দাতব্য ক্রীড়াবিদ রোনালদো
প্রকাশিত : ১১:০৩, ১১ জানুয়ারি ২০২৩
২০১৭ সালের কথা, এক নিলামে ২০১৩ সালে জেতা ব্যালন ডি’অর ট্রফির রেপ্লিকা বিক্রি করেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করা হয়েছিল ওই ট্রফি বিক্রির সব অর্থ। কিংবদন্তী এ ফুটবলার শুধু মাঠের তারকাই নন, জনহিতৈষী কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন অনেকদিন থেকেই। নিয়মিতই তিনি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় অবদান রেখে যাচ্ছেন। এমন সব কাজের জন্য ২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দাতব্য ক্রীড়াবিদ হিসেবেও ‘অ্যাথলেটস গন গুড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী।
দেশি-বিদেশী বেশকিছু গণমাধ্যম রোনালদোর ২০১৭ সালের ব্যালন ডি’অর- এর রেপ্লিকা বিক্রির সংবাদ প্রকাশ করেছেন। যা ওই সময় নিলামে বিক্রি হয় এবং এর মূল্য ছিল ৬ লাখ ইউরো। এটি কিনেছিলেন ইসরায়েলি ধনকুবের ইদান ওফার।
ওই সময় লন্ডনের ডোরচেস্টার হোটেলে মেক-এ-উইশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি গালায় এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রোনালদোর এজেন্ট হোর্হে মেন্দেস এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দান করা ওই ট্রফিটি আসল ছিলো না। এটি ছিলো একটি ‘অতিরিক্ত’ রেপ্লিকা যা ২০১৩ ব্যালন ডি’অর জয়ের সময় রোনালদো বিশেষভাবে অনুরোধ করে নিয়েছিলেন। ‘আসল’ শিরোপাটা এখনো শোভা পাচ্ছে মাদেইরাতে তার ব্যক্তিগত জাদুঘরে।
ক্যারিয়ারে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন পর্তুগিজ তারকা। একটা সময় লিওনেল মেসির সঙ্গে ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে সমানে সমান টক্কর ছিল তাঁর। মেসি অবশ্য নিজের ব্যালন ডি’অরের সংখ্যা সাতে তুলে সেই লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। সাধারণত, যে খেলোয়াড়েরা ব্যালন ডি’অর জেতেন, আয়োজক সংস্থা ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী তাঁদের সেই ট্রফির একটি রেপ্লিকা দিয়ে থাকে।
ব্যালন ডি’অরের ট্রফির রেপ্লিকা নিলামে ওঠাটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। অতীতে আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জেতা দুটি ব্যালন ডি’অর ট্রফিও নিলামে উঠেছিল। প্রথমটি বিক্রি হয়েছিল ৬০ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলারে। দ্বিতীয়টির দাম উঠেছিল ৫৪ হাজার ৪০০ ডলার।
স্টেফানোর ‘সুপার ব্যালন ডি’অর’ ট্রফিটিও নিলামে উঠেছিল। সেটি বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ডলারে। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একবারই সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালে ডি স্টেফানো সেটি জিতেছিলেন মিশেল প্লাতিনি ও ইয়োহান ক্রুইফের সঙ্গে লড়াই করে।
এদিকে রোনালদো বর্তমানে খেলছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসর’র হয়ে। সেখানে চুক্তিবদ্ধ হয়েই পড়েছেন নতুন ঝামেলায়। বান্ধবী জর্জিনো রদ্রিগেজকে নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কোথায় থাকবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই চিন্তা, মুক্ত করে দিয়েছে রোনালদোর ক্লাব আল নাসর। সৌদির সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলে উঠানো হয়েছে রোনালদোকে।
রিয়াদের ফোর সিজনস হোটেলে উঠানো হয়েছে সিআর সেভেনকে। সৌদির রাজপরিবারের কেউ যদি হোটেলে উঠতে চান তাহলে তারা এই হোটেলেই উঠেন। ৯৯ তলা উঁচু প্রাসাদসম হোটেলের ৫০তলায় দুটি ফ্লোর রয়্যাল স্যুট রোনালদোর জন্য নেওয়া হয়েছে। কি নেই সেখানে। ১৭টি রুম। আছে ব্যক্তিগত লিভিং রুম, অফিস রুম, মিডিয়া রুম, স্টাডি রুম, সুইমিংপুল, টেনিস কোর্ট, বিলিয়ার্ড স্টোর, সিনেমা হল, জিমনেসিয়াম, সনা বাথ, মাসাজ রুমসহ সব সুযোগ-সুবিধা।
খাওয়ার জন্য বাইরে যেতে হবে না। আলাদাভাবে রুম ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্রেকফার্স্ট কিংবা লাঞ্চ সবকিছু এমনভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে যে এটি যেন আলাদা এবং ব্যক্তিগত হোটেল। ডায়েট্রিশিয়ানের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খাবার তো থাকবেই, নিজেদের পছন্দের খাবার থাকবে, আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া স্প্যানিশ মডেল বান্ধবী জর্জিনা গরু এবং ভেড়ার মাংস পছন্দ করেন সেটিও থাকবে। বাচ্চারা কী খাবার খাবে সেটিও রাখা হবে।
পানি, লেবানিজ খাবার রাখা হবে এবং অন্য কোনো দেশের খাবার চাহিদা থাকলে সেটিও টেবিলে রাখা হবে। এরপরও নিজেরা যদি রান্না করে কোনো কিছু খেতে চান তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক রান্না ঘরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মন চাইলে রোনালদো তার বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলের ছাদে যাবেন। সেখানে থেকে দিনের আলোয় হোক কিংবা চাঁদের আলোয় রিয়াদ শহর দেখবেন। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে চাইলে সেটিও করা যাবে। প্রতি রাতের ভাড়া প্রায় ৪ লাখ টাকা।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সৌদিতে কঠিন আইন এক ছাদের নিচে অবিবাহিত নারী পুরুষ থাকতে পারবেন না। সৌদি সরকার রোনালদো ও তার বান্ধবী জর্জিনোর সম্পর্কটা না দেখার ভান করবে। একজন ফুটবলারের আগমনকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবে এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
রোনালদো আগামী ২২ জানুয়ারি আল নাসর ক্লাবের জার্সি গায়ে অফিসিয়াল ম্যাচ খেলতে নামবেন। তবে তার আগেই আরবের মাটিতে রোনালদো বল নিয়ে দৌড়াবেন। মেসির বিপক্ষে খেলতে পারেন। সৌদি আরবের আল নাসর ও আল হিলাল ক্লাবের খেলোয়াড়দের নিয়ে অলস্টার দল নাম দিয়ে মেসির পিএসজির বিপক্ষে আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রীতি ম্যাচ হবে। সেখানে রোনালদো মাঠে নামতে পারেন।
এসএ/