রেফারি আতঙ্কে আর্জেন্টিনা!
প্রকাশিত : ১৪:৫১, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৪:৫৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২২
পোল্যান্ডের সঙ্গে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মেসি। তবে দুরন্ত খেলেই জিতেছে আর্জেন্টিনা। তার পরেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এক বার্তা! কী সেই বার্তা!
প্রচার করা হয়, ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬-তে মারিয়ো কেম্পেস ও ডিয়েগো ম্যারাডোনা নাকি বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচেই মিস করেছিলেন পেনাল্টি! তারপরও দু’জনের হাতেই উঠেছিল বিশ্বকাপ। সেই ‘সংযোগে’ই কী এবার মেসির পালা?
যদিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা ওই দুটি তথ্য সঠিক নয়। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে কোনো পেনাল্টি পায়নি আর্জেন্টিনা। আর তখন আলবিসেলেস্তেদের হয়ে পেনাল্টি নিতেন দানিয়েল পাসারেলা। সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ইতালি।
আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপেও কোনো পেনাল্টি শট নেননি ম্যারাডোনা। হোর্হে ভালদানো ও হোর্হে বুরুচাগার গোলে বুলগেরিয়াকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
যাই হোক না কেন, শনিবার রাতে নক-আউট পর্বে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে মেসি-ভক্তদের এমন ‘তুকতাকে’ পানি ঢেলে দিতে হাজির আরেকটি তথ্য!
ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন যে প্রধান রেফারি, পোল্যান্ডের সেই শেমন মার্চিনিয়াকই নাকি মেসির জন্য ‘অপয়া’! এর আগে তার পরিচালনায় একাধিক ম্যাচে তিক্ত স্মৃতি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মেসিকে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচে এই মার্চিনিয়াকই ছিলেন মূল রেফারি। দুর্বল প্রতিপক্ষ আইসল্যান্ডের সঙ্গে সেই ম্যাচটি কেবল ড্র করে মাঠ ছাড়াই নয়, সেই ম্যাচেও পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ হারিয়েছিলেন মেসি।
শুধু দেশের হয়েই নয়, ৪১ বছরের মার্চিনিয়াকের পরিচালনায় ক্লাবের ম্যাচেও তিক্ত স্মৃতি রয়েছে মেসির। পাঁচ বছর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে পিএসজির কাছে ৪-০ হারতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে। মেসি তখন বার্সেলোনায়। নিজের বর্তমান ক্লাবের কাছে সেই লজ্জাজনক হারের ম্যাচেও রেফারি ছিলেন মার্চিনিয়াক।
এদিকে, আর্জেন্টিনা দলে আজ মেসির পাশে যিনি খেলবেন, সেই ডি মারিয়াই দুটি গোল করেছিলেন মেসিদের বিপক্ষে। অবশ্য ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে পিএসজিকে ৬-১ হারিয়ে প্রতিশোধ নেন মেসি-নেইমাররা।
তবে এতেই মেসির মার্চিনিয়াক-যোগের ইতি হয়নি। সেই চ্যাম্পিয়নস লিগেই জুভেন্টাসের কাছে ৩-০ ব্যবধানে পরাজয়ের ম্যাচেও এই মার্চিনিয়াকই ছিলেন ম্যাচ রেফারি!
আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অবশ্য এসব ছোটখাটো বিষয়কে ধরার মধ্যেই আনছেন না আর্জেন্টিনা দলের ডিরেক্টর সিজার লুই মেনোত্তি। ৭৮-র বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের কোচ সরলভাবে বলে দিচ্ছেন যে, ফাইনাল খেলা ছাড়া আর কোনো কিছুই যথেষ্ট নয়।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে মেনোত্তি বলেন, ‘আমাদের কাছে ফাইনাল ছাড়া আর কোনো কিছুই যথেষ্ট নয়। আর কী হলো না হলো তাতে কিছু যায় আসে না।’
তবে দলের খেলায় তিনি খুশি বলেই জানিয়েছেন মেনোত্তি। তার কথায়, ‘বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন। তবে পোল্যান্ড ম্যাচের পর দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছে। প্রথম ম্যাচে হারা আর ফাইনালে হারা এক জিনিস নয়। আমরা কর্তৃত্ব নিয়ে খেলছি এবং সবচেয়ে কঠিন লড়াই এবার সামনে। আশাবাদী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
দলের তারকা খেলোয়াড় মেসিকে নিয়েও মুখ খুলেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী। মেনোত্তি বলছেন, ‘মেসি লক্ষ্যে স্থির ও শান্ত। ওর ওপর একটা বোঝা রয়েছে যে, ওকে ৮৬-র ম্যারাডোনা হতে হবে। এটা নিয়ে আসলে খেলা খুব কঠিন। তবে মেসি দাপটের সঙ্গেই তা করে চলেছেন।’
মেসির প্রশংসা ঝরেছে প্রতিপক্ষের মুখেও। অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডার মিলোস ডেজেনেক ম্যাচের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, তিনি মেসির ভক্ত। তবে মেসিও যে মানুষ, তাও সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন ডেজেনেক।
সকারু ডিফেন্ডার বলেন, ‘মেসির বিপক্ষে খেলা সব সময় সম্মানের। আমি মেসিকে এবং মেসির খেলা ভালোবাসি। কিন্তু আমি এটাও জানিয়ে দিতে চাই যে, মেসিও মানুষ।’
অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্স যাতে মেসি ভেদ করতে না পারেন তার প্রস্তুতিও যে তারা নিয়েছেন তাও জানিয়েছেন ডেজেনেক। কীভাবে তারা মেসিকে আটকাতে চান তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘দলগতভাবে খেলেই রুখতে হবে মেসিকে।’
এনএস/এএইচ