উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কিছু নেই: তামিম
প্রকাশিত : ১৬:৩৯, ১৯ জুলাই ২০২২
নাসুম আহমেদকে ঘিরে তামিমের উদযাপন
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে হারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়টা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছুই বলতে হবে। তবে সতীর্থদের উদ্দেশ্য করে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, খুব বেশি রোমাঞ্চিত হওয়ার কিছুই নেই। কেননা, এই সিরিজে স্পিনাররা প্রচুর সাহায্য পেয়েছে।
তামিম বলেন, ‘সিরিজ জয়টা সবসময়ই বিশেষ কিছু। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের জয়টা ছিল অনেক বড় ব্যাপার। আমি আমার সতীর্থদের বলেছি, যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা অসাধারণ কিছু করে দেখিয়েছি। তবে আমাদের এই সিরিজ জয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।’
ক্রিকইনফোকে টাইগার ওয়ানডে দলনেতা বলেন, ‘এটা এমন একটা কন্ডিশনে খেলা হয়েছে, যেখানে স্পিনাররা প্রচুর সহায়তা পেয়েছে। আমরা যখন বিদেশ ভ্রমণে যাই, অথবা কখনো ঘরের মাঠে খেলি, সবসময় এমনটি হবে না। আমাদের সামনে আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।’
এবারের উইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজটা সত্যিকার অর্থেই ভালো কিছু ছিল। কেননা সফরের শুরুতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাজেভাবে হেরে যায় সফরকারীরা।
অন্যদিকে, এ নিয়ে তামিমের অধীনে বাংলাদেশ টানা ৫টি ওয়ানডে সিরিজ জিতল। বিশ্বকাপ সুপার লিগে ছয়টি। এই জয়গুলোর মধ্যে উইন্ডিজের আগে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কঠিন কন্ডিশনে।
যা উপমহাদেশের মাঝারি মানের একটি দলের জন্য বড় কৃতিত্ব। প্রকৃতপক্ষে, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ তাদের সমস্ত বিদেশী ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়াতে।
সিরিজে ১১৭ রান করে প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ হওয়া তামিম বলেন, জয়গুলো আনন্দদায়ক। তবে চাইছিলেন তার মূল পরিকল্পনাটি কাজ না করুক এবং প্ল্যান বি বের করে তা কার্যকর করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, "আমি সবসময় বলেছি যে, এটি আমার জন্য একটি শেখার প্রক্রিয়া। আমি যখন আয়ারল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়েতে যাই, সেখানে আমাকে ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে, তাই না? আমি যেভাবে পরিকল্পনা করি তা যদি কাজ না করে, তাহলে আমি কীভাবে প্ল্যান বি এক্সিকিউট করব। যা আমাকে একজন অধিনায়ক হিসেবে বেড়ে উঠছি কিনা তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
তামিম বলেন, "টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে পরাজয়ের পর ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু আমাকে পরিবর্তন নিয়ে বেশি কাজ করতে হয়নি। সবাই জিততে চেয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে আমরা আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব, যদিও ফলাফল আমাদের পক্ষে আসেনি। সবাই ওই দুই ফরম্যাটে অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা হয়নি। তাই সবার মধ্যে এটা কাজ করেছিল যে, আমাদের অন্তত ওয়ানডে সিরিজে জিততে হবে। যারা খেলেছে বা খেলেনি- সবার মধ্যেই জয়ের ক্ষুধা ছিল।"
সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম (দুজনেই ব্যক্তিগত কারণে ছুটি), পাশাপাশি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন এবং ইয়াসির আলী [ইনজুরি] অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে- এটা একটি ইতিবাচক লক্ষণ। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিনাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। ১৫.২৬ গড়ে ১৯টি উইকেট তুলে নিয়েছে- যা কোনো দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিদেশীয় ওডিআই সিরিজে তাদের সেরা গড়।
এদিকে, মিডল অর্ডারে নুরুল হাসানের ব্যাটিং তামিমের দৃষ্টিতেও আলাদা। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল অপরাজিত ২০ এবং অপরাজিত ৩২ রান করে দুটি ম্যাচেই সফল ফিনিশিং করেন।
এ প্রসঙ্গে তামিম ইকবাল বলেন, "এই দুইজন [সাকিব ও মুশফিক] যেকোনো ফরম্যাটেই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তাদের ছাড়া খেলে জয়ে পাওয়ায় দল কিছুটা আত্মবিশ্বাস পাবে। যারা তাদের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়েছিল, যেমন- সোহান, সে দুই হাতেই সুযোগটা লুফে নিয়েছে। সে অবিশ্বাস্যভাবে ভালো খেলেছে।"
তামিমের ভাষায়, "বোলার ছাড়াও, আমাকে বলতে হবে সোহান অন্যতম প্রধান পারফরমার ছিলেন। সে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বেশ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে।"
তামিম নিজেও ভালো শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেগুলোকে বড় স্কোরে রূপান্তর করতে পারেননি। যদিও এটা একটা কঠিন ব্যাটিং কন্ডিশন ছিল, যেখানে শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের সেরা স্কোর ছিল ১৭৮ রান এবং এটা টপকাতে বাংলাদেশের লেগে যায় ৪৮.৩ ওভার। আর এই সিরিজে তামিমের স্কোর ছিল ৩৩, অপরাজিত ৫০ ও ৩৪।
নিজের ব্যাটিং নিয়ে তামিমের ব্যাখ্যা ছিল, "এটি এমন একটা উইকেট ছিল যেখানে আপনাকে অধিক পরিমাণে শট খেলতে নিজেকে সামলে রাখতে হয়েছিল এবং শুধুমাত্র একটি বা দুটি শটে ফোকাস করতে হয়েছিল।"
তামিম বলেন, "আপনি এখানে বলের মেরিট অনুযায়ী শট খেলতে পারবেন না। এখানে বল অনেক ঘুরছিল। নিচু হয়ে আসছিল। তবে আপনি শুধু এটা আশা করতে পারেন যে, বলটি আপনার কাছে আসছে রান করার একটা উপায় নিয়ে। ভাগ্যক্রমে আমাদের বড় স্কোর তাড়া করতে হয়নি।"
এনএস//