স্পিনে বিপর্যস্ত ভারত, জয়ের স্বপ্নে বাংলাদেশ!
প্রকাশিত : ১৯:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
পটাপট ৩ উইকেট নিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মিরাজ
হোয়াইট এড়ানোর টেস্টে ভারতকে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেনি সাকিবের দল। তবে ১৪৪ রানের পুঁজি নিয়েই কোহলি-পুজারাদের রীতিমত বিপর্যস্ত করে ছেড়েছে টাইগাররা। যাতে ৩৭ রানেই ৪ উইকেট হারিয়েছে ভারত। তাইতো জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ!
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ভারতকে চেপে ধরেছে স্বাগতিক শিবির। দুই ম্যাচের সিরিজে সমতায় ফিরতে ও অভাবনীয় জয়ের জন্য সাকিব আল হাসানদের দরকার আর মাত্র ৬টি উইকেট। অন্যদিকে, ভারতের প্রয়োজন কাঁটায় কাঁটায় ১০০ রান।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থামে ২৩১ রানে। যা প্রথম ইনিংসের চেয়ে চার রান বেশি। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রান জমা করে সফরকারীরা।
তাইতো জয়ের জন্য রুহুলদের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় মাত্র ১৪৫ রানের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই তাদের কোণঠাসা করে ফেলেছে টাইগাররা। চার উইকেটে ৪৫ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বিপর্যস্ত ভারত।
দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে শেষ বিকেলে মেহেদি হাসান মিরাজের স্পিন-জাদু। ৩৭ রানের মধ্যে ভারতের টপ অর্ডার প্রায় ধসিয়ে দিয়েছেন এই অফস্পিনার।
যদিও সফরকারীদের বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছে অধিনায়ক সাকিবের হাত ধরেই। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে দুই রানে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার। এরপর সাকিবের মঞ্চে শুরু হয় মিরাজের ঘূর্ণি-জাদু।
মিরাজ একে একে সাজঘরে পাঠান ওপেনার শুভমান গিল, চেতেশ্বর পুজারা ও বিরাট কোহলিকে। এই ত্রয়ীর একজনও যেতে পারেননি দুই অংকে। আউট হয়েছেন যথাক্রমে ৭, ৬ ও ১ রানে।
তবে উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা অক্সার প্যাটেল। বল হাতে বাংলাদেশকে ভোগানোর পর ব্যাট হাতেও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছেন এই বাঁহাতি। ৫৪টি বল মোকাবিলা করে ২৬ রান নিয়ে দিন শেষে অপরাজিত থাকলেন অক্সার।
বাঁহাতি এই ব্যাটার রোববার চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নামবেন আরেক নাইটওয়াচম্যান জয়দেব উনাদকাটকে নিয়ে। যিনি টেস্ট অভিষেকের এক দশক পর উইকেট পেয়েছেন প্রথম ইনিংসে।
শেষ বিকেলে ২২ গজে এসে উইকেট পতনের মিছিল থামান এই উনাদকাট। এবার নিশ্চয়ই ব্যাট হাতেও ঢাকা টেস্টটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন তিনি। কিন্তু সেটা হতে দেবেন না বলে ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শেষ বিকেলের নায়ক মিরাজ।
১২ রানে ৩ উইকেট তুলে নেয়া এই স্পিনার বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা ইতিবাচক ছিলো। আমরা জানতাম এখানে ব্যাট করা কঠিন হবে। তাদের ব্যাটিং লাইন ভালো, তবে আমাদের দারুণ সুযোগ আছে। কাল সকালেই যদি আমরা দুটি উইকেট তুলে নিতে পারি, তাহলে জয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে।
মেহেদী মিরাজ বলেন, কোহলিকে আউট করা বলটি দারুণ ছিল। আমি মোটামুটি ভালো বোলিং করার চেষ্টা করেছি। পিচ সহায়ক ছিল এবং সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করছে। আমি বিশ্বাস করি, আমি আরও ভালো করতে পারব এবং আগামীকাল আমরা জিততে পারব।
এর আগে সকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। টাইগারদের দিনের শুরুটা হয়েছে জোড়া ধাক্কা দিয়ে। দ্রুত বিদায় নেন নাজমুল হোসাইন শান্ত ও মোমিনুল হক সৌরভ। দুজনই আউট হন সমান পাঁচ রানে করে। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমও।
সাকিব ৩৬ বলে ১৩ এবং মুশফিক ১৯ বলে ৯ রানে ফেরেন। এক প্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার জাকির হাসান আউট হন দলীয় শতক ছাড়ানোর পর। ১৩৫ বলে ৫১ রানে বিদায় নেন তিনি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে এটা তার প্রথম অর্ধশতক। এর আগে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে নিজের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
জাকিরের বিদায়ের পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই শুরু করেন লিটন দাস। নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদকে নিয়ে কার্যকর দুটি জুটি গড়েন তিনি। যাতে দলীয় সংগ্রহ দুইশো ছাড়ায় বাংলাদেশের। সোহান এবং তাসকিন দুজনই সমান ৩১ রান করেছেন। তবে সোহান আউট হলেও অপরাজিত থেকে যান টাইগার পেস তারকা।
প্রায় ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেন লিটনও। ৯৮ বলে ৭৩ রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার।
ভারতের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অক্সার প্যাটেল নিয়েছেন ৩টি উইকেট। দুটি করে শিকার মোহাম্মদ সিরাজ ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। খালি হাতে ফেরেননি উমেশ যাদব, জয়দেব উনাদকাটও।
ব্যাটাররা পারেননি দলকে বড় পুঁজি এনে দিতে। তাই জয়ের দায়িত্বটা নিতে হচ্ছে বোলারদেরই। বোলিং ইনিংসের শুরুতে দুর্দান্ত কিছু করে এখন তারাই দেখাচ্ছেন জয়ের স্বপ্ন। ‘সহজ’ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের জন্য ১৪৫ রানই এখন হয়ে উঠেছে পাহাড়সম। এই পাহাড় সফরকারীরা জয় করতে পারবেন কিনা, তার জবাব মিলবে রোববারই।
এনএস//