বিসিবি নিশ্চুপ
আশরাফুল নিষিদ্ধ হলে, লোকমান কেন নয়?
প্রকাশিত : ১৬:০১, ১ অক্টোবর ২০১৯
ঘটনা ২০১৩ সালের। বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ম্যাচ পাতানোর খবর প্রচারের পরই প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই সবধরণের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন মোহাম্মাদ আশরাফুল। তখন আইসিসির তদন্তে সময় না দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই বহিষ্কার করা হয় তাকে।
সেসময় আজকের বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনাল কবে সিদ্ধান্ত জানাবে তা আমরা জানিনা। তাই বলে বোর্ড বসে থাকবে না। বোর্ড তার মত করে সিদ্ধান্ত নেবে। বোর্ডের ওই আপোসহীন সিদ্ধান্তকে তখন স্বাগত জানিয়েছিল দেশের ক্রিকেটভক্তরা। যদিও পরবর্তীতে আশরাফুলের স্বীকারোক্তি ও ট্রাইব্যুনালের বিচারের ৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন দেশের এ সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান।
অথচ, ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা যখন টাকা পাচার ও অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক, এমনকি হাতকড়া পর্যন্ত যাকে পড়ানো হলো, ঠিক তখন সুর পাল্টালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।
ক্যাসিনো ব্যবসার পাশাপাশি বাসায় মাদক রাখা ও ৪১ কোটি টাকা পাচারের দায়ে বিসিবির পরিচালক লোকমান এখন দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে আছেন।
লোকমানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবি প্রধানের বক্তব্য পুরোটাই বিপরীত। বলেন, লোকমান আমার বন্ধু। তাকে আমি চিনি। আমি যে লোকমানকে চিনি সে জীবনে মদ খায় নাই, জুয়া খেলে নাই। এটা যেমন সত্যি, আবার সে যে ক্যাসিনোর জন্য (ক্লাবের কক্ষ) ভাড়া দিয়েছে- এটাও তো সত্যি। কাজেই অস্বীকার করার তো কোনো পথ নাই।
তিনি বলেন, লোকমান যদি কোনো অপরাধ করে থাকে এবং তা যদি প্রমাণ হয়, তাহলে বোর্ড অবশ্যই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তার শাস্তির ব্যাপারে আদালতে লোকমানের অপরাধ প্রমাণের অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানান তিনি।
অথচ বিসিবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের প্রধানও এই লোকমান। বিসিবির পরিকল্পনাধীন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির পাঁচ সদস্যের একজন তিনি। যেখানে বাজেট ১০০ কোটি টাকা। তার মানে কারাগারে থেকেও সকল কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর করবেন লোকমান।
তাইতো কোটি ক্রিকেটভক্তের মনে একটাই প্রশ্ন, আইন যদি সবার জন্য সমান হয়ে থাকে, তাহলে ভুলের জন্য আশরাফুল শাস্তি পেলে, একই ধরণের অপরাধে কেন লোকমানকে পাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর লোকমানকে ঢাকার মনিপুরীপাড়ার একটি বাসা থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় তার বাসা থেকে ৪ লিটার মদও উদ্ধার করা হয়। এর আগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো সামগ্রী উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
র্যাবের দাবি, এ ক্লাব থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা পেতেন লোকমান। গত দুই বছরে এ ক্লাব থেকে ৪১ কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। এই টাকার প্রায় পুরোটাই পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। যেখানে তার ছেলেও থাকেন। এজন্য প্রায় সময় তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যেতেন।
এদিকে লোকমানের অর্থ পাচারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ক্লাবের জায়গা ভাড়া দিয়েছিলেন ক্যাসিনো চালানোর জন্য। আর ভাড়া নিয়েছিলেন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। লোকমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) পরিচালক।
১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া যখন বিরোধীদলীয় নেতা, তখন তার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন এই লোকমান। এখন তিনি বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসানের ঘনিষ্ঠ। বিসিবির ফ্যাসিলিটিজ বিভাগেরও প্রধান লোকমান।
১৯৯৩ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন লোকমান। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কারণে ২০০৮ সালে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
লোকমান ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে মোহামেডান ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর হাত ধরে। মোহামেডান ক্লাব নিয়েই মোসাদ্দেক আলীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। দ্রুতই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান লোকমান। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ২০১১ সালে লিমিটেড কোম্পানি হলে তিনি তার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হন। এরপর ২০১৩ সালেও তিনি একই পদে নির্বাচিত হন। এরপর আর নির্বাচন হয়নি। বার্ষিক সাধারণ সভাও হয়নি। অলিখিতভাবে তিনিই ক্লাব চালাচ্ছিলেন।
আই/