অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ড জয় দক্ষিণ আফ্রিকার
প্রকাশিত : ০৯:৫২, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কুইন্টন ডি ককের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ড জয়ের স্বাদ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। রান বিবেচনায় বিশ্বকাপ ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় প্রোটিয়াদের। এমনকি বিশ্বকাপ ইতিহাসে যেকোন দলের কাছে এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে হার অজিদের।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি কক ১০৯ রান করেন। জবাবে ৫৫ বল বাকী রেখে ১৭৭ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার পর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট এখন দক্ষিণ আফ্রিকার। ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেও হারের লজ্জা পেল রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হারলো অজিরা।
লক্ষ্নৌতে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাকে নিয়ে শতরানের জুটি গড়েন ডি কক। ২০তম ওভারে দলীয় ১০৮ রানে বাভুমাকে শিকার করে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী ভাঙ্গেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২টি চারে ৫৫ বলে ৩৫ রান করেন বাভুমা। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত উদ্বোধনী জুটিতে সেঞ্চুরি করলো দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা।
দ্বিতীয় উইকেটে রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে নিয়ে ৫৩ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন ডি কক। জুটিতে ৩০ বলে ২৬ রান তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডুসেন।
ডুসেন ফেরার পর ৩০তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে ওয়ানডেতে ১৯তম শতরান পূর্ণ করে প্রোটয়িাদের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ^কাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন ডি কক। ২০১১ সালের বিশ^কাপে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। হার্সেল গিবস ও ফাফ ডু প্লেসিসের পর প্রোটিয়াদের তৃতীয় ব্যাটার হয়ে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরির নজির গড়লেন ডি কক।
এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়নডেতে ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ ১৯ সেঞ্চুরিতে গিবসকে টপকে দ্বিতীয়স্থানে উঠেন ডি কক। এবি ডি ভিলিয়ার্সের পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে শতক হাঁকানোর পর ম্যাক্সওয়েলের বলে বোল্ড হন ডি কক। ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৬ বলে ১০৯ রান করেন তিনি।
৩৫তম ওভারে দলীয় ১৯৭ রানে ডি কক ফেরার পর দক্ষিণ আফ্রিকার রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। অবশ্য আইডেন মার্করাম ছাড়া কেউই হাফ-সেঞ্চুরির ধারেকাছেও যেতে পারেননি।
৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ বলে ৫৬ রান করেন আগের ম্যাচে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করা মার্করাম। এছাড়া হেনরিচ ক্লাসেন ২৯, ডেভিড মিলার ১৭ ও মার্কো জানসেন ২২ বলে ২৬ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১১ রানের সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান দক্ষিণ আফ্রিকার।
অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ৫৩ রানে ও ম্যাক্সওয়েল ৩৪ রানে ২টি করে উইকেট নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ইনিংসে ৬টি ক্যাচ ফেলেন অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা।
৩১২ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু উদ্বোধনী জুটিতে ৩৫ বলে ২৭ রানের বেশি তুলতে পারেননি তারা। ১৫ বলে ৭ রান করা মার্শকে থামিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ধাক্কা দেন পেসার জানসেন।
জানসেন ফেরার ৬ বল পর ওয়ার্নারকে ১৩ রানে থামিয়ে দেন পেসার লুঙ্গি এনগিডি। ২৭ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন স্টিভেন স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেন। দলের রান ৫০এ পা দেয়ার পর স্মিথ-লাবুশেন জুটি ভাঙ্গেন পেসার কাগিসো রাবাদা। ১৯ রান করে আউট হন স্মিথ।
স্মিথের আউটের পর অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে ধ্বস নামে। ৭০ রানে পৌঁছাতে ষষ্ঠ উইকেট হারায় অজিরা। রাবাদা ও মহারাজার নৈপুন্যে ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। জশ ইংলিশকে ও মার্কাস স্টয়নিসকে একই স্কোর ৫ রানেই বিদায় দেন রাবাদা। ম্যাক্সওয়েলকে ৩ রানে থামান মহারাজ।
১৮তম ওভারেই ১শ’র নীচে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়া অস্ট্রেলিয়াকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করেন লাবুশেন ও স্টার্ক। সপ্তম উইকেটে ৯৮ বলে ৬৯ রান যোগ করেন তারা। স্টার্ককে ২৭ রানে আউট করে জুটি ভাঙ্গেন জানসেন। কিছুক্ষণ পর ৪৬ রানে মহারাজের শিকার হন লাবুশেন।
১৪৩ রানে লাবুশেনের বিদায়ের পর ৪০ দশমিক ৫ ওভারে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা ৩টি, জানসেন-মহারাজ ও শামসি ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন কুইন্টন ডি কক(দক্ষিণ আফ্রিকা)।
এএইচ