তেইশেই মেসি-রোনালদোকে ছাপিয়ে!
প্রকাশিত : ১২:১১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
বয়স মাত্র ২৩। এরই মধ্যে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে। রাশিয়া এবং কাতার বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তার গোল সংখ্যা ৯টি। যার মধ্যে কাতারেই করেছেন পাঁচটি। অনবদ্য পারফরম্যান্সে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন এমবাপ্পে।
ফরাসি তারকা এগিয়ে আছেন গোল্ডেন বুটের দৌড়েও।
বিশ্বকাপে গোল সংখ্যার নিরিখে নিজ দেশের থিয়েরি ওঁরি বা জিনেদিন জিদানকে আগেই ছাপিয়ে গেছেন এমবাপ্পে। বয়স ২৪ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করা পেলের নজির ছুঁয়েছেন তিনি।
সাধারণভাবে বিভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা করা কঠিন। প্রতিপক্ষ, সতীর্থ, খেলার কৌশল, নিয়ম, প্রযুক্তি অনেক কিছুই বদলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই বদলে যায় সেরা বেছে নেওয়ার নিক্তিও। পরিসংখ্যান বিচার্য হলে গত মে মাসেই দুই তারকা মেসি, রোনালদোকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন এমবাপ্পে।
২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর ২৩ বছর পূর্ণ করেন এমবাপ্পে। এই বয়সে গোল করার নিরিখে পর্তুগাল অধিনায়কের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। পেশাদার ফুটবলে রোনালদোর গোল সংখ্যা ছিল ১৩২টি। মেসি অবশ্য এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। পিএসজির দুই সতীর্থের ২৩ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে গোল সংখ্যা ছিল ১৯৭।
আরও একটি পরিসংখ্যানে মেসি, রোনালদো দু’জনকেই পিছনে ফেলে দিয়েছেন এমবাপ্পে। ২৩ বছর বয়সের এই তারকা ১১১ বার সতীর্থদের গোল করতে সাহায্য করেছেন। এই সংখ্যা মেসি এবং রোনালদোর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৮৪ এবং ৬৬।
এমবাপ্পে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে। এই বয়সেই তার ঝুলিতে রয়েছে ১৪টি ট্রফি। ২৩ বছর বয়সে মেসি ১২টি এবং রোনালদো পাঁচটি ট্রফি জিতেছিলেন।
দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রেও এই দু’জনের থেকে পিছিয়ে নেই এমবাপ্পে। ২৩ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এমবাপ্পে ফ্রান্সের হয়ে ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন। সম সংখ্যক ম্যাচ খেলেছিলেন রোনালদো। এক্ষেত্রে আবার কিছুটা পিছিয়ে মেসি। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছিলেন ৪৯টি ম্যাচ। এছাড়া মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব রয়েছে এমবাপ্পের। যা নেই মেসি বা রোনালদো- কারোরই।
একাধিক পরিসংখ্যানে ২৩ বছরের এমবাপ্পে পেছনে ফেলে দিয়েছেন ২৩ বছরের মেসি এবং রোনালদোকে। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই তিনি কারও থেকে পিছিয়ে নেই।
শেষ পর্যন্ত একজন খেলোয়াড়ের শ্রেষ্ঠত্বের বিচার হয় সাফল্যের পরিসংখ্যান দিয়েই। খেলোয়াড়ের দক্ষতা, শিল্প গুরুত্বপূর্ণ হলেও, শেষ কথাটা বলে সাফল্যই। সেদিক থেকেও মেসি, রোনালদোর থেকে ঢের এগিয়ে এমবাপ্পে।
রোনালদো পর্তুগালকে ইউরো জিতিয়েছেন। মেসি আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন করেছেন, বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। যদিও বিশ্বকাপ দিতে পারেননি।
তবে, এমবাপ্পে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ দিয়েছেন। কাতারে চ্যাম্পিয়ন হলে দ্বিতীয় বার ট্রফি জিতবেন এই ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার।
পরিসংখ্যান এমবাপ্পের হয়ে কথা বললেও, তাকে এগিয়ে রাখতে নারাজ প্রাক্তন ফুটবলাররা। তাদের মতে, এমবাপ্পে নিঃসন্দেহে বড় ফুটবলার। রোনালদোর চেয়েও কিছুটা এগিয়ে। কিন্তু মেসি অন্য জাতের খেলোয়াড়। এমবাপ্পে কেনো, যে কোনো ফুটবলারের পক্ষেই মেসির ধারে কাছে পৌঁছানো কঠিন।
বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের প্রথম সারিতে থাকবেন মেসি। ক্রীড়া নৈপুণ্যেও অনেকটাই এগিয়ে। মেসির সঙ্গে এমবাপ্পের কোনো তুলনা হয় না। আরও কয়েক বছর পর বলা যাবে মেসির কতটা কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন এমবাপ্পে। কেননা, আগামী দিনে এমবাপ্পেই যে শাসন করবেন ফুটবল দুনিয়াকে।
অনেকে আবার এগিয়ে রাখছেন এমবাপ্পেকেই। তারা বলছেন, মেসি-রোনালদো নিঃসন্দেহে বড় মাপের ফুটবলার। এমবাপ্পেও পিছিয়ে নেই। শেষ পর্যন্ত সাফল্যই সবকিছু। এমবাপ্পে দেশকে বিশ্বকাপ দিয়েছেন। মেসি-রোনালদোরা দেশকে কোপা আমেরিকা বা ইউরো জেতালেও বিশ্বকাপ দিতে পারেননি। এমবাপ্পের বয়স কম। আরও দুই-একটা বিশ্বকাপ অবশ্যই খেলবেন। এখনই পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছেন। আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পেলের মতো কিংবদন্তিও বলেছেন, এমবাপ্পে তাঁর রেকর্ড ছুঁতে পারেন।’
সাফল্যই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হওয়া উচিৎ। সাফল্য না থাকলে দক্ষতা গুরুত্বহীন। তুলনায় কম দক্ষতা সাফল্য বয়ে আনলে তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধূলার ইতিহাস পরাজিতদের মনে রাখে না। চ্যাম্পিয়নদের কদর সেখানে। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই সব রকমের চেষ্টা করেও ঠোঁট এবং কাপের দূরত্ব ঘোচাতে পারেন না। যারা পারেন তারাই সেরা বলে বিবেচিত হন। ২৩ বছরের এমবাপ্পে একাধিক ক্ষেত্রে তা করে দেখিয়েছেন।
মেসি-রোনালদোর সাফল্য যে কোনো ফুটবলারের কাছেই ঈর্ষণীয়। পৌঁছে গেছেন ফুটবল জীবনের শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে, এমবাপ্পে রয়েছেন শুরুর দিকে। এই নিক্তিতে তাকে মাপার সময় হয়তো আসেনি। এখনও অন্তত এক দশক ক্লাব ফুটবল খেলবেন এমবাপ্পে। নিশ্চিতভাবেই খেলবেন আন্তর্জাতিক ফুটবলও। তাই অর্জন করার জন্য পড়ে আছে গোটা ফুটবল দুনিয়া।
ফরাসি এই তারকা যে গতিতে এগোচ্ছেন, তাতে তার পায়ে চলে আসতে পারে আরও বহু রেকর্ড। এখনই বিশ্বের সব চেয়ে দামী ফুটবলার তিনি। পেশাদার দুনিয়ায় যে সাফল্যই শেষ কথা।
এনএস/এএইচ