থেকে এসি মিলানের সহাবস্থানে পৌঁছে যাবে ইংলিশ ক্লাবটি। শুধু তাই নয়, এ্যানফিল্ডে ট্রেবল নিয়ে যাবারও সুযোগ পাবে ক্লাবটি। কারণ ইতোমধ্যে ইংলিশ লিগ কাপ ও এফ এ কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে তারা।
লিভারপুলের লেফট ব্যাক এন্ডি রবার্টসন বলেছেন, ‘শিরোপা জয়ের চেয়ে ভালো অনুভুতি আর কিছুই হতে পারে না।’
দীর্ঘ সময় কোয়াড্রোপল জয় অধরাই রয়ে গেছে। যার খুব কাছে এসেও শেষ মুহুর্তে বিরল সেই গৌরব থেকে বঞ্চিত হতে হয় লিভারপুলকে। কারণ শেষ দিন পর্যন্ত শিরোপা উত্তেজনা টিকিয়ে রাখা ক্লাবটি মাত্র এক পয়েন্টের জন্য শিরোপা হাতছাড়া করেছে ম্যান সিটির কাছে।
কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে না পারলেও এটি হবে অসাধারণ একটি মৌসুম। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা যুক্ত হলে তো এটি হবে দুর্দান্ত এক মৌসুম।’
কিয়েভে হারার পর থেকে স্মরণীয় কয়েকটি বছর পার করছে লিভারপুল। ইনজুরির কারণে প্রথমার্ধে মাঠ ছাড়েন ক্লাবটির মিশরিয় সুপারস্টার মোহাম্মদ সালাহ। এরপর তাদের জন্য দু:স্বপ্ন বয়ে আনেন লরিয়াস ক্যাসিয়াস। আর গ্যারেথ বেলের নৈপুণ্যে শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল মাদ্রিদ।
এই মৌসুমে ৩১ গোল করা মোহাম্মদ সালাহ বলেন, ‘আমি মনে করি এটি হবে প্রতিশোধের ম্যাচ। আমারা মুখিয়ে আছি।’
অ্যালিসনকে দলভুক্ত করার পর ২০১৮ সালের তুলনায় অনেকটাই শক্তি সঞ্চার করেছে লিভারপুল। আর মাঝমাঠে আলো ছড়াতে আছেন থিয়াগোা আলচানতারা।
রিয়ালকে শিরোপা জয়ের আশা ছাড়তে হবে- এমন জল্পনা কল্পনা আক্ষরিক অর্থে এর আগে বহুবারই ঘটেছে। নকআউট পর্বে লিভারপুল যখন একের পর এক হারিয়ে দিচ্ছিল ইন্টার মিলান, বেনফিকা ও ভিয়ারিয়ালকে, তখনই গ্রুপ পর্বে শেরিফ তিরাসপোলোর কাছে হেরে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।
তবে এরপর থেকে অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্প্যানিশ জায়ান্টদের। শেষ ষোলোর ম্যাচে ১৭ মিনিটের ব্যবধানে করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে ভর করে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও প্যারিস সেন্ট জার্মেইকে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট পায় রিয়াল মাদ্রিদ।
অন্যদিকে, কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মুহুর্তে গোল পরিশোধ করে চেলসিকে অতিরিক্ত সময়ে খেলতে বাধ্য করে লিভারপুল। তবে যথারিতি সেই বেনেজেমার কল্যাণেই ইংলিশ ক্লাবকে পরাজিত করে স্প্যানিশরা।
৩৪ বছর বয়সী বেনজেমা এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত আদায় করেছেন ৪৪টি গোল। তন্মধ্যে ইউরোপীয় আসরে ১৪টি এবং বাকী ২৭ গোল করেছেন স্প্যানিশ শিরোপাা জয়ের লড়াইয়ে। যার সুবাদে ব্যালন ডি’অর জয়ের তালিকায় যে বেনজেমার নামটি এবার গুরুত্ব পাবে, সেতা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর একটি মাত্র ম্যাচে যদি জয়লাভ করতে পারে স্প্যানিশ জায়ান্টরা, তাহলে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে না পাওয়ার জ্বালাটাও ভুলে যাবে রিয়াল সমর্থকরা।
গত ৯ মৌসুমে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা লড়াইয়ে নামছে রিয়াল। ২০১৪ সালে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে এই দৌড় শুরু করে তারা। ওই সময়ও দলে ছিলেন বেনজেমা। কোচ হিসেবে আনচেলোত্তির প্রথম স্পেলে তার সঙ্গে ছিলেন লুকা মদ্রিচও।
প্রথম কোনো কোচ হিসেবে চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন এই ইতালি ম্যান। এর আগে এসি মিলানকে তিনি শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ২০০৩ ও ২০০৭ সালে।
এনএস//