মাশরাফিকে টেক্কা দিয়ে যেভাবে নেতা হলেন সাকিব
প্রকাশিত : ২৩:৫৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
সাকিব ও মাশরাফি
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করার পর দেশের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ঘটল ধর্মঘটের ঘটনা। যে ধর্মঘটে টানা তিনটি দিন অচল হয়ে পড়েছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। পরে গত ২৩ অক্টোবর (বুধবার) বিসিবির সঙ্গে বৈঠকে একমত হয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের এ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট অধিনায়ক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মাশরাফির বদলে সাকিব কেন ক্রিকেটারদের নেতৃত্বে? মাশরাফিকেই কেন কোনওকিছু না জানিয়ে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল?
জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ক্রিকেটারদের ওই ধর্মঘটের বীজ বপন হয়েছিল আরও আগে। বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে সাকিবের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তিন দিন পর বিসিবি সভাপতি একে অবৈধ বলেছিলেন। এমনকি তিনি আগামী আসর থেকে বিপিএলের নতুন চার বছরের চক্রের ঘোষণা করেছিলেন, যাতে একই সমস্যা পড়েন তামিম-মুশফি-রিয়াদরা। এর কিছুদিন পর বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন পাপন।
যার প্রেক্ষিতে ক্রিকেটারদের মাঝে তৈরি হয় টুকরো টুকরো ক্ষভ। আর সেই সব ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে তৈরি হয় ১১ দফা দাবি। তবে এই দাবিদাওয়া নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলা এবং বিসিবির সঙ্গে দেন-দরবার করার জন্য ক্রিকেটারদের প্রয়োজন ছিল একজন নেতার। যিনি নেতৃত্ব দিবেন সামনে থেকে। যে কাজটিই মূলত করে থাকেন এক মাশরাফি।
এতদিন ধরে মাঠ ও মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের একমাত্র নেতা ছিলেন দেশের জনপ্রিয়তম অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি মূলত ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিসিবির সঙ্গে দর-কষাকষি করতেন এবং সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এসব নিয়ে মিডিয়ায় খুব একটা মাতামাতি হতো না; কারণ কাজগুলো চুপচাপ সেরে ফেলতেন ম্যাশ। ২০১৪ সালে মাশরাফি ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে এভাবেই চলছিল বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের দর-কষাকষি। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সকলের পছন্দের অধিনায়ক। সেই মাশরাফিকেই এবার কেন ভুলে গেলেন ক্রিকেটাররা?
কারণ, ওয়ানডে বাদে বাকি দুই ফরম্যাটেই যে নেতৃত্বে আছেন সাকিব। আর ক্রিকেট মাঠ এবং মাঠের বাইরে সাকিব আর মাশরাফির নেতৃত্ব গুণ যে ভিন্ন ধরণের।
এদিকে, ক্রিকেটারদের ১১+২ মোট ১৩ দফা দাবির প্রতিটিতে ছিল দেশের ক্রিকেট দুর্বলতার কথা। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্রিকেটাররা। তারা প্রায় সবাই চেয়েছিলেন, ভেতরের এই ক্ষোভের কথা মিডিয়া জানুক। এরপর মিডিয়ার মাধ্যমে এসব নৈরাজ্যের খবর জেনে যাক ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে মাশরাফি নেতৃত্বে থাকলে আগের মতোই নীরবে বিসিবির সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলতে পারেন- এমন ভাবনা থেকে তাকে সামনে আনেনি আন্দোলনকারীরা। সেইসঙ্গে মাশরাফি এখন জাতীয় সংসদের সদস্য (এমপি)। বর্তমানে তার এই অবস্থানের কারণে তিনি বিসিবির সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারতেন না বলেই ধরে নিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা।
যে কারণে এ আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন মাশরাফি। এ ব্যাপারে কিছু জানানোই হয়নি তাকে। তবুও যে একজন নেতার দরকার ছিল। সাকিবসহ মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিম সব সিনিয়ররাই যদিও এই আন্দোলনে ছিলেন। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ক্রিকেটার ছিলেন একমাত্র সাকিব। একইসঙ্গে দুই ফরম্যাটে জাতীয় দলের অধিনায়কও যে তিনি। পাশাপাশি সামনে থেকে সাহসী নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে সাকিবের আছে যথেষ্ট সুনাম। যে কারণে তাকেই এগিয়ে দেয়া হয় নেতৃত্বে।
এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ধুন্ধুমার পারফর্ম করে যাওয়া সাকিবের জন্য আন্দোলনের নেতা হওয়াটাই সবচেয়ে সহজ ছিল। এমনকি এই মুহূর্তে তাকে শাস্তি দেয়াটাও বিসিবির জন্য কঠিন। তাই সব মিলিয়ে মাশরাফিকে টেক্কা দিয়ে সাকিবই হয়ে গেলেন নেতা।
এভাবেই ক্রিকেটারদের নেতা হয়ে ঐতিহাসিক ২১ অক্টোবর দুটি দাবি উত্থাপন করে ধর্মঘট ঘোষণা করেন সাকিব। বাকী দাবিগুলো একে একে পড়ে শোনান অন্যরা। যার প্রেক্ষিতে ২৩ অক্টোবর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়ে আসেন ক্রিকেটাররা। বক্তব্য রাখেন সাকিবও। সেদিন থেকেই মূলত সাকিবের নেতৃত্ব নজড় কাড়ে আলাদাভাবে।
এরপর তার নেতৃত্বেই বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনায় বসেন ক্রিকেটাররা। মিটিং শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন সাকিব। সংবাদমাধ্যমের সামনে তার পরিমিত বাক্যব্যয়, ধীরস্থির মনোভাব সকলের প্রশংসা কুড়ায়।
এনএস/