সাকিবকে ২ বছর নিষিদ্ধ করলো আইসিসি
প্রকাশিত : ১৮:৫৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২১:০৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

যেমনটা সন্দেহ করা হয়েছিল, শাস্তিটা হলো তার চেয়েও বেশি! ১৮ মাস নয়, সাকিব আল হাসানকে পুরো ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলো আইসিসি। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করলেও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আইসিসি কিংবা বিসিবিকে না জানানোর কারণেই এই শাস্তি আরোপ করা হলো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নিজস্ব ওয়েবসাইটে এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি।
এতে আইসিসির এন্টি-করাপশন কোডের অধীনে সাকিবকে তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়ায় আইসিসি সাকিবকে প্রদেয় ওই শাস্তি থেকে এক বছর স্থগিত করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
দুই বছর আগে অজ্ঞাত এক বাজিকরের কাছ থেকে পাওয়া ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব সুবোধ বালকের মতই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব। তবে বিষয়টি তিনি বোর্ড বা আইসিসি- কাউকেই জানাননি। এটিই আইসিসির দৃষ্টিতে অপরাধ।
এই অপরাধে সাকিবকে অভিযুক্ত করে আইসিসি। অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। সাকিব ভুলও স্বীকার করেছেন। তবে ভুল স্বীকার করে নিলেও তাকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যদিও এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন সাকিব।
আইসিসির চোখে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি অবহিত না করাও অপরাধ। সেই অপরাধে যে কোনও ক্রিকেটার বা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সব ধরনের ক্রিকেটে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পেতে পারেন।
সাকিব নিজের অপরাধ বা ভুল স্বীকার করে নেয়ায় তাকে ২ বছরের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি প্রয়োগ হবে ঘোষণার দিন থেকে অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ থেকে থেকে। মেয়াদ অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর।
তবে সাকিব আপিল করলে এবং সন্তোষজনক বক্তব্য উপস্থাপন করলে এবং আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী নির্ধারিত কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে শাস্তির মাত্রা ১ বছর কমবে। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে ১ বছরের।
আর এই সময়ে সাকিব কোনও ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। বাংলাদেশ জাতীয় দল কিংবা ঘরোয়া বা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনও দলের হয়েও খেলতে পারবেন না তিনি।
আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালার ২.৪.৪ ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি আইসিসির অ্যান্টি করাপশন কোডের অধীন কোনো দুর্নীতিতে জড়ানোর প্রস্তাব পান, সেক্ষেত্রে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণী আইসিসিকে অনতিবিলম্বে জানাতে ব্যর্থ হলে সর্বনিম্ন ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা বহনের শাস্তি হতে পারে।
সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, “আমি যে খেলাটি পছন্দ করি তাতে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমি অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখিত, তবে পদ্ধতির প্রতিবেদন না দেয়ার জন্য আমি আমার শাস্তিকে পুরোপুরি মেনে নিয়েছি। আইসিসি ও এসিইউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় অংশ নিতে খেলোয়াড়দের উপর নির্ভরশীল এবং আমি এ ক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব পালন করিনি।”
সাকিব আরও বলেন, “বিশ্বের বেশিরভাগ খেলোয়াড় এবং অনুরাগীর মতো আমিও চাই ক্রিকেট একটি দুর্নীতিমুক্ত খেলা হোক এবং আমি আইসিসি এসিইউ দলের সাথে কাজ করার প্রত্যাশায় রয়েছি যাতে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা সমর্থন করে এবং তরুণ খেলোয়াড়রা যাতে একই ভুল না করে, যেমনটা আমি করেছি।”
আইসিসি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনটি ম্যাচে সাকিবের কাছে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে আইসিসি এবং সে সব বিষয়ে তারা প্রমাণও সংগ্রহ করেছে।
আকসুর ধারা ২.৪.৪ আর্টিকেলের মধ্যেই তিনটি অপরাধ করেছিলেন সাকিব। যেগুলো হচ্ছে-
১. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাংলাদেশের যে ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়েছিল কিংবা ২০১৮ আইপিএলে প্রথম ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে কোনো কিছুই জানাননি।
২. একই ধারার অধীনে অপরাধ : ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের সময়ই আরো একটি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসিকে অবহিত করেননি।
৩. ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসি কিংবা সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন সংস্থাকে কিছুই জানাননি।
এনএস/