লঙ্কান বোলিংয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ২০:৫৭, ২৬ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ২৩:২২, ২৬ জুলাই ২০১৯
লঙ্কান বোলিং তোপে শুরুতেই তছনছ টাইগারদের ব্যাটিং লাইন আপ। স্বাগতিকদের দেয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মালিঙ্গা-প্রদিপ-কুমারার ক্ষুরধার পেসে বিপর্যস্ত হয়ে ৩৯ রানেই চার উইকেট খুইয়েছে বাংলাদেশ। একে একে বিদায় নিয়েছেন তামিম-মিঠুন-সোম্য ও রিয়াদ।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১২ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৯ রান। ক্রিজে আছেন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম ৬ রানে এবং সাব্বির রহমান শূন্য রানে।
এ ম্যাচে জয় পেতে হলে বড় জুটি গড়তে হবে এ দুজনকে। পাশাপাশি ম্যাচ জয়ীর ভূমিকা পালন করতে হবে মুশফিককে। তবেই এই বিশাল রানের লক্ষ্য টাড়ায় জয়ের নাগাল খুঁজে পাবে বাংলাদেশ।
এর আগে দলীয় মাত্র এক রানেই তামিমকে হারিয়ে দল যখন চাপে, তখনই ব্যাট হাতে দলকে চাপমুক্ত করতে ক্রিজে আসেন সাকিবের বিকল্প ভাবা মিঠুন। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। অষ্টম ওভারে প্রদীপের শিকার হয়ে মিঠুন ক্রিজ ছাড়লে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ফেরার আগে ১০ রান করেন প্রস্তুতি ম্যাচের জয়ের নায়ক।
পরে মালিঙ্গার দ্বিতীয় আঘাতে সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সৌম্য সরকার। তামিমের মত একই ধরনের আঘাত ছিল এটাও। যা এবারও সামলাতে পারেননি সৌম্য। ২২ বলে ১৫ করে মাঠ ছাড়েন তিনি। আর এরইসঙ্গে ৩০ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ম্যাচটি ছিলো- তামিমের অভিষেক আর মালিঙ্গার বিদায়। এ যেন তামিমের বিপক্ষে মালিঙ্গার লড়াই। সেই লড়াইয়ে মালিঙ্গার ইয়র্কার অস্ত্র মোকাবেলা করতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়লেন টাইগার নয়া ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল। আর জয়ী হলেন বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা মালিঙ্গা। ফলে শ্রীলঙ্কার দেয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট খোয়ালো বাংলাদেশ।
এর আগে মালিঙ্গার ইয়র্কার সামলাতে না পেরে লেগ স্ট্যাম্পে বোল্ড হন তামিম। পাঁচ বল মোকাবেলা করে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন টাইগার কাণ্ডারি। এমনিতেই ব্যাটে রান নেই তাঁর, তার ওপর ৩১৫ রানের বিশাল টার্গেট আর ক্যাপ্টেন্সির চাপ। এতগুলো চাপেই কিনা পিষ্ট হলেন ড্যাশিং ওপেনার। তামিম যখন আউট হলেন দলের রান তখন মাত্র ১। যার ফলে আরও চাপে পড়ে দল।
এর আগে কুশল পেরেরার ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে চড়ে বাংলাদেশকে ৩১৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ক্যাপ্টেন তামিমের অভিষেক রাঙাতে তাই এই বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হবে টাইগারদের। অন্যদিকে জয় দিয়েই গ্রেট মালিঙ্গাকে বিদায় জানাতে চায় করুনারত্নের দল।
কলম্বোর রনসিংহ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বিকেল তিনটায় শুরু হওয়া এ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় স্বাগতিকরা। ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১০ রানে প্রথম উইকেট হারালেও একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমত ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে থাকে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এরই মধ্যে টাইগার বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা।
যা ছিল পেরেরার ৯৬ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরি। তাঁর ৮২ বলের এই মারকুটে ইনিংসে ছিল ১৭টি চার আর একটি ছক্কার মার। এর আগে মাত্র ৩৮ বলে দশ চারে এসেছে পেরেরার হাফ সেঞ্চুরি। সেইসঙ্গে অধিনায়ক করুনারত্নেকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে দলের স্কোরে যোগ করেন ৯৭ রান।
১৫তম ওভারের শেষ বলে কারুনারত্নে মিরাজের শিকার হয়ে ফিরলে দলীয় ১০৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন লঙ্কান স্কীপার। এরপর কুশল পেরেরার সঙ্গে যোগ দেন আরেক কুশল দানহাতি মেন্ডিস। টাইগার বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে এ দুজনে যখন ঠিক ১০০ রান যোগ করেন, তখনই লঙ্কান শিবিরে পরপর দুই ওভারে দুইবার আঘাত হানেন সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসাইন। পেরেরা ও মেন্ডিসকে দ্রুত ফিরিয়ে দলকে উল্লাসে মাতান সৌম্য-রুবেল।
সৌম্যের বলে আউট হওয়া মারকুটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা সাজঘরে ফেরেন ১১১ রানে। সেঞ্চুরি করার পর আর কোন বাউন্ডারি পাননি এই বাঁহাতি। আর কুশল মেন্ডিস ৪৩ রানে আউট হন শততম ম্যাচ খেলতে নামা রুবেলের শিকার হয়ে। ফলে ২১২ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
পরে টাইগার বোলাররা আরও চারটি উইকেটের পতন ঘটালেও দলের স্কোরকে তিনশ'র কাছে নিয়ে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও লাহিরু থিরিমান্নে। মুস্তাফিজের শিকার হয়ে ২ রানের জন্য ফিফটি বঞ্চিত হন ম্যাথিউজ। তাঁর আগেই ২৫ রান করে মুস্তাফিজের প্রথম শিকার হয়ে ফেরেন থিরিমান্নেও।
পরে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১২ বলে ১৮ রান করলে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে শ্রীলঙ্কা।
তামিমের অভিষেকের এ ম্যাচে টস হেরে বোলিং করতে নেমে শুরু থেকেই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবের মুখে বেশ খরুচে বোলিং করেন সবাইই। এর মধ্যেও সবচেয়ে সফল ছিলেন দীর্ঘ ৩২ মাস পর দলে ফেরা শফিউল ইসলাম। ৬২ রান দিলেও তিনটি উইকেট তুলে নেন শফিউল।
অন্যদিকে ভরসার প্রতীক কাটার মাস্টার ছিলেন যেন একটু বেশিই খরুচে। ৭৫ রান দিয়েছেন তিনি। যদিও ২টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন বাঁহাতি এই পেসার। এছাড়া মিরাজ, রুবেল ও সৌম্য পান একটি করে উইকেট।
এনএস/আরকে