ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দুধ বিক্রি করেই বুটজুতা কিনতে হয় ভালেন্সিয়াকে!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৪, ২১ নভেম্বর ২০২২

এনার ভালেন্সিয়া

এনার ভালেন্সিয়া

উদ্বোধনী ম্যাচে সাধারণত স্বাগতিকরাই জেতে! ২০০৬ সাল থেকেই এমন রীতি চলে আসছিল ফুটবল বিশ্বকাপে। তবে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি কাতার। ১৬ বছরের নিয়ম ভেঙে হার দিয়েই শুরু করল স্বগতিকরা।

কাতার পারেনি এক এনার ভালেন্সিয়ার কারণে। ৩৩ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ডের জোড়া গোলেই জয়ের উল্লাসে মাতে ইকুয়েডর। এনার তো প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিকই করে ফেলেছিলেন! কিন্তু সেটা আর হয়নি।

রোববার রাতে আল বায়িত স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর তিন মিনিটেই গোল পেয়েছিলেন ভালেন্সিয়া। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সেটা। যদিও খুব বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়নি তাকে। ১৬তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইতিহাসের বুকে ঠাঁই করে নেন তিনি। পরে ৩২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এনার।

তবে ল্যাতিন আমেরিকার এই ফরোয়ার্ডকে বেশ কাঠখড় পুড়িয়েই ফুটবলে আসতে হয়। পরিবারে ছিল না আর্থিক স্বচ্ছলতা। তাই এমন একটি পরিবার নিশ্চয়ই চাইবে তার ছেলে পড়ালেখায় ডুবে থাকুক। তবে ভালেন্সিয়ার হৃদয়জুড়ে ছিল কেবলই ফুটবল। যার নেশায় স্কুল ফাঁকি দিতেও দ্বিধাবোধ করতেন না তিনি।  

অভাব-অনটনে অনেকবারই না খেয়ে দিন-রাত কাটিয়েছেন ভালেন্সিয়া। বাবার দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতেন গরুর ফার্মের কাজে। গরুর দুধ বিক্রি করেই খেলার জন্য নিজের প্রথম বুটজুতা কেনেন ইকুয়েডর অধিনায়ক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভালেন্সিয়া বলেন, 'হ্যাঁ এটা সত্যি যে আমি খুবই গরীব পরিবার থেকে এসেছি। বুট পায়ে দৌড়ানোর পরিবর্তে আমাকে বাবার সঙ্গে গরুর ফার্মে কাজ করতে হয়েছে। দুধ বিক্রি করে নিজের প্রথম বুট কিনেছি আমি।'

খেলার প্রতি নিজের ভালোবাসা সম্পর্কে ভালেন্সিয়া বলেন, 'ক্যাপওয়েল স্টেডিয়াম ছাড়া আমাদের ঘুমানোর জায়গা ছিল না। প্রায় সময়ই না খেয়ে দিন কেটেছে, কারণ আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে এতদূর এনেছে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমার খেলার ঘটনা অহরহ। খেলাটির প্রতি আমি সবসময় নিবেদিত ছিলাম। আমার মা ও বাবা সবসময়ই তা বলত। কিন্তু খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা এর চেয়ে শক্তিশালী।'

কাতারে উদ্বোধনী ম্যাচের ইতিহাসে ভালেন্সিয়ার চেয়ে বেশি বয়সে গোল করতে পারেনি আর কোনো ফুটবলারই। ইকুয়েডরের সুপারম্যান খ্যাত এই ফরোয়ার্ডের বর্তমান বয়স ৩৩ বছর ১৬ দিন। 

এর আগের রেকর্ডটি ছিল ইতালির আলেসান্দ্রো আলতোবেল্লির। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে গোলটি করার সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর ১৮৪ দিন।

ভালেন্সিয়া এদিন রেকর্ড গড়েছেন দেশের হয়েও। ইকুয়েডরের প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে পাঁচ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইকুয়েডরের করা তিন গোলের তিনটিই এসেছে ভালেন্সিয়ার পা থেকে।

গত বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও এবার কাতারে ঠিকই জায়গা করে নেয় ইকুয়েডর। সূচি ঘোষণার পরপরই তাই জয়ের স্বপ্নে রাত বিভোর থাকেন ভালেন্সিয়া। জোড়া গোলে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন তুরস্কের ফেনারবাচে ক্লাবের হয়ে খেলা এই ফরোয়ার্ড।

ম্যাচ শেষে এনার বলেন, 'ড্র হওয়ার সময় আমি আমার ক্লাবে ছিলাম এবং দেখলাম যে আমি উদ্বোধনী ম্যাচে খেলতে যাচ্ছি। তখন থেকেই জয়ের স্বপ্নে অনেক রাত কাটিয়েছি। আমি জানতাম, আমাদের সবার স্বপ্নই একইরকম হবে। সৌভাগ্যবশত আমি গোলও করতে পেরেছি।'

যদিও হাঁটুর চোটে কাতারের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট খেলতে পারেননি ভালেন্সিয়া। চোট কতটা গুরুতর সেটা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তবে ২৫ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলার ব্যাপারে আশাবাদী ল্যাতিন এই ফরোয়ার্ড।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি