দুর্দান্ত আত্মপ্রত্যয়ী লিটনের আবির্ভাব
প্রকাশিত : ১৮:৪৮, ৭ মার্চ ২০২০
রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির পর লিটন দাস
চমক দেখিয়েছেন লিটন দাস। গড়েছেন অনন্য দুটি রেকর্ডও। যার একটি নিজের, অন্যটি তামিমের সঙ্গে যৌথভাবে। শুক্রবার ১৭৬ রানের এক দানবীয় ইনিংস খেলে হয়েছেন দেশের পক্ষের সর্বোচ্চ স্কোরের মালিক, আবার তামিমের সঙ্গে মিলে ২১ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙ্গে গড়েছেন নতুন এক জুটি। আর তাতেই নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
এই লিটন দাসের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই। মুস্তাফিজের জাদুতে সেবার বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও অভিষেকে আহামরি কিছু করতে পারেননি লিটন। ২০১৫ সালে ৯ ম্যাচ সুযোগ পেয়ে নিজের ব্যর্থতায় দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়া লীগে পারফর্ম করে ২০১৭ সালে আবার দলে ডাক পান লিটন। তিন ম্যাচ সুযোগ পেলেও ব্যর্থতা আবারও পেয়ে বসে লিটনকে। যদিও তাতে আস্থা হারায়নি ম্যানেজমেন্ট। সুযোগ পেলেই লিটনকে ডেকেছে, দলে সুযোগ দিয়েছে।
তবে ব্যাটসম্যান লিটনের আবির্ভাব হয় ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ১২১ রানের কাব্যিক ইনিংস লিটনকে ক্রিকেট–বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন করে। ২০১৮ সালেই ক্যারিয়ারের প্রথম শতক ও অর্ধশতক উভয়ই অর্জন করেন লিটন দাস।
বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেন ৯৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। যদিও সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরির কারণে তা ঢাকা পড়ে যায়। এরপর ২০১৯ সালে ৯ ম্যাচে ৩২.৮৮ গড়ে করেন ২৬৩ রান। আর এ বছর লিটনের ওয়ানডেতে সূচনা হয় জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়েই। তাতে মাত্র তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিতে ৩১১ রানের বন্যা ছুটিয়ে ইঙ্গিত দেন পরিণত লিটনের।
আর এতেই লিটনের ব্যাটিং গড় বেড়েছে ৪ ধাপ। ২৮.২২ গড়ে ব্যক্তিগত ৯০৩ রান নিয়ে শুক্রবার ম্যাচ শুরু করেছিলেন লিটন দাস। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবলীলভাবেই দিনের সূচনা করেন তামিম–লিটন জুটি। শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও সাবধানী ব্যাটিংয়ে মুহূর্তেই তামিমকে টপকে যান লিটন।
ইনিংসের ১৬তম ওভারে অর্ধশতক এবং ৩৩তম ওভারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নেন লিটন দাস। মাঝে বৃষ্টি এসে খেলাকে সাময়িক পণ্ড করে দেয়। যা বিরক্তির সৃষ্টি করে দর্শক মনে। তবে বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে মাঠে যেন এক দানব লিটনের আবির্ভাব দেখেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
শেষ ২১ বলে লিটনের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৬৮ রান। তাতেই রেকর্ড লিটন দাসের। টপকে ফেলেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মাইলফলক। মাঠ ছাড়ার আগে ব্যক্তিগত ঝুলিতে ১৭৬ রানের দানবীয় স্কোর যোগ করেই তবে বিদায় হন। এতেই এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে লিটনের ব্যাটিং গড় ৪ ধাপ বাড়ে। ম্যাচ শেষে ৩২ গড়ে বর্তমানে ব্যক্তিগত ১০৭৯ রানে অবস্থান করছেন লিটন দাস।
কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট একটি হতাশার খেলা।’ শুক্রবার লিটনের ১৭৬ রানের দানবীয় ইনিংস দেখে দেশের হয়ে প্রথম দ্বিশতকের আশা করেছিলেন অনেকেই। কেউ কেউ বলেছেন, পুরো ওভারের খেলা হলে কাজটা সম্পন্ন করতে পারতেন লিটন। দর্শকমনে এমন আক্ষেপ ও হতাশার সুর বিরাজ করছিল ম্যাচ জুড়েই।
তবে, দ্বিশতকের আশা কতটা করেছিলেন খোদ লিটন? ম্যাচসেরা ও তামিমের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজসেরা লিটনের জবাব, ‘এমন কোনও চিন্তাও করেননি তিনি। বরং অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী দিনে ম্যাচ জেতাই ছিল লক্ষ্য।’
এইতো কিছুদিন আগে ৬০ থেকে ৭০ করতে না পারার আক্ষেপে ভুগতেন লিটন দাস। তবে এদিন ছিলেন দুর্দান্ত আত্মপ্রত্যয়ী। শুক্রবার দেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দেড় শতক পার করেছেন। লিটন এবার স্বপ্ন দেখতে পারেন দ্বিশতকের। সুযোগ পেলে তা করেও দেখানোর চেষ্টা করবেন বলে অবশ্য আশাও প্রকাশ করেছেন এই ব্যাটসম্যান।
আসলে, স্বপ্নই তো মানুষকে বড় করে তোলে। কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস হয়তো লিটনের এ স্বপ্নকে একদিন বাস্তবে পরিণত করবে। এমনটাই প্রত্যাশা দেশের আপামর ভক্ত-সমর্থকদের।
এনএস/