ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার প্রধান নির্বাচকের মাথা ফাটাল কারা?

প্রকাশিত : ১১:০৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

অতীতে বহু কেলেঙ্কারিরই ছায়া পড়েছে দিল্লি ক্রিকেটে। কিন্তু সোমবার যা ঘটল, তা যেমন নজিরবিহীন, তেমনই ন্যক্কারজনক। ভারতীয় ক্রিকেটে এর আগে কখনও এ রকম ঘটনা ঘটেছে কি না, সন্দেহ।

ভারতের প্রাক্তন পেসার এবং বর্তমানে দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার (ডিডিসিএ) প্রধান নির্বাচক অমিত ভাণ্ডারী দিনদুপুরে, ক্রিকেট ট্রায়াল চলার সময় দুষ্কৃতি হামলার শিকার হলেন। মাথায় আঘাত নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে যে কারণ উঠে আসছে, সেটাই নড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। অভিযোগ উঠেছে, দিল্লির অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সুযোগ না পাওয়া এক ক্রিকেটার এবং তার পরিবার-বন্ধুরা নাকি রয়েছে এই হামলার পিছনে।

রাতে এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) নূপুর প্রসাদ বলেছেন, ‘আমরা অভিযুক্ত এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ওদের গ্রেফতারও করা হয়েছে।’ জানা গেছে, অনূজ ধেদা নামক অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ওই ক্রিকেটার এবং তার সঙ্গীরা হামলা চালায় ভাণ্ডারীর ওপর। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সোমবার দুপুর সওয়া একটা নাগাদ বাদ পড়া ক্রিকেটার অনূজ ধেদা এসে তর্কাতর্কি শুরু করে ভাণ্ডারীর সঙ্গে। জানতে চায়, কেন বাদ দেওয়া হয়েছে। বচসার মধ্যে ভাণ্ডারীকে থাপ্পরও মারে। এর পরে আরও ১০-১৫ জন ছেলে এসে মারতে শুরু করে ভাণ্ডারীকে।’

রাতে হাসপাতাল থেকে ভাণ্ডারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পুলিশকে আমার বক্তব্য জানিয়েছি। দল নির্বাচন কীভাবে হয়েছে, সেটাও বলেছি। আমাকে যারা আক্রমণ করেছিল, তাদের নামও পুলিশকে জানিয়েছি।’ হাসপাতালে ভাণ্ডারীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন ডিডিসিএ-র প্রেসিডেন্ট রজত শর্মা। পরে তিনি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘গুণ্ডারা চাপ দিয়ে একজন ক্রিকেটারকে দলে ঢোকানোর চেষ্টা করছিল। যে যোগ্যতা অনুযায়ী দলে সুযোগ পায় না। ভাণ্ডারী আমাকে এও বলেছে, ওকে রিভলবার দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একজন সৎ নির্বাচককে তার কাজটা করা থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছিল।’

যেভাবে প্রকাশ্যে, অনূর্ধ্ব-২৩ নির্বাচনী ট্রায়াল চলার মধ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে, তাতেই বিস্মিত হচ্ছেন সবাই। সেন্ট স্টিফেন্সের মাঠে এ দিন ওই ট্রায়াল চলছিল। ঘটনার সময় অন্তত ৪০ জন মানুষ সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদের সামনেই লোহার রড, সাইকেলের চেন দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় ভারতীয় দলের হয়ে ওয়ান ডে খেলা এই প্রাক্তন পেসারের।

দিল্লি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ম্যানেজার শঙ্কর সাইনি সামনে থেকে পুরো ঘটনা দেখেছেন। তার কথায়, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের একটি ম্যাচ দেখছিলেন ভাণ্ডারী। ওই সময় দু’জন লোক এসে ভাণ্ডারীর সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। এর পরে ওই দু’জন বেরিয়ে যায়। কিন্তু তার মিনিট কয়েক পরে জনা পনেরো লোক হকি স্টিক, সাইকেলের চেন হাতে নিয়ে ভাণ্ডারীর ওপর হামলা চালায়।

সাইনির কথায়, ‘আমি এবং আর একজন তাঁবুর মধ্যে বসে খাচ্ছিলাম। ভাণ্ডারী, মিঠুন মানহাসরা বসে ট্রায়াল ম্যাচটা দেখছিল। এমন সময় দু’জন লোক এসে ভাণ্ডারীর সঙ্গে তর্কাতর্কি জুড়ে দেয়। ওরা বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও আমরা বুঝতে পারিনি, কী ঘটতে চলেছে। হঠাৎ দেখি জনা পনেরো লোক, হাতে হকি স্টিক, রড, চেন নিয়ে এসে ভাণ্ডারীকে মারতে শুরু করেছে। আমরা ছুটে যাই। অন্য অনেকেও চলে আসে। তখন ওদের মধ্যে থেকে এক জন আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলে, এর মধ্যে জড়ালে গুলি করে মারব। ওরা মেরে ভাণ্ডারীর মাথা ফাটিয়ে দেয়।’

ভাণ্ডারীর উপরে এই আক্রমণের ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তে ক্রিকেট মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ভারত এবং দিল্লির প্রাক্তন এবং বর্তমান ক্রিকেটাররা সরব হয়েছেন। বীরেন্দ্র সহবাগ টুইট করেছেন, ‘একজন ক্রিকেটারকে দলে না নেওয়ায় যেভাবে হামলা চালানো হল দিল্লির নির্বাচক অমিত ভাণ্ডারীর উপরে, তা ক্রিকেটকে নতুনভাবে কলঙ্কিত করল। আশা করব, কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে দুষ্কৃতিকে। এও আশা করব, এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে এই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়।’

ভারতীয় দলের অন্যতম ওপেনার শিখর ধওয়নের টুইট, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না অমিত ভাইয়ার সঙ্গে এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, কাপুরুষোচিত ঘটনা। দ্রুত তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষীদের যেন কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়।’ ক্ষুব্ধ গম্ভীর অভিযুক্ত ক্রিকেটারের আজীবন নির্বাসনের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন, ‘রাজধানীর বুকে এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে দেখে অত্যন্ত খারাপ লাগছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখব, যাতে এই ঘটনা ধামাচাপা না দিয়ে দেওয়া হয়। শুরুতেই চাইব, যে ক্রিকেটার এই হামলার নেপথ্যে আছে, তাকে যেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আজীবন নির্বাসিত করা হয়।’

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি