প্রথম দিনেই হতাশায় পুড়ল বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ১৮:৪১, ২৫ জুন ২০২২
ব্যাটারদের ব্যর্থতা যেন শেষ হচ্ছে না কিছুতেই। অ্যান্টিগা টেস্টের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের প্রথম দিনেও বিপর্যয়ে পড়ে দল। যাতে ২৩৪ রানেই অলআউট হয়েছে সফরকারীরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন লিটন দাস।
জবাবে ১৬ ওভার ব্যাট করে বিনা উইকেটে ৬৭ রান তুলে দিন শেষ করেছে উইন্ডিজ। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ১৬৭ রানে পিছিয়ে ক্যারিবীয়রা। তবে স্বভাবতই হতাশাময় আরেকটি দিন কাটল বাংলাদেশের।
শুক্রবার ড্যারেন স্যামি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। দু’টি পরির্তন নিয়ে একাদশ সাজায় টাইগাররা। সাবেক অধিনায়ক মোমিনুল হক ও মুস্তাফিজুর রহমানের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ হয় ব্যাটার এনামুল হক বিজয় ও পেসার শরিফুল ইসলামের। তবে ৭ বছর ৯ মাস পর টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বিজয়।
যদিও একাদশে জায়গা পেয়েই রেকর্ড গড়েছেন বিজয়। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়েন তিনি। সর্বশেষ খেলা ম্যাচের ৭ বছর ৯ মাস ১১ দিন পর টেস্ট খেলতে নামেন তিনি।
এর আগে ২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর অভিষেক হওয়ার ৭ বছর পর নিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন পেসার নাজমুল হোসাইন।
যাইহোক, তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল। প্রথম ৬ ওভারে নান্দনিক ৩টি চার মারেন তামিম। এই ৬টি ওভার নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার কেমার রোচের করা সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোর হন জয়। আম্পায়ার আউট দিলেও, রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ডানহাতি এই ব্যাটার। পরের ডেলিভারিতে আবারও জয়কে লেগ বিফোর আউট দেন আম্পায়ার। এবারও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান জয়। দু’বারই বল লেগ-স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
এই প্রান্তে জয়কে কিছুটা নার্ভাস মনে হলেও অন্যপ্রান্তে কভার ড্রাইভ, বোলারস ব্যাক ড্রাইভ, আপার কাট শটে কিছু বাউন্ডারি আদায় করে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তামিম। ১০ ওভারের মধ্যে তামিম যেখানে ৬টি চার মারেন, সেখানে ১১তম ওভারে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান জয়।
পরের ওভারে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ক্যারিবীয় পেসার এন্ডারসন ফিলিপের সোজা বলে বোল্ড হন জয়। ব্যাট-প্যাডের মাঝ দিয়ে উইকেটে আঘাত হানে বলটি। ৩১ বলে ১০ রান করে জয় আউট হলে দলীয় ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসাইন শান্তকে নিয়ে ভালোই এগোচ্ছিলেন তামিম। হাফ-সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ২৩তম ওভারে আলজারি জোসেফের অফ-স্টাম্পে থাকা বলটি ঠিকঠাক খেলতে না পারায় পয়েন্টে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের হাতে চলে যায় সহজ ক্যাচ। ৯টি চারে ৬৭ বলে ৪৬ রানেই থামে তামিমের ইনিংস।
তামিমের বিদায়ে উইকেটে আসেন এনামুল হক বিজয়। মিড-অন দিয়ে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলেন এই ডানহাতি। সেইসঙ্গে শান্তকে নিয়ে দিনের প্রথম সেশনটাও শেষ করেন বিজয়। এসময় ২৬ ওভারে ২ উইকেটে ৭৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ।
বিরতি থেকে ফিরেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলছিলেন বিজয় ও শান্ত। দারুণ সব শটে বাউন্ডারিও আদায় করে নিচ্ছিলেন দুজনে। ৩৩তম ওভারে কাইল মায়ার্সের বলে দু’টি চারও মারেন বিজয়। তবে পরের ওভারেই অভিষিক্ত সেই ফিলিপের নীচু হয়ে আসা বলে লেগ বিফোর আউট হলে ৫টি চারে ৩৩ বলে ২৩ রানেই থামে বিজয়ের প্রত্যাবর্তনের ইনিংসটি।
রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে না পারা এনামুল হক তৃতীয় উইকেটে ৩৭ রান যোগ করেন শান্তর সঙ্গে। এই জুটিতেই দলীয় রান ১শ স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
সতীর্থ বিজয়ের বিদায়ের পরের ওভারেই বিদায় ঘটে শান্তর। দুর্ভাগ্যের শিকার হন তিনিও। কাইল মায়ার্সের ছোড়া বলটি উইকেট থেকে কিছুটা উপরেই ছিল। কিন্তু আম্পায়ারস কলে লেগ বিফোর হন শান্ত। ৪টি চারে ৭৩ বলে ২৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
ফলে ১০৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর চাপে পড়ে বাংলাদেশ। আর তখনই উইকেটে যান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। প্রথম টেস্টের মত এবারও অধিনায়কের কাছ থেকে ভালো একটি ইনিংসের প্রত্যাশায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার আর পারেননি সাকিব। জাইডেন সিলসের অফ-স্টাম্পে থাকা বলটি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন অধিনায়ক। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফ-সেঞ্চুরি করা সাকিব এবার ফেরেন মাত্র ৮ রান করেই।
সাকিবের আউটের পর বাংলাদেশকে চেপে ধরে ক্যারিবীয় বোলাররা। আলজারি জোসেফের বাউন্সার সামলাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৭ রান করা নুরুল হাসান সোহান।
দল যখন বিপর্যয়ে, তখন দারুণ সব শটে বাউন্ডারি আদায় করেন লিটন দাস। জোসেফ-মায়ার্সকে ড্রাইভ-পুল-কাটের বাহারি শট মারেন লিটন। লিটনকে নিয়ে যখন চিন্তায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখন উইকেট বিলিয়ে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মায়ার্সের অফ-স্টাম্পের বল কাট করে নিজের বিপদ ডেকে আনেন এই অলরাউন্ডার। পয়েন্ট থেকে বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন অতিরিক্ত ফিল্ডার ডেভন থমাস। ৯ রানে শেষ হয় মিরাজের ইনিংস।
মিরাজের বিদায়ের পর মিড উইকেট দিয়ে ফ্লিকে বাউন্ডারি মেরে ৬৫ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামতে হয় তাকে।
৫৮তম ওভারে জোসেফের এক ডেলিভারিতে পুল শট খেলতে গিয়ে ব্যালেন্স রাখতে পারেননি লিটন। মিড উইকেটে দাঁড়ানো উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের হাতে জমা পড়লে শেষ হয়ে যায় ৮টি দুর্দান্ত চারে সাজানো লিটনের ৭০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটি।
দলীয় ১৯১ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে লিটন আউট হলে দুইশর নীচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
তবে ৫৯তম ওভারে রোচের ওভারে তিনটি চার মারেন শরিফুল। এতে ২শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ক্যারিয়ারে আগের ১৬ টেস্টে মাত্র ১২ রান করা এবাদত হোসাইন।
নবম উইকেটে ৩০ বলে মারমুখী ৩৬ রান তোলেন এই দুজন। ৬৪তম ওভারে এই জুটি ভাঙ্গেন সিলস। ১৭ বলে ৫টি চারে ক্যারিয়ার সেরা ২৬ রান করে আউট হন শরিফুল। আগের ৪ ম্যাচে ১২ রান করা শরিফুলের এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
এরপর শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদকে ১ রানে আউট করে বাংলাদেশকে ৬৪ দশমিক ২ ওভারে গুটিয়ে দেন সিলস। অন্যপ্রান্তে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন এবাদত। ৩৫ বল খেলে ৩টি চার মারেন তিনি।
স্বাগতিকদের পক্ষে জাইডেন সিলস ও আলজারি জোসেফ ৩টি করে এবং ফিলিপ ও মায়ার্স ২টি করে উইকেট নেন। উইকেট শূন্য থাকেন কিমার রোচ।
জবাবে খেলতে নেমে সফরকারী বোলারদের ওপর চড়াও হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। দু’জনে গুনে গুনে ৯টি বাউন্ডারি মারেন। এর মধ্যে ব্র্যাথওয়েট ৪টি চারে ৫৫ বলে ৩০ রানে এবং ৫টি চারে ৪১ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন ক্যাম্পবেল।
নিজেসহ পাঁচজন বোলার ব্যবহার করেও দিনের শেষভাগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এনএস//