বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ অধ্যায় কী শেষ!
প্রকাশিত : ১৮:২১, ৭ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:১৯, ১১ নভেম্বর ২০১৯
টাইগার পঞ্চপাণ্ডব সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও তামিম
ধর্মঘট, পারিবারিক কারণে তামিম ইকবালের ছুটি, সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় বেশ কোণঠাসা বাংলাদেশ ক্রিকেট। আর এমনই এক বাংলাদেশ দল শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম তো বটেই সব মিলিয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় দিয়ে পুরো পরিস্থিতিতে একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
যদিও ভারতের দলেও বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। ইনজুরির কারণে নেই জসপ্রিত বুমরাহ, নেই মহেন্দ্র সিং ধোনিও। তবে বাংলাদেশ দলে সাকিব ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি ছিল পরিকল্পনার বাইরে। সঙ্গে নেই সাইফুদ্দিনের মত আরেক লড়াকু টাইগার।
এতোদিন যাদের থাকা না থাকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা ছিল, তাদের ছাপিয়ে তরুণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সিরিজ জিতে নিতে পারে কি না এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
২০০৮ সাল থেকেই মাশরাফী বিন মোর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- এই পাচঁজন ক্রিকেটারকে একসাথে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়।
তাদের বাড়তি বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ে দায়িত্ব। একটা সময় তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মানদন্ডে সেরা পাঁচ ক্রিকেটার বিবেচিত হতে থাকেন।
বিশেষ করে ২০১৫ বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুটো শতক হাঁকানোর পর থেকে এই পাঁচজনকে নিয়ে ভক্তরা ও বিশ্লেষকরা ভাবতে থাকেন আলাদাভাবে। পত্র পত্রিকায় তাদেরকে 'পঞ্চপান্ডব' নামে অভিহিত করা হয়।
ভারতের মাটিতে যেহেতু বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট সিরিজ এবং এই সিরিজের ক্রিকেটীয় তাৎপর্য আছে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দলের জন্যই, তাই এই সিরিজের আগে সাকিব ও তামিম ইকবালের না থাকা একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি করে ক্রিকেট অঙ্গনে। সেটাই এক ম্যাচে মুছে দিয়ে কি একটা বার্তা দিলেন ক্রিকেটাররা?
বাংলাদেশের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস যিনি মনে করেন, এটা প্রতিটা দলের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। একদল ক্রিকেটার যখন জায়গা ছাড়ে, তখন কাউকে না কাউকে সেটা পূর্ণ করতে হয়, এটাই নিয়ম।
কিন্তু বাংলাদেশের যেসব ক্রিকেটারদের কথা বলা হচ্ছে তারা কেউই এখনও অবসরে যাননি। সেক্ষত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এটা সামাল দেয়া কতটা কঠিন ছিল।
"এমন একটা সময় আসবেই যখন এই পাঁচজন ক্রিকেটার থাকবে না, নতুনদের স্টেপ আপ করতেই হবে।"
সিনিয়রদের ছায়া থেকে বের হয়ে আসাটা অবশ্যই কঠিন, কারণ তারা অনেক বছর ধরে ভালো খেলে আসছেন।
মি: নাফীসের কাছে প্রশ্ন রাখা হয় যে, নতুন ক্রিকেটাররা যে মানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে জাতীয় দলে আসেন সেক্ষেত্রে অনেক ক্রিকেটারই ঠিক নিজের স্বস্তির জায়গা বা মনোবলটা পাননা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সেদিক থেকে এই তরুণ ক্রিকেটার যেমন- আফিফ, আমিনুল, নাইম এরা কি একটু আলাদা।
উত্তরে তিনি দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এক্ষেত্রে আসলে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটকে ছোট করা হয়, যেটা ঠিক না। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বছরের পর বছর, তারা এই মানের ক্রিকেটার হয়েছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনও না কোনও পর্যায়ে ভালো খেলেই।
শাহরিয়ার নাফিস বলেন, "ঘরোয়া ক্রিকেটকে খানিকটা ছোট করে দেখার একটা মানসিকতা থাকে, কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান ততটাও নিচু নয়, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই জাতীয় দলে আসছে এখনও। ক্রিকেটাররা অনেক বেশি নিয়োজিত এখানে, বাংলাদেশর ঘরোয়া ক্রিকেটের মান একদমই হালকা করে দেখার মতো না।"
বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিক মাকসুম আলম খান এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অনুসরণ করছেন রাজকোটে, তিনি পুরো সফর থাকবেন বলে আশা করা যায়।
তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই দৃশ্যপট বদলকে 'মশালের হাত বদল' বলে অভিহিত করছেন।
মি. খান বলেন, "ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে জেতা বাংলাদেশ দলকে পরিণত মনে হয়েছে। পঞ্চপাণ্ডব নির্ভরতার ধারণা থেকে কিছুটা হলেও সরে আসছে দল। মোসাদ্দেক-আফিফ-বিপ্লবের মতো যাদেরকে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেট তারকা ধরা হচ্ছে, তারা আসলে জয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসে যান না।"
এই উচ্ছাসে ভেসে না যাওয়া ব্যাপারটাকে একটা পেশাদারিত্বের প্রলেপ বলছেন মি. খান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসার পর থেকেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে 'ভবিষ্যৎ সাকিব আল হাসান' বলা হতো, এখন সেই খেতাবে ভাগ বসিয়েছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে মনে করা হচ্ছে সেই লেগস্পিনার যাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড খোঁজ করছে বহুদিন ধরে। নাইম শেখও তামিম ইকবালের জায়গা বেশ ধৈর্য্যের সাথে নিয়ে ব্যাট করেছেন প্রথম পরীক্ষায়। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সাথে দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফর্মে থাকা মুশফিকুর রহিম।
'পঞ্চপান্ডবের' অনুপস্থিতির বিষয়ে ভক্তরা কী বলছেন?
ক্রিকেট ভক্ত সোনিয়া আফরিন ঈশিতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, "সাকিব তামিম বিষয় না। আমি খেলা দেখতে বসলেই বাংলাদেশ দল হেরে যায়। তাই গতদিনের মত আজকেও খেলা দেখবো না। তাই আশা করা যায়, মাঠে যে বা যারাই থাকুক জিত আমাদের নিশ্চিত।"
ক্রিকেট ভক্ত ফাহিমা আহমেদ বলেন, "একসময় বাসায় বড়রা বলতেন, বাংলাদেশ ভারত বা পাকিস্তানের সাথে কীভাবে জিতবে, ওদের সব অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ওদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেশি। কিন্তু এখন সেই ধারা বদলেছে অনেক। আমরা যেমন দল নিয়েই নামি আমরা পারি।"
তিনি যোগ করেন, কিছুদিন পরই নতুন ক্রিকেটাররা আসেন চমক নিয়ে এই ব্যাপারটা দারুণ। মুশফিক বরাবরই দলে তাৎপর্যময় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। যার ফলে হেরে যাওয়ার নয় বরং কত ভালো খেলে জিতবে বাংলাদেশ সেই চিন্তাটা আসে। সূত্র-বিবিসি।
এনএস/