রোনালদোর সঙ্গে লড়াই শুধু মাঠেই, বাইরে বন্ধুত্ব: মেসি
প্রকাশিত : ১২:১১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ফুটবল জগতের দুই তারকা লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ফুটবল মাঠে দুই জনই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ কাকে ছাড় দিতে রাজি নন। তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন দু’জনেই। এগুলো কেবল মাঠেই। মাঠের বাইরে দু’জনের রয়েছে গভীর বন্ধুত্ব। একথাগুলো স্বয়ং মেসির। ফিফার ওয়েবসাইটের এক সাক্ষাৎকারে বর্ষসেরা লিওনেল মেসি এই কথাগুলো বলেছেন।
মেসি আরও জানিয়েছেন, ফুটবল কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা কোচিং শুরু করায় তিনি উচ্ছ্বসিত। ব্যক্তিগত পুরস্কারের চেয়ে গুরুত্ব দেন দলগত সাফল্যকে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বদেশের জার্সি পরে খেলে চিরতরে বুট তুলে রাখার।
ফিফার ওয়েবসাইটে দেওয়া মেসির সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
মেসিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জীবনে অনেক পুরস্কার আপনি জিতেছেন। আগেও জিতেছেন ফিফার বর্ষসেরা। নতুন ফরমেটে প্রথম বার জিতলেন। কেমন লাগছে?
লিওনেল মেসি বললেন, আমি খুব খুশি। তবে সব সময়ই বলে এসেছি, ব্যক্তিগত পুরস্কারকে অগ্রাধিকার দিই না। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলগত সাফল্য। ফিফার পুরস্কার হাতে নেওয়ার রাতটা আমার কাছে অবশ্যই বিশেষ অনুভূতির। আমি খুবই ভাগ্যবান যে, এমন সুন্দর একটা রাতে স্ত্রী ও তিন ছেলের দু’জনকে পাশে পেয়েছি। সবাই মিলে আনন্দটা উপভোগ করতে পেরে দারুণ লেগেছে।
মেসিকে রোনালদো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, উয়েফার পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনাকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে বন্ধুর মতো আড্ডা মারতে দেখা গেল। আপনাদের এভাবে দেখলেই লোকে অবাক হয়। আপনার কী মনে হয়?
মেসি জানালেন, একটাই কারণ। মাঠে অনেক বছর ধরে আমাদের দ্বৈরথ চলছে। আমি বার্সেলোনার। ক্রিশ্চিয়ানো ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। দু’জনেই অনেক পুরস্কার জিতি। লোকে হয়তো ভাবে এই লড়াই মাঠের বাইরেও চলে। যা আদৌ সত্যি নয়। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করি। কেউ হারতে পছন্দ করি না। যে কারণে মাঠে আমাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। কিন্তু শুধুই মাঠে থাকে সেটা। মাঠের বাইরে যায় না।
তারপর মেসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই মওসুমে শুরুতে বার্সেলোনায় বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা গেল। যেমন আনসু ফাতি। তার কাছে থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?
এই প্রশ্নের জবাবে মেসি বলেন, ওর পাশে থাকার চেষ্টা করি। অসাধারণ ফুটবলার ফাতি। সফল হতে যা যা লাগে, সবই আছে ওর মধ্যে। তবে সব সময় নিজের অতীতের কথা ভেবে ওকে বিচার করি। আসলে ছেলেটাকে তৈরি হতে সময় দিতে হবে। আমার শুরুর সময়ে সিনিয়ররা একই ভাবে ভাবত। তাই খুব স্বচ্ছন্দে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পেরেছি। কখনও নিজের উপরে চাপ সৃষ্টি করিনি। মনে রাখবেন, ওর বয়স মাত্র ১৬। আশা করব ছেলেটা ফুটবল উপভোগ করবে। সেরা হয়ে ওঠার সব গুণ ফাতির মধ্যে আছে।
রোনালদিনহোর কথা স্মরণ করিয়ে মেসিকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে আপনার শুরুর দিনগুলোয় রোনালদিনহোর ব্যবহারের অর্থ এখন বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই?
মেসি জানান, রোনালদিনহো আর তখনকার কোচ রাইকার্ড (ফ্রাঙ্ক), দু’জনের কথাই বলব। অবশ্য এক অর্থে পুরো দলটাই। তখন সবাই কোন না কোন ভাবে আমাকে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে কোচ। রাইকার্ড আমাকে প্রথম দলে না রাখলে খুব বিরক্ত হতাম (হেসে)। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি উনি ঠিকই করতেন। চিরকাল তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। সেটা তাঁকে আমি বলেছিও। যেভাবে কোচ হিসেবে রাইকার্ড আমাকে ব্যবহার করেছেন, তা আমার ফুটবল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।
তারপর মেসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনারও কী কোচ হওয়ার কোন ইচ্ছে আছে?
মেসি বলেন, এখনই এ নিয়ে কিছু বলা কঠিন। শেষ পর্যন্ত কী হবে কেউ বলতে পারে না। আর ওদের দেখে আমার শুধু ছোটদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে তেমন সম্ভাবনাও দেখছি না। হতে পারে কয়েক বছর পরে সম্ভাবনা সত্যিই তৈরি হল। কিন্তু এখন এর বেশি বলতে পারছি না।
ম্যারাডোনাকে নিয়ে মেসির কাছে প্রশ্ন রাখা হলো- নতুন ভাবে দিয়াগো ম্যারাডোনার কোচিং শুরু করা নিয়ে আপনার কী ভাবনা?
মেসি বলেন, আর্জেন্টিনায় দিয়াগোর কোচিং শুরু করায় আমি খুব খুশি হয়েছি। জাতীয় দলে ওর কোচিংয়েও খেলেছি। কাজটা সত্যি দিয়াগো উপভোগ করে। আর্জেন্টিনায় ফিরে তাঁর কোচিং শুরু করাটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। ওখানেই তো তাঁকে সবচেয়ে বেশি করা দরকার।
সবশেষে মেসির প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ফুটবল জীবন কি আর্জেন্টিনায় শেষ করার কথা ভাবছেন?
আনন্দের সঙ্গে মেসি বললেন, অবশ্যই, ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল নিউওয়েলসের জার্সি পরে খেলার। কিন্তু লা মাসিয়ায় চলে যাই। তবে কবে সে স্বপ্ন সত্যি হবে, নিজেও জানি না। আসলে এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত নানা ব্যাপার নিয়ে ডুবে আছি।
এএইচ/