শ্রমিকদের বেতন না পাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন সাকিব
প্রকাশিত : ১২:৫০, ২২ এপ্রিল ২০২০
সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের শ্রমিকরা ৪ মাস ঠিকমতো বেতন পাননি। বকেয়া বেতনের দাবিতে ফার্মের শতাধিক হ্যাচারি শ্রমিকরা মুন্সিগঞ্জ-নীলডুমুর সড়ক অবরোধ করে সোমবার বিক্ষোভ করেন। পরে তাদের সরিয়ে দেয় র্যাব ও পুলিশ।
এ বিষয়ে সাকিব আল হাসান মিডিয়াতে মুখ খুলেননি। তবে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এর বিস্তারিত তুলে ধরেছেন বর্তমানে নিষিদ্ধ থাকা এই অলরাউন্ডার।
একটু দেরি হওয়ায় নিজেই ক্ষমা চেয়ে সাকিব শুরু করেন এভাবে, ‘দেরি করে সাড়া দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইছি। তবে আমি সব তথ্য ও আমার ভাবনাগুলো গুছিয়ে নিতে চাচ্ছিলাম। যাতে করে সত্যটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারি।’
ফেসবুকে দেওয়া সেই বক্তেব্যের বাকি অংশটুকু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘ব্যস্ততার কারণে আমার অন্যান্য কোম্পানির মতো এটাও আমার অংশীদাররাই পরিচালনা করে থাকেন। এসবে আমি প্রতিনিয়ত দেখভাল বা খোঁজ খবর রাখার সুযোগ খুব কমই পাই। আপনারা সবাই জানেন, আমি দেশের বাইরে অনেক দিন ধরেই আছি। আমাদের দ্বিতীয় সন্তানও আসছে, এই সময়ে আমি আমার অ্যাগ্রো ব্যবসার কোনো তথ্যই জানতাম না। শ্রমিক বিক্ষোভের সব কিছু জেনেছি মিডিয়ার মাধ্যমে। আমার অংশীদার ও কাজে যারা যুক্ত আছেন, তারা গত কয়েক মাসে ঠিক কী হয়েছে, তা আমাকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছ্ন। তবে তারা কথা দিয়েছিল, কম সংখ্যক শ্রমিক যারা মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কাজে যুক্ত আছে, তাদের অর্থ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করে দেবে। তবে প্রায় সব শ্রমিকেরই কাজ জানুয়ারির শেষ দিকেই সমাপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ৩০ এপ্রিলে পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই বিস্ময়করভাবে সেসব কর্মচারীরা রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। মনে হচ্ছে কারও উসকানিতে কিছু নিচু মন-মানসিকতার মানুষের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তারা এমনটি করেছে।
যাই হোক যখন বুঝলাম, বিষয়টি খুবই গুরুতর, তখনই পুরো দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেই। তাদের বেতন সম্পূর্ণভাবে আমাদের ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে পরিশোধ করবো। কোম্পানি ফান্ড বা সহঅংশীদারদের কোনও সহায়তা ছাড়াই তা করবো। আর আমি মনে করি কোনও কোম্পানির অভ্যন্তরীণ একটি বিষয় অন্দরেই থাকা উচিত ছিল। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি, কর্মচারীরা রাজি হয়েও পুরো মাস পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা না করে এমন অশান্তির সৃষ্টি করেছে। বাকিদের মতো এই সঙ্কটকালে আমিও অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছি। তাই বিষয়টি বোধগম্য হলো না, কেন তারা মনে করছে এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে আমি বঞ্চিত করবো। যাদের কিনা গত ৩ বছর ধরেই নিয়মিতভাবে বেতন পরিশোধ করে আসা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মনে হচ্ছে, ঘটনাটি মিডিয়ার কোনও একটা অংশের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। যারা ব্যাপারটা খুব গভীরভাবে ও সততার সঙ্গে খোঁজ নিয়ে দেখেনি। বিষয়টি আরও ভালো হতো, যদি তারা চটকদার শিরোনাম বানানোর দিকে মনযোগ না দিয়ে সত্যটা খুঁজে দেখার চেষ্টা করতো। যার অনেকাংশই মিথ্যা এবং পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, সত্য যাচাই করে সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করতে মিডিয়ার একটা শক্তিশালী ভূমিকা আছে। তেমনটি না করা হলে তারা কোনও কারণ ছাড়াই আরও অনেককে আমার মতোই আঘাত করবে। তারা পুরো চিত্রটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে শুধু আমাকে দোষ না দিয়ে বাকি অংশীদারদের নামও আনতে পারতো। কারণ আমি বা অন্য কেউ এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগের প্রাপ্য নই। আমি আশা করবো, মিডিয়া এবং সাংবাদিকেরা যখন প্রতিবেদন তৈরি করবে, আরও যত্নশীল হবে।
জাতি হিসেবে আমি মনে করি, এই সঙ্কটকালে আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিত। বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন যে কোনও তথ্যের বিরুদ্ধে আমাদের আরও সতর্ক ও কঠোর হওয়া উচিত। আমার মনে হয়, আমাদের জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকেই এখন মনোযোগী হওয়া উচিত। সবাই নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন-সাকিব।’
এমবি//