ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পারলেন না নাঈম-সিরিজ ভারতের

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ২৩:৩৩, ১০ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ০২:২০, ১১ নভেম্বর ২০১৯

অনবদ্য ফিফটি হাঁকিয়ে সাজঘরের পথে নাঈম

অনবদ্য ফিফটি হাঁকিয়ে সাজঘরের পথে নাঈম

ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নাগপুরে আজ ভারতের মুখোমুখি হয় টাইগাররা। যে ম্যাচে লোকেশ রাহুল আর শ্রেয়াস আয়ারের ফিফটিতে ১৭৪ রান তোলে ভারত। অর্থাৎ ইতিহাস গড়তে হলে বাংলাদশ দলকে করতে হতো ১৭৫ রান। সে লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ২ উইকেট হারালেও তরুণ নাঈমের অনবদ্য ফিফটিতে ভর করে স্বপ্ন বুনতে থাকে বাংলাদেশ।

তবে তাকে হতাশ করে সিরিজ জিতে নিল ভারত। হ্যাট্রিক করা দীপকের আগুনে বোলিংয়ে ১৪৪ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশ। যাতে ৩০ রানের জয়ে সিরিজ বগলদাবা করে ভারত। 

এদিন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নিয়ে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অনেকটা পথ পাড়ি দিলেও শেষ পর্যন্ত পারলেন না নাঈম! শুভম দুবের এক ইয়র্কারেই শেষ হয়ে যায় কোটি বাংলাদেশির দুর্লভ সে স্বপ্ন। অধরাই থেকে যায় টাইগারদের ইতিহাস গড়া জয়।

ভারতের দেয়া ১৭৫ রানের বড় রান তাড়ায় নেমে দুর্দান্ত এই ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য নিয়েই ক্রিজে আসেন মোহাম্মদ নাঈম। সবেমাত্র তিন ম্যাচ খেলতে নামা নাঈমের সেরা স্কোর যেখানে ৩৬, সেখানে এমন বড় ম্যাচে এই তরুণের কাছ থেকে বড় ইনিংস আশা করাই ছিল বাহুল্য। 

তবে আগের দুই ম্যাচেই দুর্দান্ত ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেন দীর্ঘদেহি এ বাঁহাতি ওপেনার। নিজের অভিষেক ম্যাচে ২৯ রানের ইনিংস খেলেই বুঝিয়েছিলেন অনেক কিছু। দ্বিতীয় ম্যাচেও করেন ত্রিশ পেরোনো ৩৬ রান। যাতে নিজের জাত চেনান এই ওপেনার। 

সেই ধারাবাহিকতায় আজ নাগপুরের বিদর্ভা স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে পেয়ে গেলেন নিজের প্রথম ফিফটি। মাত্র ৩৪ বলে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি হাঁকানো মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটে ভর করেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ছুটতে থাকে বাংলাদেশ। 

১৬তম ওভারে দলের রান যখন ১২৬, জয় থেকে তখনও ৪৯ রান দূরে। যা অসম্ভব কিছুই ছিল না। কিন্তু শুভম দুবের এক ইয়র্কার বুঝতে না পেরে বোল্ড হন নাঈম। দলের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাঈম যখন আউট হন, তখন তার নিজের রানও সেঞ্চুরির কাছাকাছি। যদিও নাঈমের কাছ থেকে এমন চাওয়াটা অমূলকই বটে। কেননা, অভিজ্ঞরা যেখানে ব্যর্থ, সেখানে এই তরুণের কাছ থেকে এমন কিছু চাওয়াটা নিতান্তই বেশি কিছু। 

যদিও এর অনেকটাই পূরণ করে ৮১ রান করে আউট হন নাঈম। তার ৪৮ বলেই এই অনবদ্য ইনিংসে ছিল ১০টি চারের সঙ্গে দুটি বিশাল ছক্কার মার। 

আর নাঈমের আউটের মধ্যদিয়েই শেষ হয়ে যায় টাইগারদের জয়ের সব স্বপ্ন। হ্যাট্রিকসহ মাত্র ৭ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে যে স্বপ্ন তছনছ করে দেন ভারতীয় পেসার দীপক চাহার। যার তোপে ১৪৪ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে ৩০ রানের জয় নিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় রোহিতের দল।

এর আগে এদিনও ব্যর্থ হন মুশফিক। ফেরেন শূন্য রানেই। যাতে ১১০ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় দল। তার আগে নাঈমের সঙ্গে ৯৮ রানের এক মূল্যবান জুটি গড়ে মোহাম্মদ মিঠুন ফেরেন সেই চাহারের বলেই। ফেরার আগে ২৯ বলে দুই চার এক ছয়ে ২৭ রান করেন এই ডানহাতি। এরপরের বলেই শুভম দুবের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সবাইকে হতাশ করেন মুশফিক।

এর আগে জবাব দিতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই পরপর দুই বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। দুই চারে লিটন ৮ বল থেকে ৯ রান করে লং লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেও সৌম্য ফেরেন প্রথম বলেই। ফলে দলীয় মাত্র ১২ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা।

আর এ দুইজনকে তুলে নিয়ে হ্যাট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন ভারতীয় পেসার দীপক চাহার। তবে তার সে আশায় এ যাত্রায় পানি ঢালেন এ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মিঠুন। যদিও শেষ পর্যন্ত হ্যাট্রিক আদায় করে নিয়েই মাত্র ৭ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে রেকর্ড গড়েন এই পেসার। হন ম্যাচের সঙ্গে সঙ্গে সিরিজ সেরাও। 

নাগপুরে সিরিজ নিষ্পত্তির এ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দলের দুই ওপেনারকে হারায় ভারত। শফিউলের জোড়া আঘাতের পরও লোকেশ রাহুলের ফিফটিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। তবে আল-আমিনের হানায় স্তব্ধতা নামে ভারত শিবিরে। পরে ফিফটি পান শ্রেয়াস আয়ারও। মূলত এ দুজনের জোড়া ফিফটিতেই ফাইনালে রূপ নেয়া ম্যাচে ওই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় স্বাগতিক দল।  

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আল-আমিনের প্রথম ওভারেই অস্বস্তিতে ভোগে ভারত। মাত্র তিন রান তুলতে পারে রোহিত-শিখর। পরের ওভারেও সে চাপ অব্যাহত রাখেন শফিউল। যার প্রেক্ষিতে চতুর্থ বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন ৬ বল থেকে ২ রান করতে সমর্থ হওয়া আগের ম্যাচের নায়ক রোহিত শর্মা। যাতে মেডেন উইকেট-ওভার উপহার দেন শফিউল। 

এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে এসে শিখরকেও ফেরান শফিউল। ফেরার আগে ১৬ বলে চার বাউন্ডারিতে ১৯ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। অবশ্য এরপরেই আরেকটি উইকেট পেতে পারতেন এই টাইগার পেসার। তবে পয়েন্টে ওঠা আয়ারের সহজ সে ক্যাচ রাখতে পারেননি আমিনুল বিপ্লব। যাতে হতাশ হতে হয় গোটা বাংলাদেশকে। 

যার খেসারৎ ঠিকই দিতে হয় বাংলাদেশ দলকে। শূন্য রানেই জীবন পাওয়া আয়ার পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ২৭ বলেই তুলে নেন ঝোড়ো ফিফটি। যদিও ৬২ রানেই ফিরতে হয় তাকে। ইনিংসের ১৭তম ওভারে পার্টটাইমার সৌম্যের শিকার হয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য ওই ওভারের প্রথম বলেই ঋষভ পান্টকে (৬) বোল্ড করে ফেরান তিনি। 

পরে এ ম্যাচের মধ্যদিয়ে সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া মানিশ পান্ডের ব্যাটে চড়ে ১৭৭ রানের সংগ্রহ গড়ে ভারত। পাঁচ উইকেট হারিয়ে। ১৩ বল থেকে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন মানিশ। সঙ্গে ৮ বলে ৯ রান নিয়ে থাকেন দুবে। 

এর আগে ফিফটি করা লোকেশ রাহুল ফেরেন দলীয় ৯৪ রানে। তার আগে আয়ারের সঙ্গে গড়েন মূল্যবান ৫৯ রানের জুটি। লং-অনে লিটনের হাতে ধরা পড়ার আগে ৩৫ বলে সাত চারে তিনিও করেন ৫২ রান। 

এদিন সিরিজ জয়ের এ ম্যাচে যেন একেবারেই ধারহীন ছিলেন মোস্তাফিজ, আমিনুল ও আফিফরা। সেইসঙ্গে হাত ফসকে যাওয়া ফিল্ডিংও ছিল চোখে পড়ার মত। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে এমন করুণ অবস্থা নিয়ে কোন দলের পক্ষেই জয় পাওয়াটা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। ৩০ রানে হেরে খুইয়েছে সিরিজও। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি