ব্যর্থতার ‘৩২ কলা’, ওপেনিংয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর কত?
প্রকাশিত : ১৬:৩৭, ১০ জুলাই ২০২২
অভিমান হোক কিংবা স্ট্রাইক রেটের সমালোচনার চাপে হোক, দুই বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলছেন না তামিম ইকবাল। নিজেকে কার্যত এই ফরম্যাট থেকে নির্বাসনে রেখেছেন তিনি।
ফলে দেশ সেরা ওপেনারের অনুপস্থিতি রীতিমতো পাগলপ্রায় করে তুলেছে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলকে। ওপেনিংয়ে তার অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে টাইগাররা। টপ অর্ডারে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে দল।
তামিম সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০২০ সালের ৯ মার্চ। তারপর এই ফরম্যাটে ৩২টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। যার মধ্যে ১০টি ওপেনিং জুটিকে ব্যবহার করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সমাধান মিলছে না কোনো কিছুতেই।
দুই প্রান্তে বাঁহাতি, ডানহাতি-বাঁহাতি, দুজন ডানহাতি- কত কত কম্বিনেশন করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু কোনটাই কাজে আসেনি। পারফরমেন্স প্রত্যাশিত মানে পৌঁছাচ্ছে না কোনোভাবেই।
ঘুরিয়ে বললে ওপেনাররা কাজের কাজটি মোটেও করতে পারছেন না। পাওয়ার প্লে-তে হাত খুলে খেলে রানের চাকা সচল করার পাশাপাশি ঝড়ের গতিতে একটা লম্বা চওড়া জুটি গড়ে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেয়ার কাজটি হচ্ছে না অনেকদিন ধরেই।
অন্য দলগুলো যেখানে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে আট থেকে নয় কিংবা ১০ রান করে তুলে স্কোর বোর্ডকে পঞ্চাশের উপরে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের রান থাকছে গড়পড়তা ত্রিশের ঘরেই। সেইসঙ্গে অবধারিতভাবে পতন ঘটছে দুই থেকে তিনটি উইকেটের।
মোটকথা শুভ বা স্বস্তিকর সূচনা হচ্ছে না কিছুতেই। ওপেনারদের ব্যর্থতায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ম্যাচে শুরু থেকেই রীতিমত ধুঁকছে বাংলাদেশ। ওপেনাররা কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারায় ওপেনিং জুটি নিয়ে চলছে নানারকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা। আসছে ঘন ঘন পরিবর্তন।
গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাঙ্খিত পারফরমেন্স হয়নি। তারপরও ওপেনিং জুটি নিয়েও পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালানো হয়েছে তখন। পুরো আসরে তিন-তিনটি ওপেনিং জুটির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে নাঈম শেখ আর লিটন দাসকে খেলানো হয়েছে সর্বাধিক ৬ ম্যাচে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নাঈম শেখের সঙ্গে সৌম্য সরকার আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নাঈমের সঙ্গে লিটনের বদলে সাকিব ছিলেন ওপেনারের ভূমিকায়। বাকি ম্যাচগুলোতে লিটন-নাঈমই ওপেন করেছেন ব্যাট হাতে।
আর বিশ্বকাপের পরেই ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তনের হারটা বেড়ে গেছে অনেক। অফ ফর্মের কারণে লিটন দাসকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে নাঈমের সঙ্গে তিন ম্যাচের প্রথম দুটিতে খেলানো হলো সাইফ হাসানকে। সাইফ ব্যর্থ হওয়ার পর শেষ ম্যাচে নাঈমের সঙ্গী করা হলো নাজমুল হোসাইন শান্তকে।
তাতেও কাজ হলো না। নাঈম স্লো ব্যাটিং করে কিছু রান পেলেও বাকিরা ছিলেন চরম ব্যর্থ। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবারও ওপেনিং জুটিতে রদবদল। এবার নাঈম শেখের সঙ্গী করা হলো বিপিএলে ভালো খেলা মুনিম শাহরিয়ারকে।
দুই ম্যাচ পর এ জুটিতেও এলো পরিবর্তন। কারণ ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলে তো জায়গাই হয়নি নাঈমের। মুনিম শাহরিয়ারের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ইনিংসের সূচনা করলেন ৮ বছর পর দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়।
বলা হলো- আক্রমণাত্মক মুনিম শাহরিয়ারের সঙ্গে ফ্রি স্ট্রোক মেকার এনামুল হক বিজয়কে বেছে নেয়া হয়েছে এবং তাদের মানসিক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে বলা হয়েছে। যাতে করে পাওয়ার প্লে-তে তারা স্বভাবসূলভ হাত খুলে খেলতে পারেন।
কিন্তু প্রথম ম্যাচে রান না পাওয়া মুনিম শাহরিয়ারকে দ্বিতীয় ম্যাচেই বসিয়ে দেয়া হলো। ৩ জুলাই ডমিনিকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ম্যাচেই আবার ওপেনিংয়ে ফিরিয়ে আনা হলো লিটন দাসকে। কিন্তু হায়! লিটন আর বিজয়ের এই জুটি ভাঙল মাত্র ৮ রানেই।
বিজয় ৩ আর লিটন ৫ রানে আউট! শেষ ৭ ম্যাচে পাঁচ-পাঁচটি ওপেনিং জুটি বাংলাদেশের। ভাবা যায়! ভারতের অধিনায়ক বদলের মত হয়ে গেলো পুরো ব্যাপারটা!
প্রশ্ন উঠেছে, ৭ জুলাইের শেষ ম্যাচ নিয়েও। কিন্তু এভাবে আর কত চলবে ওপেনিং জুটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা?
গত ৩১ ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে নাঈম শেখ-লিটন দাস ১৪ ইনিংস, নাঈম শেখ-সৌম্য সরকার ৮ ইনিংস, নাঈম শেখ-মুনিম শাহরিয়ার ২ ইনিংস, নাঈম শেখ-সাইফ হাসান ২ ইনিংস, লিটন দাস-সৌম্য সরকার ১ ইনিংস, নাঈম শেখ-শেখ মাহেদী ১ ইনিংস, নাঈম শেখ-নাজমুল হোসাইন ১ ইনিংস, নাঈম শেখ-সাকিব ১ ইনিংসে ওপেনিং করেছেন।
এর মধ্যে কেবল একবারই সর্বোচ্চ ১০২ রানের জুটি গড়তে পেরেছিলেন নাঈম শেখ-সৌম্য সরকার। প্রতিপক্ষ ছিল দুর্বল জিম্বাবুয়ে। এছাড়া অন্য দলগুলোর বিপক্ষে রীতিমত ব্যর্থ দলের ওপেনিং বিভাগ।
তাইতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচক, ম্যানেজমেন্ট যে এই ওপেনিং নিয়ে বড়সড় বিপদেই আছেন! সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অবশ্য তার আগেই আছে জিম্বাবুয়ে সিরিজ ও এশিয়া কাপ। তাই এই সময়ের মধ্যে ওপেনিং সমস্যার সমাধান হবে, ওপেনাররা থিতু হবেন- এমন আশা করাও কঠিন। বিসিবি হয়তো তামিমের মান ভাঙাতে পারলে নাজুক ওপেনিংয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে। এমনটাই প্রত্যাশা ১৮ কোটি ক্রিকেট ভক্তের।
এনএস/ এসএ/