তবে কী পেছন দিকেই হাঁটছে বাংলাদেশের ক্রিকেট?
প্রকাশিত : ২২:৩০, ২ আগস্ট ২০১৯
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এর পরই প্রশ্ন উঠেছে যে, দলটি বিশ্ব ক্রিকেটে সত্যিকার অর্থে কোথায় অবস্থান করছে?
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগেও যে প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট দল নিয়ে, বিশ্বকাপ ও পরবর্তী সময়ে তা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তখনই বাংলাদেশ দলের খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। সেই ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানের হার যেন প্রশ্নটি আরও জোরালো হয়।
সেই ২০১৫ সাল থেকেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে। সেবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা এবং পরে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের র্যাঙ্কিংয়েও উন্নতি ঘটায়। এরপর তো সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করে বাংলাদেশ।
কিন্তু জাতীয় দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের পর এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে, বাংলাদেশ কি এখন পেছন দিকে হাঁটছে?
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে ১৮টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ১৩টিতেই জয় পায় এবং ওই বছরই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে ওডিআই সিরিজে হারায় বাংলাদেশ।
২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান সিরিজ পর্যন্ত টানা ছয়টি সিরিজে জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরেই যেন কী থেকে কী হয়ে যায়। পরের এক বছরেও কোনও সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ।
২০১৬ সালে ৯টি ম্যাচ খেলে ৩টিতে এবং পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ১৪টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৪টি ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। তবে ওই সময়ের পর আবারও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ আবারও সিরিজ জেতে। এ বছরটিতে ২০টি ম্যাচের মধ্যে ১৩টিতেই জয় পায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে ও নিজেদের মাটিতে দুবার এবং জিম্বাবুয়েকেও ৩-০ ব্যবধানে হারায় টাইগাররা। এর মাঝে এশিয়া কাপের ফাইনালেও খেলে বাংলাদেশ।
আর চলতি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শুধুমাত্র বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে সাফল্য পায়। আয়ারল্যান্ডের ওই সিরিজে স্বাগতিক দল ও দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মত কোন ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এর আগে অবশ্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ তে হারে দল।
আর বিশ্বকাপে ৯টি ম্যাচের মধ্যে মাঠে গড়ায় ৮টি। যেখানে ৩টি ম্যাচে জয় এবং ৫টি ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়ে দেশে ফেরে তামিমের দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান বা বোলাররা সুবিধা করতে পারেনি কেউই।
যার ফলে এখন পর্যন্ত ২০১৯ সালে খেলা ১৮টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৭টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার শ্রাবণ্য তৌহিদা জানান যে, একটি সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ দলকে বিবেচনা করাটা উচিৎ হবে না।
তরুণ এই ধারাভাষ্যকার বলেন, ক্রিকেট অনেক সময় মোমেন্টামের খেলা। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খুব ভালো করেনি, এরপর সাকিব-মাশরাফি ছাড়াই শ্রীলঙ্কায় গেল। তামিম ইকবাল ভাল নেতৃত্ব দিতে পারেনি। তাই সব মিলিয়ে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ একটা দল হিসেবে খেলতে পারেনি।
শ্রীলঙ্কার ভাল করার বিষয়ে শ্রাবণ্য তৌহিদার বিশ্লেষণ- শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ম্যাচটি লাসিথ মালিঙ্গাকে উৎসর্গ করেছিল, ফলে শুরু থেকেই তারা ভাল খেলার চেষ্টা করেছে।
এদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটাররা বিশ্রাম পায় মাত্র কিছুদিন, অন্যদিকে দল হিসেবে পরিকল্পনার অভাবটাও ছিল এই সময়ে। শ্রাবণ্য বলেন, ‘বাংলাদেশ বেশ বিবর্ণভাবেই হেরেছে।’
মিস তৌহিদা মনে করেন, এটা প্রমাণ করে না যে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের আগের সময়ে ফিরে গেছে, কারণ ক্রিকেটে তো হার-জিত থাকবেই। নতুন কোচ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, আস্তে-ধীরে মোমেন্টামও ফিরে আসবে বলে মনে করছেন উদীয়মান এই ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার।
এনএস/এসি