বিপিএল মাতাচ্ছেন যারা
প্রকাশিত : ১৭:৫৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৮:১৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স
চলমান বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ঢাকা পর্বে বেশ কয়েকটা একতরফা ম্যাচ ও স্বল্প টার্নআউটের ফলাফল লক্ষ্য করা গেলেও এখন পর্যন্ত কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সবার। আর দলগতভাবে অনন্য রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
বিপিএল-২০১৯-২০ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১২টি ম্যাচের খেলা সম্পন্ন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচগুলোতে ঘটে যাওয়া হাইলাইটস এখানে তুলে ধরা হলো-
উড়ন্ত চট্টগ্রাম, শক্তিশালী খুলনা:
খেলে ফেলা পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিতে অন্যদের থেকে নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। যদিও গত এক সপ্তাহের শিডিউলের কারণে এই দলটির ম্যাচ খেলার পরিমাণ অন্যদের থেকে বেশি। তবে, এবারের বিপিএলের প্রথম সপ্তাহে মাহমুদউল্লাহর দল যে দাম্ভিকতার সঙ্গেই আধিপত্য বিস্তার করেছে, তা বলা বাহুল্য।
প্রথম দিনেই সিলেট থান্ডার্সকে বিধ্বস্ত করার পর ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে হাই স্কোরিং ম্যাচে জয়সহ একটানা তিনটি জয় তুলে নেয়ার আগে তারা খুলনা টাইগারদের কাছে হেরে যায়। লেন্ডেল সিমনস, ইমরুল কায়েস এবং চ্যাডউইক ওয়ালটন রান করেছেন। তবে মেহেদী হাসান রানা, কেসরিক উইলিয়ামস ও মুক্তার আলীর সমন্বয়ে গড়া পেস ত্রয়ীও সমানভাবে ভূমিকা রেখেছে দলের জয়ে।
পয়েন্ট টেবিলের দিকে লক্ষ্য করলে, চট্টগ্রামের ঠিক নীচেই রয়েছে খুলনা। যারা তাদের খেলা দুটি ম্যাচেই জিতেছে। রাজশাহী রয়্যালস, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও ঢাকা প্লাটুন একই সংখ্যক ম্যাচ জিতলেও দল তিনটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে খুলনার চেয়ে বেশি।
দলনেতা মুশফিকুর রহিম এবং রিলে রুশোকে নিয়ে গড়া খুলনার শক্তিশালী মিডল অর্ডার অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রহমানুল্লাহ গুরবাজ, রবি ফ্রাইলিংক, মোহাম্মদ আমির এবং মেহেদী হাসানও ব্যাট ও বল উভয় ক্ষেত্রে সাহায্যে ভালোই সাপোর্ট দিচ্ছে দলকে।
বিপিএলের মূল শক্তি ক্যারিবীয়রা
বিপিএলের বিদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বড় একটা অংশ ক্যারিবীয়রাই। আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সদের মেরুদন্ডই হল ক্যারিবীয় ব্রিগেড। যেখানে ইতোমধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন চ্যাডউইক ওয়ালটন, যিনি ১৩৬. ৬০ স্ট্রাইক রেটে ১৫৩ রান করেছেন। তার সঙ্গে নিজ নিজ দলের জয়ে অবদান রাখছেন সিমন্স এবং উইলিয়ামসও।
তবে, এবারের বিপিএলের সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তটি ছিল- উদ্বোধনী দিনে কৃসমার সান্টোকির বিতর্কিত নো-বলটি। যখন এই বাঁহাতি দ্রুত গতির বোলার তার বল ছুড়তে গিয়ে ক্রিজ থেকে বেশ কয়েক ইঞ্চি সামনে পা ফেলেছিলেন, যা চলতি বিপিএলের শুরুতেই দারুণ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।
সেরা ব্যাটসম্যান
এ তো গেল দলের কথা, এখন আসুন ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আসা যাক। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম সপ্তাহে যার ব্যক্তিগত নৈপূণ্য সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে, সবার নজর কেড়েছে তা হলো- মুশফিকের ৫১ বলে ৯৬ রানের ইনিংসটি, যা এখন পর্যন্ত সেরা ইনিংস।
যার মাধ্যমে তিনি তার দল খুলনাকে রাজশাহীর ১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যে ইনিংসটি খেলতে মুশফিক নয়টি বাউন্ডারি এবং চারটি ছক্কার মার মারেন। তৃতীয় উইকেটে রুশোর সঙ্গে ৭২ এবং চতুর্থ উইকেটে শামসুর রহমান শুভর সঙ্গে ৬১ রানের জুটি দুটি ওই রান তাড়া করতে তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে, যার ফলে দুর্দান্ত একটা দিন কাটায় খুলনা।
মুশফিকের ওই ইনিংসে খুলনার প্রধান কোচ জেমস ফস্টার এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি তাকে তার অসাধারণ সব স্ট্রোকের জন্য "৩৬০ ডিগ্রি প্লেয়ার" উপাধিতে ভূষিত করেন। আসলে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলারদের জন্য যা তাকে বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তা হলো- তার রিভার্স ও স্কুপ শট খেলতে পারার দক্ষতা। যার মধ্যে অনেকগুলোই ছক্কায় পরিণত হয়।
সেরা বোলার
গত এক সপ্তাহের সেরা বোলার খুঁজতে গেলে এক কথায় চলে আসবে মেহেদী হাসান রানার কথা। বাঁহাতি এই দ্রুতগতির বোলার তিন ম্যাচ খেলেই আটটি উইকেট নিয়ে শিকারীদের তালিকায় রয়েছেন শীর্ষে। ৯.৮৭ গড়ে এবং প্রতি নয় বলে একটি উইকেটের স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে বল করেছেন তিনি।
চাঁদপুরের এই তরুণ যদি টুর্নামেন্টের বাকি অংশের জন্য ফিট থাকেন, তাহলে এবারের বিপিএলই হতে পারে রানার সংক্ষিপ্ত কেরিয়ারের জন্য বড় একটি উপলক্ষ্য। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ছোট তারকা হওয়া সত্ত্বেও ঘরোয়া সার্কিটে একজন অচেনা-অজানা হিসাবেই কয়েক বছর অতিবাহিত করেন তিনি।
অন্যদিকে, রানার এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স বিসিবির পেস বোলিং কোচদের জন্যও আনন্দদায়ক হতে পারে, যারা মানসম্পন্ন ফাস্ট বোলার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। যদিও এমন অনেকেই বাংলাদেশের পিচের প্রকৃতির কারণে বেঞ্চে সময় কাটাচ্ছেন বলে মনে করা হয়।
এনএস/