উত্তেজনা ছড়িয়েই জিতল বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ২৩:৩৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৪১, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৪৫ লক্ষ্য তাড়ায় কোথায় উড়ন্ত সূচনা দরকার, তা তো দূর! মাত্র ২৯ রানেই চার টপ অর্ডারকে হারিয়ে উল্টো বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তবে আফিফ ও মোসাদ্দেকের ব্যাটে উত্তেজনা ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। যাতে ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সূচনাটা জয় দিয়েই করল বাংলাদেশ।
সাব্বির রহমান ১৫ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হন, স্বাগতিকদের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ৬০ রান। এর আগেই অবশ্য সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লেগ বিফোর হয়ে ফেরার আগে করেন ১৪ রান।
২৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন হারের শঙ্কায় ধুঁকছে তখনই ক্রিজে আসেন এ দুজন। ওই ধাক্কা সামলে বিপর্জয় কাটিয়ে ওঠার রসদ দিলেও দলকে বেশিদূর টানতে পারেন নি রিয়াদ ও সাব্বির। ২৭ রানের জুটি গড়ে এ দুজনই ফেরেন মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে। যাতে ফের হারের শঙ্কা জেগে ওঠে সমর্থকদের মাঝে।
কিন্তু তখনও যে নাটকীয়তার শেষ দেখাটা বাকি ছিল! ক্রিজে এসেই তার বহি:প্রকাশ ঘটাতে শুরু করেন আফিফ ও মোসাদ্দেক। সব শঙ্কাকে দূরে ঠেলে দিয়ে জয়ের নায়ক হিসেবেই আবির্ভূত হন এ দুজন। বিশেষ করে তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডাক মারলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজের জাত চেনালেন তরুণ আফিফ। মাত্র ২৪ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করে দ্রুততম ফিফটির মালিক বনে যান ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ। যদিও দুই বল পর আউট হয়ে যান তিনি। যখন জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে বাংলাদেশ।
সাজঘরে ফেরার আগে আটটি চার ও এক ছয়ে ম্যাচ সেরা ৫২ রানের ইনিংস খেলেন আফিফ হোসেন। সঙ্গী ফিরলেও দুই ছয়ে অপরাজিত ৩০ রান করে দলের জয়ে পার্শ্ব নায়ক মোসাদ্দেক। আর শেষ সময়ে ক্রিজে এসে মাত্র দুই বলেই ছয় রান নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন সাইফুদ্দিন।
এদিন ভাল শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও লিটন দাস ফেরেন এক চার ও এক ছয়ে ১৯ রান করে বোল্ড হয়ে। এরপর সৌম্য ৪ রানে ক্যাচ তুলে দিলেও রানের খাতাই খুলতে পারেননি ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিক। আর বোলিংয়ে চরমভাবে মার খাওয়া দলনায়ক সাকিব তো ফেরেন মাত্র ১ রান করেই।
এর আগে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে একপর্যায়ে ৬৩ রানেই পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে রায়ান বার্লের ঝোড়ো ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে সফরকারীরা। নির্ধারিত ১৮ ওভারে আর কোন উইকেট না হারিয়েই বোর্ডে ১৪৪ রান জমা করে তারা।
মিরপুরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেই টেইলরকে হারায় জিম্বাবুয়ে। অভিষিক্ত তাইজুলের করা প্রথম বলেই মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে ফেরেন জিম্বাবুয়ান ওপেনার। পরে জিম্বাবুয়ে শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন মুস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন। এরভিন ও মাসাকাদজাকে তুলে নিয়ে উল্লাসে মাতেন দুজন।
২৬ বল খেলে পাঁচটি চার এক ছক্কায় ৩৪ রান করে ফেরেন অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তার আগে ও পরে টাইগার বোলিং তোপে সাজঘরে ফেরেন ক্রেইগ এরভিন ১১ রানে, উইলিয়ামস ২ রানে ও মারুমা ১ রানে। যাতে বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। আর এতে মনে হয়েছিল অল্পতেই বুঝি গুটিয়ে যাবে মাসাকাদজার দল।
কিন্তু না, তা হয়নি। হতে দেননি এক জিম্বাবুয়ান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ওই বিপর্যয় কাটিয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হন রায়ান বার্ল। সাকিবের এক ওভারে তো রীতিমত ঝোড় তোলেন তিনি। তিন ছয় ও তিন চারে ৩০ রান সংগ্রহ করেন বার্ল। ২৮ বলে নিজের প্রথম ফিফিটিটাও হাঁকিয়ে ফেলেন রায়ান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। তার ৩২ বলের এ মারকুটে ইনিংসে ছিল চারটি ছক্কা ও পাঁচটি চারের মার।
মূলত তার ঝড়ো ব্যাটে ভর করেই স্বাগতিক বাংলাদেশকে ১৪৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিতে সক্ষম হয় জিম্বাবুয়ে। তবে কম যাননি বার্লকে সঙ্গ দেয়া টিনোটেন্ডা মুতোম্বোদজিও। ২৬ বলে ২৭ রান করে বার্লকে যোগ্য সঙ্গই দেন তিনি।
টাইগারদের পক্ষে এ ম্যাচে তাইজুল, মুস্তাফিজ, সাইফুদ্দিন ও মোসাদ্দেক প্রত্যেকেই একটি করে উইকেট তুলে নিতে পারলেও চরম ব্যর্থ হন সাকিব আল হাসান। উইকেট তো পানই নি। উল্টো এক ওভারে ৩০ সহ চার ওভারে ৪৯ রান দেন দলীয় অধিনায়ক। যাতে অত সংগ্রহ পায় সফরাকারিরা।
এর আগে পৌনে ৮টার দিকে অনুষ্ঠিত হওয়া টসে জিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এদিকে দেরিতে শুরু হওয়া এ ম্যাচের পরিধিও কমেছে। দুই ওভার কমায় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ওভারে। কমানো হয়েছে বিরতির সময়ও।
এনএস/