নিষিদ্ধ সাকিব, ক্ষুব্ধ ভক্তরা
প্রকাশিত : ১৬:১৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৬:১৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৯
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। হঠাৎ করে সাকিবের নিষিদ্ধের খবরে কাঁদছে সারাদেশ, অবাক বিশ্ব। অসংখ্য ক্রিকেটানুরাগীদের মনে ছুঁয়ে গেছে কষ্টের ছোপ। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন সাকিবকে একবছর আর মাঠে দেখা যাবে না।
সাকিবের নিষিদ্ধে ফুঁসে উঠেছে গোটা দেশ। নিষিদ্ধের খবরের পরপরই মিরপুর শেরে-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে বিক্ষোভ করে সাকিবভক্তরা।
এ সময় তাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বিপক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ‘সাকিববিহীন ক্রিকেট মানি না মানবো না’এমন স্লোগান শোনা যায়। অনেক ভক্তদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘No Shakib No cricke’।
এছাড়াও মঙ্গলবার রাতে নিজ জেলা মাগুরার ক্রিকেটপ্রেমীরা সাকিবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় মিছিলকারীরা ‘নো সাকিব, নো ক্রিকেট’বলে স্লোগান দেন। মিছিল থেকে মাগুরাবাসী সাকিবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এদিকে সাকিবকে নিষিদ্ধের একদিন পর আজ বুধবার বিক্ষোভ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ক্রিকেট নিয়ে ষড়যন্ত্র ও বিসিবির সভাপতি পাপনকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে মর্যাদার সঙ্গে তার পরিচয় জানান দিচ্ছে। সে সময়ে আইসিসি ও বিসিবি সিদ্ধান্ত গুলো দেশের ক্রিকেট হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সাকিব বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। তাকে দমিয়ে রাখার জন্য চলছে নানা ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা কখনও মেনে নেওয়া হবে না। ক্রিকেট বোর্ডকে দলীয়করণ ও অপরাজনীতি মুক্ত করতে হবে।
এ সময় ক্রিকেটপ্রেমীরা তিনটি দাবি জানিয়ে বলেন, সাকিবের প্রতি ষড়যন্ত্রমূলক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে খেলার মাঠে ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়ার খবর। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে সাকিবের পাশে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই। শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতা, খেলোযাড়, মিডিয়াকর্মী থেকে শুরু করে সবাই সাকিবের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন। আগামী দিনে শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার সাহস যোগাচ্ছেন সাকিবভক্তরা।
সাকিবের এমন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে খেলে আসা সহপাঠীরাও সমবেদনা জানাচ্ছেন।
সাকিবের এমন নিষেধাজ্ঞায় ভেঙে পড়েছেন জাতীয় দলের সতীর্থরা। তারা অনেকেই নিজেদের ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
ফেসবুকে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা লিখেন, ‘তার (সাকিব) নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান...!!!
দীর্ঘ ১৩ বছরের সহযোদ্ধার আজকের ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু বিনিদ্র রাত কাটবে আমার। তবে কিছুদিন পর এটা ভেবেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব যে, তার নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান।’
খেলোয়াড়দের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তামিম তার ফেসুবকে লেখেন, ‘আগামী ১২ মাস তোমাকে আমাদের সঙ্গে পাবো না, এটা কল্পনাও করতে পারছি না। তবে সাকিব আল হাসান, আমি বিশ্বাস করি তুমি সেরা হয়েই ফিরে আসবে। আগামী বছরের এই দিনেই তুমি ফিরবে। আমরা সবাই একসঙ্গে অনুশীলন ও খেলবো।’
সতীর্থ মুশফিকুর রহিম তার ফেসবুকে লেখেন, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছি। তোকে ছাড়া মাঠে খেলতে হবে, ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আশা করছি তুই চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারের মতোই ফিরবি। তোর সঙ্গে সবসময় আমার সমর্থন আছে। সারা বাংলাদেশ তোর সঙ্গে আছে। শক্ত থাকবি ইনশাআল্লাহ্।’
এদিকে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তার ভেরফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘এটা শুনতেই অবাক লাগে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ। তিনি কোনও ফিক্সিংয়ের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না। এই খেলার কিংবদন্তি তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তি অবশ্যই এর থেকে ভালো কিছু পাওনা। শক্ত হও, আমার ভাই সাকিব আল হাসান। আশা করি খুব দ্রুত আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে তুমি।’
কেউ কেউ মনে করছেন, ষড়যন্ত্র করে হঠাৎ সাকিবকে এভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক লেখালেখিও হচ্ছে। অনেকের ধারণা, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়া বা বাংলাদেশের শক্তিশালী ক্রিকেটকে ভেঙে দিতে হতে পারে এই ষড়যন্ত্র। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন ও নানা ইস্যু নিয়েও হতে পারে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
সাকিবের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে অনেকেই আবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে দোষারোপ করছেন। অনেকটা বলা যায়, এই সন্দেহের তীর পাপনের দিকে। গত দুই বছর আগের একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ঘটনা নিয়ে এখন কেন এতো হইচই। এতোদিন কেন প্রকাশ করা হলো না। সাকিবকে ফাঁসাতেই ওই ঘটনা এখন তুলে ধরা হচ্ছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সব ধরনের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানকে দুই বছর নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে তিনি দায় স্বীকার করায় এর মধ্যে এক বছর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়েছে।
গত দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেটি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে গোপন করেন তিনি।
বিষয়টি পরে আইসিসি জানতে পারে। আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কল রেকর্ড ট্র্যাকিং করে এ ব্যাপারে তারা তথ্য উদ্ধার করে। ওই জুয়াড়ি আইসিসির কালো তালিকায় থাকাদের একজন। বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর সম্প্রতি সাকিবের সঙ্গেও কথা বলেন আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট (আকসু) প্রতিনিধি।