ইতিহাস গড়লেন বিপিএল সেরা রাসেল
প্রকাশিত : ১২:২৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১২:২৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২০
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালে রোমাঞ্চকর জয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছে ক্যারিবিয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেলের নেতৃত্বাধীন রাজশাহী রয়্যালস। এ ম্যাচে স্বরুপে জ্বলে ওঠেন পদ্মপাড়ের দলপতি।
শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে ১৬ বলে অপরাজিত ২৭ রান করে বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। শুধু কি তাই? প্রথমবারের মত বিদেশি কোনো খেলোয়াড়ের হাত ধরে বিপিএলের শিরোপা হাতে উঠেছে কোনো দলের।
এর মধ্যদিয়েই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নতুন ইতিহাস যুক্ত হয়েছে। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রাসেলকে প্রশ্ন করা হয়-আপনি কি জানেন বিপিএলের ইতিহাসে আপনিই প্রথম বিদেশি অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জিতলেন?
বিস্ময় প্রকাশ করা ক্যারিবীয় তারকার জিজ্ঞাসা সত্যিই কি তাই? হ্যাঁ, বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বিপিএলের শিরোপা প্রথমবারের মতো উঠেছে কোনো বিদেশি অধিনায়কের হাতে। শুধু তাই নয়, রাসেলের ক্যারিয়ারে অধিনায়ক হিসেবে এটাই প্রথম শিরোপা অর্জন।
গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ২১ রানের জয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা ঘরে তোলে রাজশাহী। ওই ম্যাচে রাসেলদের করা ৪ উইকেটে ১৭০ রান তাড়া করতে নেমে ১৪৯ রানেই আটকা পড়ে মুশফিক-রুশোরা।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও নিজেকে প্রমাণ দেন রাসেল। দলের টার্নিং পয়েন্টে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ ছক্কায় ১৬ বলে করেন ২৭ রান। মোহাম্মাদ নওয়াজের সঙ্গে ৩৪ বলে দুর্দান্ত ৭১ রানের অসাধারণ ইনিংসই মূলত ফাইনাল ম্যাচে পার্থক্যটা গড়ে দেয়। এর ওপরই ভর করে খুলনার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ দাঁড় করায় শোয়েব মালিকরা।
এর আগে ফাইনালে ওঠার ম্যাচে যেভাবে ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রামের দুঃস্বপ্নের রাত হয়েছিলেন রাসেল, ঠিক এমনিভাবেই এবার বোলিংয়ে তা দেখান মুশফিকদের। ৪ ওভার বল করে নেন ২ উইকেট। ১৮ তম ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে অসাধারণ এক ইয়র্কারে খুলনার হালধরা মুশফিককে ফেরান তিনি।
মূলত মি.ডিপেন্ডাবলের বিদায়ের পরই রাজশাহীর জয় নিশ্চত হয়। রাসেলের ওই ওভার শেষ হতেই জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে রয়্যালসরা।
ফাইনালের নায়ক রাসেল অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে দলের পাশাপাশি জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। ১৩ ম্যাচে ৫৬.২৫ গড়ে ২২৫ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। সর্বোচ্চ ৫৪। স্ট্রাইকরেটটাও ঈর্ষণীয়, ১৮০। ১২টি চারের সঙ্গে ২১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
বল হাতে ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪টি উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার, ৩৭ রানে ৪ উইকেট। ৮.৭৫ ইকোনমিটাও টি-টোয়েন্টি ফরমেটে খুব খরুচে বলার উপায় নেই।
এবারের আসরের শুরু থেকেই রাজশাহী এগিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হল রাসেলের নেতৃত্ব। তার অসাধারণ নেতৃত্ব আর পারফর্মেন্সে ফাইনালে জায়গা করে নেয় রাজশাহী রয়্যালস। যার ফলটাও পেয়েছেন ক্যারিবিয়ন অলরাউন্ডার।
তাইতো ফাইনালার হিসেবে ১ হাজার ডলার ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আরও ১ হাজার ডলারের প্রতীকী চেক হাতে ওঠে তার। তবে শিরোপাজয়ী অধিনায়ক হিসেবে আন্দ্রে রাসেল পেতে পারতেন আরও বেশি অর্থমূল্যের অন্য আরেকটি প্রতীকী চেক। যেমনটা গতবার পেয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
কিন্তু এবারের বিপিএলে নেই কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি, সবগুলো দলের দায়িত্বেই রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। যার ফলে এবারের আসরে রাখা হয়নি কোনো প্রাইজমানি। তাই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিরোপাজয়ী অধিনায়ক হিসেবে রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক রাসেলের হাতে তুলে দেয়া হলো শুধুমাত্র ২০ লাখ টাকা দামের ট্রফিটি, দেয়া হয়নি কোনো প্রাইজমানির চেক। যদিও বিষয়টা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
সারা বিশ্ব জুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ান রাসেল। জিতেছেন অনেক টুর্নামেন্টেরই শিরোপা। যার সবগুলোতেই ট্রফির সঙ্গে থাকে প্রাইজমানি। তাই এবারের প্রাইজমানি না থাকাটাও নতুন অভিজ্ঞতা রাসেলের জন্য।
তবুও কোনো আক্ষেপ নেই ক্যারিবীয় এ তারকার। নতুন এ অভিজ্ঞতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। তার মতে, প্রাইজমানির চেয়ে শিরোপা জেতার আনন্দটাই বড়।
প্রাইজমানি সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হলে রাসেল জবাব দেন, ‘দেখুন, আমি কখনোই এসব টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি নিয়ে ভাবি না। এগুলো আসলে অনেকটা বোনাসের মতো। আমার কাছে, টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতাটাই সবকিছু। এটা হয়তো এমন শোনাবে যে, আমি টাকা পছন্দ করি না। আমি শুধু নিশ্চিত করতে চাই যে, দলের সবাই যেন ঠিকঠাক থাকে এবং প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসতে পারে। একইসঙ্গে দলের খেলোয়াড়দের বোনাসের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে চেষ্টা করি।’
এআই/