‘রক্ষণাত্মক’ কৌশলে প্রশ্নবিদ্ধ দল, ভারতের রান পাহাড়
প্রকাশিত : ১৮:৫১, ১৫ নভেম্বর ২০১৯
আবু জায়েদ রাহী
বিরাট কোহলিকে শূন্য রানে আউট করার পরই ভারতীয়দের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন আবু জায়েদ। ইন্দোর টেস্টের হতাশার দিনে বাংলাদেশের হয়ে মুখ উজ্জ্বল করা একমাত্র ক্রিকেতারই যে এই ২৬ বছর বয়সী পেসার। স্বাগতিকদের পড়া ছয় উইকেটের ৪টিই যে গেছে তার ঝুলিতে!
শুধুই ইন্দোর টেস্ট নয়, গত বছরের জুনে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে আবু জায়েদই দলের একমাত্র পেসার, উইকেট শিকারে যিনি কিছুটা হলেও সফল। গত দেড় বছরে মাত্র ৬ টেস্টে উইকেট পেয়েছেন ১৫টি। আর এ সময়ে বাকি পেসারদের সম্মিলিত উইকেট সংখ্যা ৭টি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রোহিত শর্মাকে ৬ রানে ফিরিয়ে শুক্রবার সকালেই জোড়া আঘাত হানেন ভারতীয় শিবিরে। কোহলিকে তো রানই করতে দেননি। তার আগেই আউট করেছেন ৫৩ রান করা চেতেশ্বর পূজারাকেও। সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকা আজিঙ্কা রাহানেও শিকার হয়েছেন আবু জায়েদের। কাল ইমরুল কায়েস স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচটা না ছাড়লে ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে ফেরাতে পারতেন ৩২ রানেই।
বারবার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশি দূর এগোতে না পারলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে সে ভুল করেন না, দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তরুণ আগারওয়াল। ভারতীয় ওপেনার যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণই আফসোসে পুড়েছেন ইমরুল—কী করেছি কাল!
আগারওয়াল যখন ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ইমরুলের ক্যাচ হাতছাড়া নিয়ে খানিকটা রসিকতাও করলেন দুই ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে আর সুনীল গাভাস্কার।
যাইহোক, শুক্রবার মায়াঙ্কের ডাবল সেঞ্চুরি, শেষ বিকেলে ফিফটি তুলে নেয়া রবীন্দ্র জাদেজা আর উমেশ যাদবের মারকুটে ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান সংগ্রহ করেছে ভারত। যাতে ইতিমধ্যে স্বাগতিকদের লিড গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৩।
এর আগে ভারতের ‘রান মেশিন’ কোহলিকে শূন্য রানে ফিরিয়েই আলোচনায় আসার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আবু জায়েদ তার চেয়ে বেশিই করেছেন। ভারতের চার তারকা ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন। অন্য প্রান্তের নির্বিষ বোলিংয়ের বিপরীতে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে এক জায়েদই কিছুটা চাপ তৈরি করতে পেরেছেন।
একইসঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের 'দুই পেসার তত্ত্ব' নিয়ে খেলার রক্ষণাত্মক কৌশলকে। একসময়ের স্পিন নির্ভরশীল ভারত যেখানে অনায়াসে তিন পেসার নিয়ে খেলতে পারে, সেখানে বাংলাদেশের সে ‘সাহস’ এখনও হয়নি!
গতকাল অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল বলছিলেন- সাহসের ব্যাপার নয়, তার ভান্ডারে অস্ত্র অপ্রতুল। বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন বলেন, ‘নিয়মিত চার দিন খেলার পেস বোলার আমার স্টকে কম। আর আমরা সব সময় ব্যাটিংয়ে একটু বেশি মনোযোগ দিই। এ কারণে হয়তো দুই পেসার খেলছে আমাদের একাদশে।’
টেস্টে বাংলাদেশ অধিনায়কের এ অসহায়ত্ব নতুন কী! দেশের বাইরে টেস্ট খেলতে এলেই শুধু পেসারদের কদর বাড়ে। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেভাবে পরিচর্যা করা হয় না। দেশে টেস্ট হলেও খুব একটা নয়। উপমহাদেশের বাইরের কোনো দল এলে তো কথাই নেই!
এমনকি গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বোলিং শক্তি স্পিন জেনেও বাংলাদেশ একাদশে কোনো পেসার রাখা হয়নি। দিনের পর দিন উপেক্ষিত থাকার পর হঠাৎ পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে নেমেই কি সফল হওয়া যায়? টেস্টে শুধুই স্পিননির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে ভারতীয় দল।
গত দুই বছরে পেস বোলিং আক্রমণে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পেস আক্রমণে এ বিপ্লব কবে আসবে? এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা এখনই জরুরী। তার চেয়ে জরুরী এর সম্ভাব্য উত্তরকে প্রতিষ্ঠিত করা। নয়তো এভাবেই ধুঁকে ধুঁকে মাথা খুঁটে মরবে বাংলাদেশের টেস্ট!
এনএস/