ব্রেসওয়েলের বিস্ফোরক শতক ব্যর্থ করে ভারতের জয়
প্রকাশিত : ০০:৪৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, শুভমন গিলের করা ২০৮ রানও করতে পারবে না নিউজিল্যান্ড। ১৩১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল কিউয়িরা। কিন্তু সেখান থেকেই দলকে টেনে তুললেন মাইকেল ব্রেসওয়েল ও মিচেল স্যান্টনার। দুর্দান্ত এক শতক হাঁকালেন ব্রেসওয়েল। দু’জনের ১৬২ রানের জুটির দৌলতে খেলায় টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারল না নিউজিল্যান্ড। ব্যর্থ হলো ব্রেসওয়েলের ৭৮ বলে ১৪০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস।
ঘরের মাঠে বল হাতে জ্বলে উঠলেন মোহাম্মদ সিরাজ। ভয়ঙ্কর কিউয়ি জুটিকে ভাঙলেন তিনিই। হায়দরাবাদে শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে ১২ রানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজের শুভ সূচনা করলেন রোহিত শর্মারা।
ম্যাচ জিতলেও দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। শুভমন ছাড়া বড় রান পাননি বাকি ব্যাটারদের কেউই। আরও একবার ব্যর্থ অধিনায়ক রোহিত। সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়াও বড় রান করতে পারেননি। প্রতি ম্যাচে কেউ একজন দ্বিশতক করবেন না। রোহিতকে চিন্তায় রাখছে দলের বোলিংও। মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব ছাড়া বাকিরা ছাপ ফেলতে ব্যর্থ।
একটা সময় তো মনে হয়েছিল ভারত বোধহয় হেরেই যাবে। সহজ ম্যাচকে কঠিন করে তুললেন ভারতীয় বোলাররা। কোনো রকমে জিতলেও বোলিং নিয়ে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে ভারতকে।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোহিত। পরের দিকে শিশির পড়বে জেনেও নিজেদের পরীক্ষার মুখে ফেলতে চেয়েছিলেন। সেই পরীক্ষায় বাকিরা পাশ করতে না পারলেও শুভমন পেলেন লেটার মার্কস। রোহিতের সঙ্গে শুরুটা ভালোই করেছিলেন তিনি। দু’জনে মিলে দ্রুত রান তুলছিলেন। ভালো খেলছিলেন রোহিত। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ৩৪ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরেন তিনি। রান পাননি বিরাট কোহলি ও ঈশান কিশান।
দিনটা ছিল শুভমনের। অন্য প্রান্তে উইকেট পড়লেই পরের কয়েকটি বলে বড় শট মেরে রানের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। ফলে উইকেট পড়লেও বড় রানের দিকেই এগোচ্ছিল ভারত। শুভমনকে কিছুটা সঙ্গ দেন সূর্যকুমার ও হার্দিক। সূর্য ৩১ ও হার্দিক ২৮ রান করেন। হার্দিকের আউট হওয়ার পিছনে রয়েছে আম্পায়ারের ভুল। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল উইকেটে লাগেনি। উল্টো কিউয়ি উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের গ্লাভসে লেগে বেল পড়ে যায়। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। বিরক্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন হার্দিক।
শুভমন নিজের তৃতীয় শতরান পূর্ণ করেন। ১৯টি ইনিংসে তৃতীয় শতরান হল তার। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। অন্যদিকে উইকেট পড়তে থাকায় রানের গতি বাড়ান তিনি। ১৫০ রান পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে একটা সময় মনে হচ্ছিল, দ্বিশতক বুঝি আর হলো না। কারণ, কয়েকটি ওভারে রানের গতি কমে যায় তার। কিন্তু ৪৯তম ওভারকে নিশানা করলেন শুভমন। লকি ফার্গুসনকে পর পর তিন বলে তিনটি ছক্কা মেরে ২০০ রান পূর্ণ করেন গিল। শেষ ওভারের প্রথম বলে আবার ছক্কা মারেন তিনি। দ্বিতীয় বলে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান শুভমন। ৩৪৯ রানে শেষ হল ভারতের ইনিংস।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডেরও। ব্যর্থ হয় দলের টপ ও মিডল অর্ডারও। ফিন অ্যালেন ৪০ রান করলেও রান পাননি প্রথম ছয় ব্যাটারের কেউই। নতুন বলে শামি-সিরাজ ও মাঝের ওভারে কুলদীপের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র ১৩১ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায় নিউজিল্যান্ডের।
সেখান থেকে জুটি বাঁধলেন ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনার। পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন তারা। দলের বাকি বোলারদের নিশানা করলেন। প্রতি ওভারে বড় শট খেলা শুরু করেন এই কিউয়ি জুটি। বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন ব্রেসওয়েল। একের পর এক বল গিয়ে পড়ছিল বাউন্ডারির বাইরে। চাপে পড়ে যায় ভারতীয় বোলিং। খারাপ বল করা শুরু করেন শার্দুল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দররা।
দুরন্ত শতরান করেন ব্রেসওয়েল। অর্ধশতরান করেন স্যান্টনার। একটা সময় মনে হচ্ছিল, নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়ে দেবেন দুজনে। কিন্তু তখনই ভারতকে আবার খেলায় ফেরান সিরাজ। বল করতে এসে ৫৭ রানের মাথায় স্যান্টনারকে আউট করেন তিনি। ৪ উইকেট নিলেন সিরাজ।
স্য়ান্টনার আউট হলেও টিকে ছিলেন ব্রেসওয়েল। সব দায়িত্ব এসে পড়েছিল তার কাঁধে। প্রায় প্রতি বলে বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সফলও হচ্ছিলেন। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল ২০ রান। শার্দুলকে প্রথম বলে ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। ব্রেসওয়েল আউট হতেই শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
এনএস//