ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ এক বৈচিত্রময় দল!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১৪, ২১ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২২:১৭, ২১ নভেম্বর ২০১৯

টেস্টে টাইগার স্পিনার তাইজুলের পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর উদাযাপন

টেস্টে টাইগার স্পিনার তাইজুলের পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর উদাযাপন

বাংলাদেশের জন্য টেস্ট ক্রিকেট যেন এক ধাঁধার নাম, যেটা দেখা দেয় সেই প্রথম পরিচয়ের দিন থেকেই। সেই পরিচয় আজ থেকে উনিশ বছর আগের এক নভেম্বরে। উনিশ বছর কেটে যাওয়ার পরও মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটের রহস্যময়তার সঙ্গে বাংলাদেশের পরিচয়পর্ব এখনো শেষ হয়নি। এই ভালো তো এই খারাপ! মুহুর্তেই রং বদলায়। যেন অনিশ্চিত বৈচিত্রময় একটি দল।

মাঝখানে কিছুদিন একটু খারাপ করতেই বাংলাদেশের টেস্ট খেলার যোগ্যতা বা অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেলত ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম৷। গত কিছুদিন আর তোলে না। তবে বাংলাদেশে প্রশ্নটা এখনো বাতাসে ঘুরপাক খায়, যেমন খাচ্ছে ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর টেস্টে তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের পর থেকে। 

উপমহাদেশে প্রথম বলে ‘ঐতিহাসিক’ মর্যাদা পেয়ে যাওয়া কলকাতার দিবা-রাত্রির টেস্টের আগে তাই রোমাঞ্চের চেয়ে আশঙ্কার চোরাস্রোতই বেশি বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের শিরদাঁড়া বেয়ে। ইন্দোরে ঝকঝকে রোদেই যেখানে ভারতীয় পেসাররা বল অমন সুইং করিয়েছেন, সেখানে সন্ধ্যার পর গোলাপি বলে তারা না জানি কী করেন! বাংলাদেশের জন্য টেস্ট ক্রিকেট আবার না পরিণত হয় নিষ্ঠুরতার আরেক নাম-এ। 

টেস্ট ক্রিকেট স্বভাবগতভাবেই নিষ্ঠুর। ওভার নির্দিষ্ট থাকায় ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে অনেক সময় ফাঁকিজুকি দিয়ে পার পাওয়া যায়। আড়াল করে রাখা যায় অনেক ঘাটতি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে সে সবের সুযোগ নেই। নামটা যে একেবারেই যথার্থ। টেস্ট ক্রিকেট মানে আক্ষরিক অর্থেই ‘টেস্ট’। শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতারই নয়, শারীরিক ও মানসিক শক্তিরও। শুধুমাত্র মাঠে নামা ১১ জন নিয়ে নয়, একটা দেশের ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি টেস্ট উপযোগী না হলে যে জয় করা খুবই কঠিন।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের মূল সমস্যাটাও এখানেই। এই দেশের ওয়ানডে বান্ধব ক্রিকেট সংস্কৃতি তরুণ ক্রিকেটারদের মনে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করার স্বপ্ন বুনে দেয় না। এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো টেস্ট ক্রিকেটের উপযোগী ক্রিকেটার তৈরি করার মতো যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয়।

খুঁজলে এমন আরো অনেক কারণ পাওয়া যাবে। তার আগে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার কটাক্ষ একটু কমে যাওয়ার কারণটা মনে করিয়ে দিই। সেটা খুবই সরল। বাংলাদেশের কাছে টেস্টে হারায়। কোনো দলের কাছে হারলে তো আর সেই দলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের গর্বে নাক যতই উঁচু থাক না কেন, এটুকু ভদ্রতাবোধ অন্তত ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার আছে।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই দুটি টেস্ট জয় পরপর দুই বছরে- ২০১৬ ও ২০১৭ সালে। দুটিই মিরপুরে এবং দুটিই একই ফর্মুলা অনুসরণ করে। প্রথম দিন থেকেই বল ঘোরে এমন টার্নিং ট্র্যাকের কল্যাণে। যা ব্যাটসম্যানশিপের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়। বলতে পারেন, ব্যাটিংটা অনেকটাই পরিণত হয় ‘লটারি’তে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও তো এমন উইকেটে ব্যাটিং করার অভ্যাস নেই। যে কারণে টেস্ট জিতলেও সিরিজ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। 

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া একটি টেস্ট যেমন হেরেছে, তেমনি জিতেছেও একটি করে। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের কারণে সিরিজ ড্র করাই বিবেচিত হয়েছে বড় বিজয় বলে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই জয়ের মাঝখানে শ্রীলঙ্কায় নিজেদের শততম টেস্টটিও জয়ের রঙে রাঙিয়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় সবসময়ই একটু বাড়তি মর্যাদা দাবি করে। সব মিলিয়ে ওই বছরখানেক সময়ে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ মনে হয় টেস্ট ক্রিকেটটা একটু খেলতে শিখে গেছে।

তবে সেই ধারণার ধাক্কা খেতেও সময় লাগেনি। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় ওই তিন জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের। বাকিদের টুকটাক অবদান তো ছিলই। তবে বলতে গেলে জয়ের আশি ভাগ কৃতিত্বই পাওনা ছিল এই দু'জনের। তা যে কোনো দলেই তো সিনিয়র খেলোয়াড়দের ওপর এমন নির্ভরতা থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো, এই দুজনের অভাব অর্ধেক পূরণ করতে পারেন, এমন কেউ নেই।

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় যদি বাংলাদেশের কপালে জয়টীকা হয়। তবে তার পাশেই কলঙ্কের দাগ হয়ে থাকবে গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারাটা। পরাজয়েরও তো ধরন থাকে। বৃষ্টির কল্যাণে ড্র একরকম নিশ্চিত হয়ে যাওয়া টেস্টে বাংলাদেশ যেভাবে হারতে সক্ষম হয়েছে, সেটা একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে অনেক কিছু নিয়ে। দক্ষতা, সামর্থ্য, মানসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট খেলার আগ্রহও চলে এসেছে আতশী কাঁচের নিচে।

আসুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক, টেস্টে এখন পর্যন্ত কি কি করেছে টাইগাররা-

আফগানদের কাছে লজ্জার পরাজয়
বিশ্ব ক্রিকেটে নবীন দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটিতে হেরেছে টাইগাররা। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে ২২৪ রানের ব্যবধানে হারে স্বাগতিকরা।

অস্ট্রলিয়ার বিপক্ষে জয়
এখন পর্যন্ত বড় যে দলগুলোকে টেস্টে হারাতে পেরেছে টাইগাররা, তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে একটি টেস্ট জিততে সক্ষম হয় টাইগাররা। তবে, অন্য ম্যাচে অজিরা জয় নিশ্চিত করায় সিরিজটি ড্র হয়। দু’দল এখন অবধি মোট ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচবারই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।

হেরেছে ইংল্যান্ডও
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মোট দশটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে হরেছে নয়টিতে। তবে ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি টেস্টে ইংলিশদের ১০৮ রানে হারাতে সক্ষম হয় টাইগাররা। 

ভারতের বিপক্ষে বড় পাওয়া ড্র
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথম টেস্টটি খেলে ভারতের বিপক্ষেই। সে ম্যাচে প্রথম ইনিংসে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুললেও শেষ অবধি তা হয়নি। প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ১০টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। এরমধ্যে হেরেছে ৮টিতে, ড্র হয়েছে বাকি দু’টি।

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি জয়
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে খেলা ১৬ টেস্টের মধ্যে ছয়টিতে জিতেছে টাইগাররা। হেরেছে সাতটিতে, আর ড্র তিনটি। টেস্টে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি হয়েছে এই দলের বিরুদ্ধেই। ২০১৯ সালে ঢাকায় এক টেস্টে ২১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিকুর রহিম।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় উইন্ডিজের বিরুদ্ধে
এখন পর্যন্ত যেসব দলের বিরুদ্ধে টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশ, তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলটির বিরুদ্ধে খেলা ১৬ টেস্টের মধ্যে চারটিতে জিতেছে টাইগাররা, হেরেছে দশটিতে। মেহেদি হাসান মিরাজের টেস্টে সবচেয়ে ভালো বোলিংয়ের রেকর্ডও এই দলের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে ঢাকায় ৫৮ রানের বিনিময়ে সাত উইকেট নেন তিনি।

হেরেছে শুধু শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ার টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কাই এখন পর্যন্ত হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। দু’দলের মধ্যে আয়োজিত ২০টি টেস্টের ১৬টিতে হেরেছে টাইগাররা, জিতেছে একটিতে, আর ড্র হয়েছে বাকি তিনটি। টেস্টে মুশফিকুর রহিমের দু’টি দ্বিশতকের প্রথমটিই এসেছে এই দলের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে গল টেস্টে এক ইনিংসে ২০০ রান করেন তিনি। সেই টেস্টে মোহাম্মদ আশরাফুল করেছিলেন ১৯০ রান।

পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিমের দ্বিশতক
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অংশ নেয়া দশটি টেস্ট ম্যাচের ৯টিতেই হেরেছে টাইগাররা। ড্র করেছে বাকি ম্যাচটি। দলটির বিরুদ্ধে তামিম ইকবালের একটি দ্বিশতক রয়েছে। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টে এক ইনিংসে ২০৬ রান করেন তিনি। টেস্টে এটাই তামিমের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাকিবের রেকর্ড
কিউইদের বিরুদ্ধে ১৫টি টেস্ট খেললেও এখন অবধি জয়ের মুখ দেখেনি টাইগাররা। তবে, তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। অবশ্য সাকিব আল হাসান গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে এক ইনিংসে ২১৭ রান করেন তিনি। টেস্টে এটাই তার সর্বোচ্চ রান। বোলিংয়ে এক ইনিংসে ৩৮ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নেয়ার রেকর্ডটিও তিনি গড়েছেন কিউইদের বিরুদ্ধেই।

জয় মেলেনি প্রোটিয়াদেরর বিরুদ্ধেও
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১২টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা, যার ১০টিতেই হেরেছে। তবে দু’টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। কোনও জয় না পেলেও দলটির বিপক্ষে পেসার শাহাদাত হোসেনের এক ইনিংসে ২৭ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নেয়ার রেকর্ড রয়েছে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি