এক দ্বিশতকেই চুরমার যত রেকর্ড
প্রকাশিত : ১৭:৩৫, ১১ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২২:৫৭, ১১ অক্টোবর ২০১৯
এবার আর সেঞ্চুরি পাননি রোহিত শর্মা। তবে তার অভাব ঘুচিয়ে দিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। পুনে টেস্টের প্রথম ইনিংসে মায়াঙ্কের পর তিন অংক ছুঁয়েছেন তিনিও। যাকে ডাবলে রূপদান করেন এই ব্যাটিং দানব। তুলে নেন ক্যারিয়ারের সপ্তম দ্বিশতক।
এর আগের সাত ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন গত বছরের ডিসেম্বরে। অবশেষে কোহলির দীর্ঘ এই সেঞ্চুরি খরা কাটল। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ২৬তম টেস্ট সেঞ্চুরির সঙ্গে ভারতের ব্যাটিং দানব তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম ডাবল সেঞ্চুরিও।
আর এ ইনিংস খেলার পথে কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানেরও এক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দর শেবাগকে পেছনে ফেলে ভারতের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নিলেন বিরাট কোহলি। ছয়টি করে দ্বিশতক নিয়ে এতদিন যৌথভাবে তালিকার শীর্ষে ছিলেন শচীন ও শেবাগ।
এদিকে পুনেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে কোহলির ৫০তম টেস্ট। ভারতীয় ক্রিকেটে এর চেয়ে বেশি টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন একমাত্র মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সাবেক ভারত অধিনায়ক দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৬০টি টেস্টে। কোহলি পুনে টেস্টে সৌরভ গাঙ্গুলীর ৪৯ টেস্টে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ডকেও টপকে গেছেন এদিন। আর সেই টেস্টেই ক্যারিয়ারের ২৬তম সেঞ্চুরি এলো কোহলির ব্যাট থেকে।
৬৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করা কোহলি শুক্রবার সেঞ্চুরি তুলে নেন ১৭৩ বলে। আর সেঞ্চুরি থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে খেলেন আরও ১২২ বল। সেনুরান মুথুসামির বল স্কয়ার লেগে ঠেলে দুটি রান নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কোহলি। একইসঙ্গে স্পর্শ করেন ৭০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক।
ক্যারিয়ারের প্রথম ৪১ টেস্টের ৭২ ইনিংসে একটিও ডাবল সেঞ্চুরি ছিল না কোহলির। এরপরের ৪০ টেস্টের ৬৬ ইনিংসেই করলেন সাতটি।
যদিও সামগ্রিকভাবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডে অবশ্য এখনও অনেকটা পিছিয়ে কোহলি। ১২টি ডাবল নিয়ে রেকর্ডের চূড়ায় আছেন সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যান।
১১ সেঞ্চুরি নিয়ে ব্র্যাডম্যানের পরের স্থানটি সাবেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারার। ৯টি ডাবল সেঞ্চুরি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার। কোহলির পাশাপাশি সাতটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ড ও শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে।
দ্রুততম ৭০০০ রানের রেকর্ডেও যৌথভাবে চতুর্থ কোহলি। তিনি এই মাইলফলকে পৌঁছেছেন ১৩৮ ইনিংসে। ১৩১ ইনিংসে ৭০০০ রান পূর্ণ করেছিলেন হ্যামন্ড, গত ৭৩ বছর ধরে রেকর্ডটি তার দখলে। ১৩৪ ইনিংসে ৭০০০ ছুঁয়েছিলেন শেবাগ, টেন্ডুলকারের লেগেছিল ১৩৬ ইনিংস।
কোহলির মতোই ১৩৮ ইনিংসে এই মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রেট স্যার ভিভ রিচার্ডস ও সাঙ্গাকারা।
এদিকে, অধিনায়ক হিসেবে ৩০ বছর বয়সি কোহলির এটা ১৯তম টেস্ট সেঞ্চুরি। একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের রেকর্ডও স্পর্শ করলেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে পন্টিংও ১৯ সেঞ্চুরি করেছিলেন। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে ২৫টি সেঞ্চুরি রয়েছে স্মিথের।
এই সেঞ্চুরির সঙ্গে সঙ্গে আট টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ও বাইরে সেঞ্চুরি করে ফেললেন তিনি। এর আগে ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল না তার। একইসঙ্গে, ভারতীয়দের মধ্যে পঞ্চাশকে একশো রানে পরিণত করার কনভার্সন রেটের বিচারে শীর্ষে চলে এলেন তিনি। কোহলির কনভার্সন রেট ৫৩.১ শতাংশ। সাবেক ভারত অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের কনভার্সন রেট ছিল ৫২.১ শতাংশ। বিশ্বক্রিকেটে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের কনভার্সন রেট সবচেয়ে বেশি- ৬৯ শতাংশ।
তবে একটি রেকর্ডে অবশ্য স্যার ডনকেও টপকে গেছেন কোহলি। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে মোট ৮ বার দেড়শ ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। শুক্রবার পুনেতে অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে ৯ বার দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন কোহলি। তবে অধিনায়ক হিসেবে স্যার ব্র্যাডম্যানের এই রেকর্ড গড়তে সময় লেগেছিল ২৪ টেস্টে। আর অধিনায়ক হিসেবে কোহলির লেগেছে ৫০ টেস্টে। এজন্যই ব্যাটিং সাম্রাজ্যে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান অনন্য এক নাম।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পুনে টেস্টে এদিন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ২৫৪ রানের কাব্যিক এক ইনিংস খেলেছেন কোহলি। অধিনায়কের সঙ্গে দুর্দান্তভাবে তাল মিলিয়ে গেলেন রবীন্দ্র জাদেজা (৯১), মায়াঙ্ক আগারওয়াল (১০৮) ও আজিঙ্কা রাহানে (৫৯)। সব মিলিয়ে পুনেতে রানের পাহাড়ই গড়েছে ভারত। ৫ উইকেটে ৬০১ রান তুলে ইনিংস ষোষণা করেছে স্বাগতিকরা।
কোহলির এমন রেকর্ডময় দিনে বেশ উজ্জলতা ছড়ালেন ভারতীয় বোলাররাও। ভারতের ইনিংস ঘোষণার পর এদিন শেষ বিকেলে ১৫ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এই সময়েই সফরকারীদের তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন ভারতের দুই পেসার উমেশ যাদব (দুটি) ও মোহাম্মদ শামি (১টি)।
যাতে দ্বিতীয় দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৩৬/৩। থিউনিস ডি ব্রুইন ২০ রানে এবং এনরিখ নোরজে ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
এনএস/