‘সবারই চার-ছক্কা মারার সামর্থ্য আছে, তবে...!’
প্রকাশিত : ১৮:১৭, ২৭ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১৮:২৩, ২৭ আগস্ট ২০২২
সাকিবের সঙ্গে প্র্যাকটিসকালে বিজয়
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পাওয়ার হিটিং নিয়ে। তবে ওপেনার এনামুল হক বিজয় মনে করেন, দলের সব ক্রিকেটারেরই চার-ছক্কা মারার সামর্থ্য আছে। তবে, টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটিংয়ের পরিকল্পনাটা বেশি প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে দুবাইয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ দল। এরই এক ফাঁকে দলের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন বিজয়। তার মতে, এশিয়া কাপের জন্য দলের প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। টুর্নামেন্টে জন্য নিজেদের ভালোভাবে তৈরি করতে অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম করছে সবাই।
টি-টোয়েন্টিতে অন্যান্য দেশের ক্রিকেটারদের মত চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটাতে পারে না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তাই এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে দলের সবারই চার-ছক্কা মারার সামর্থ্য আছে বলে মনে করেন বিজয়।
দুবাই থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বিজয় বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ বছর যাবত বিপিএল খেলছি। এছাড়াও বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছি। আমাদের প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে, সবাই অনেক পরিশ্রমী। আমার কাছে মনে হয়, পাওয়ার হিটিংয়ের চেয়ে বেশি জরুরি পরিকল্পনা। কেউই বলতে পারবে না যে, সে চার বা ছক্কা মারতে পারে না বা কোয়ালিটি নেই। যারা জাতীয় দলে আসে, অবশ্যই শতভাগ কোয়ালিটি নিয়েই বাংলাদেশ দলে আসে।’
টাইগার এই ওপেনার আরও বলেন, ‘সবারই কোয়ালিটি আছে চার-ছক্কা মারার। মূল ব্যাপারটা পরিকল্পনার। কোন বোলারকে আমরা পিক করবো, কোন বোলারকে সিঙ্গেল রোটেড করবো, কোন সময় মারা উচিত, কোন সময় উচিত নয়। সেটা নিয়ে কাজ করা দরকার।’
বিজয় আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবারই কোয়ালিটি আছে। উপর থেকে যদি ধরেন, দলে ৮-১০ জন ব্যাটার আছেন, সবাই কম-বেশি ভালো মারতে পারেন। তাদের সবাইকে সময় দেয়া উচিত। দশ বল, পাঁচ বল, চার বল- তারপর প্রয়োগে যাওয়া উচিত। অবশ্যই প্রতিটি ক্রিকেটারের সামর্থ্য আছে ছয়-চার মারার।’
দলের ব্যাটারদের চার-ছক্কা মারার সামর্থ্য থাকলেও, তা বাস্তবায়ন হতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন বিজয়। বর্তমান কোচিং প্যানেল ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অধীনেই পাওয়ার হিটিংয়ে উন্নতি হবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস দলের সবার।
তিনি বলেন, ‘আমিও চেষ্টা করি। অবশ্যই আমার ছয় মারতে খুবই ভালো লাগে। তবে তা বাস্তবায়ন কোন সময়ে করবো, দলের জন্য তা কতটা উপকার হবে- এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ক্রিকেটারদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অবশ্যই উন্নতি সম্ভব। আমার মনে হয়, এই কোচের কোচিংয়ে, সাকিব ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা পাওয়ার হিটিংয়ে যথেষ্ট উন্নতি করবো।’
দীর্ঘ দিন পর জাতীয় দলে ফেরা এ ওপেনার আরও বলেন, ‘আসলে এটা একদিনে হবে না। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ব্যাপার। অবশ্যই ৩ থেকে ৬ মাসে লাগতে পারে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিটি ক্রিকেটার শতভাগ চেষ্টা করবে এতে উন্নতি করতে।’
ঘরোয়া ক্রিকেট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) দুর্দান্ত পারফরমেন্সের সুবাদে দীর্ঘ বিরতির পর এ বছরই জাতীয় দলে ফেরেন বিজয়। দলে ফেরার পর একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও ছয়টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। টেস্টে ২৭, টি-টোয়েন্টিতে ৮৫ রান করলেও ওয়ানডেতে দুই ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান এই ডানহাতি ব্যাটার। তিন ইনিংসে করেন ১৬৯ রান।
এশিয়া কাপের মত বড় আসরে ভালো করতে ও বড় ইনিংস খেলতে চাওয়া বিজয় বলেন, ‘এশিয়া কাপ একটা বড় মঞ্চ। এখানে সুযোগ এসেছে ভালো খেলার। আমি চেষ্টা করবো প্রভাব বিস্তার করার মত ইনিংস উপহার দেয়ার, যেন দলকে ভালো একটা সূচনা এনে দিতে পারি।’
ক্যারিয়ারে প্রথমবার এশিয়া কাপে খেলতে যাওয়া এই টাইগার আরও বলেন, ‘এটা আমার প্রথম টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। মিরাজ, তাসকিন, সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, আফিফ- সবাই অনেক সাহায্য করছে। টপ অর্ডারে ভালো স্কোর দাঁড় করাতে পারলে, পরবর্তীতে তাদের জন্যও সুবিধা হবে। আবার মিডল অর্ডার ভালো করলে, লোয়ার মিডল অর্ডারের জন্য ভালো হবে। দলীয় স্কোর বড় করলে বোলারদের জন্য ভালো হবে। আশা করছি, দারুণ সূচনা এনে দিতে পারব, সেভাবেই অনুশীলন করছি।’
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ পারফরমেন্স প্রশ্নবিদ্ধ। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে, সদ্যই টেকনিক্যাল পরামর্শক হিসেবে ভারতের শ্রীধরন শ্রীরামকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি।
দুবাইয়ে শ্রীরামের সঙ্গে অনুশীলন পর্বটা ভালোই কাটছে বলে জানান বিজয়। এছাড়াও এশিয়া কাপের প্রস্তুতিটা সবাই ভালোভাবেই নিচ্ছে জানিয়ে বিজয় বলেন, ‘আসলে শ্রীরাম আসার পর আমাদের দারুণ একটা মিটিং হয়েছে। বোলিং-ব্যাটিং এবং স্পিন বিভাগ, ফিল্ডিং বিভাগ মিলে আমরা কিভাবে কি করবো, সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি। প্রতিটা ক্রিকেটার জানে, তাদের কাজটা কি। আমরা সবাই মনে করি, ম্যাচে ডোমিনেট করতে পারবো। দলকে যতটুকু দেয়ার সামর্থ্য আছে, তার পুরোটাই দেয়ার চেষ্টা করবে সবাই। সবাই এই কমিটমেন্ট করেছে এবং আমরা বিশ্বাস করি, আমরা পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুবাইয়ে দুই দিন অনুশীলন করে মনে হচ্ছে, আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এখানে রাত ৮টা থেকে অনুশীলন করছি, যা বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা, যা আগে কখনও করিনি। এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা। দুইটা দিন দারুণ সময় গেছে আমাদের। কালকের (শনিবার) বিরতির পর আরও দুইদিন সময় পাবো আমরা। আশা করছি, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবো।’
প্রসঙ্গত, আগামী মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করবে বাংলাদেশ। এরপর ১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে টাইগাররা।
এদিকে, আজই উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দল দুটি। সবগুলো ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা থেকে।
এনএস//