সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ
শক্তিশালী ভারতকে হারিয়েও সতর্ক বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ১৯:৩০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন বাংলাদেশ নারী দলের সদস্যরা
সাফ ওমেন চ্যাম্পিয়নশীপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়েও বেশ সতর্ক বাংলাদেশ। আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিতে চান না টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে দলের খেলোয়াড়রা। যে কারণে ভারতের বিপক্ষে বড় জয় পাবার পরও বিশ্রামে না গিয়ে যথারিতি অনুশীলন সেরেছেন কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনের শিষ্যরা।
প্রতিদিনের ন্যায় বুধবারও কাঠমান্ডু আর্মি হেডকোয়ার্টার্স মাঠে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। তবে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অনুশীলণ করতে দেখা গেছে দলের সবাইকে।
এর কারণও আছে। যেহেতু এবারের দলটির মূল লক্ষ্য শিরোপা জয় করা। তাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই তৃপ্ত নয় দলটি। যদিও টুর্নামেন্টের সেরা দল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে সাবিনা খাতুনরা।
তারপরও ফাইনালে আরো শক্তি নিয়েই বাংলাদেশের পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারে উপমহাদেশের শক্তিশালী দলটি। এছাড়া বি গ্রুপ থেকে শেষ চার নিশ্চিত করা ভুটানকেও বেশ দক্ষ প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। যে কারণেই সবার এমন সতর্কতা।
অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না বলেন, ‘ভারতকে হারানোর পর উল্লাস যা করার এখানেই করেছি। হোটেলে যাবার পর ডিনার করেছি এবং অনেকের পায়ে ব্যথা ছিল, তারা আইস বাথ করেছে আর চিকিৎসা নিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আমাদের লক্ষ্য সেমি-ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হওয়া।
তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য ফাইনাল। যেহেতু আমাদের লক্ষ্য ফাইনালে খেলা, তাই সেটি পূরণ করতে হলে অবশ্যই সেমি-ফাইনালের বাঁধা টপকে যেতে হবে। ভুটানও অনেক ভালো দল। প্রতিপক্ষ কোনও দলকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আগের ম্যাচের মতো ধারাবাহিকতা রেখে সেমি-ফাইনালেও খেলতে চাই। আশা করি ভালো একটি খেলা উপহার দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারব।’
ভারতকে হারানোর পরের দিনটি কিছুটা আলাদা উল্লেখ করে স্বপ্না বলেন, ভারত অবশ্যই আমাদের চেয়ে ভালো দল। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। তাদের বিপক্ষে জয়ের অনুভূতি কেমন হবে, তা অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না।’
ডিফেন্ডার শিউলি আজিম বলেন, ‘ম্যাচ জয়ের পর ভিন্নভাবে উদযাপনের কারণ হচ্ছে- গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আমাদের মধ্যে যে ডিটারমিনেশন ছিল, আমরা তা করতে পেরেছি। তবে এর আনন্দ যা করার মাঠেই করেছি। আজ (বুধবার) সকাল থেকে আমাদের মধ্যে সেটি আর নেই। এখন থেকে আমাদের পূর্ণ মনোযোগ সেমি-ফাইনালে। ফাইনালে যাবার পথে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সেমি-ফাইনালের প্রতিপক্ষ ভুটানও বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ। যোগ্যতা দিয়েই তারা শেষ চারে উঠেছে। সুতরাং তাদেরকে খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ নেই। অবশ্য আমরা জয়ের জন্যই সেমি-ফাইনালে নামব।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ে মূখ্য ভূমিকা পালনের মাধ্যমে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে জিতেছি। এতে সবাই খুশী। তবে সামনে দু’টি ম্যাচ রয়েছে। সেমি-ফাইনাল এবং ফাইনাল। এই দু’টি ম্যাচ জিতে শিরোপা নিয়েই উল্লাস করতে চাই।’
তবে ওই জয়টিকেও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসলে সিনিয়র পর্যায়ে এটাই আমার সেরা ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে জেতা সবচেয়ে বড় অর্জন। একটা ফাইটিং ম্যাচ ছিল। ওই ম্যাচে আমি গোল করতে পেরেছি। সব মিলিয়ে আমার কাছে এই ম্যাচটি এই মুহুর্তে সেরা।’
কৃষ্ণা রানী আরও বলেন, ‘শুরুতে সিনিয়র বিভাগে আমাদের ৫/৬টি করে গোল হজম করতে হতো। এখন দলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রায় ছয়-সাত বছর হয়ে গেছে একসঙ্গেই আমরা আছি। ২০১৬ সাল থেকে। তাই স্যার (কোচ) যেটা বলেছেন, সেটাই ঠিক। আমাদের মেয়েদের ফুটবলে দিন বদলের পালা শুরু হয়েছে। যার প্রমাণ ভারতের বিপক্ষের ম্যাচটি।’
সেইসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সাফে এই ভারতকে কেউই হারাতে পারেনি। ভুটান, নেপাল কেউই না। আমরা হারিয়েছি। আমরা যে বিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামি এবং যে কঠোর পরিশ্রম করে এসেছি, তার প্রমাণ এটি। এখন যদি সৃষ্টিকর্তা সহায় হন, তাহলে ট্রফি নিয়েই বাংলাদেশে যাব আমরা।
এনএস//