যেভাবে দূর করবেন বিষণ্ণতা
প্রকাশিত : ১০:১৭, ৪ আগস্ট ২০১৯
দিন যত যাচ্ছে,নানা কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম-বেশি প্রায় সব মানুষই বিষণ্ণতায় ভোগে।কিন্তু আমাদের অনেকেই হয়তো জানি না ডিপ্রেশন আসলে কী? আর এটা কাটিয়ে উঠতেই বা আমাদের কী করণীয়? মনে করুন, কোনো এক সকালে কিংবা বিকেলে আপনার মন খারাপের মানে কি আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন?
আবার প্রিয় কোনো মানুষকে হারালে, পরীক্ষায় খারাপ করলে, অসুখ হলে কিংবা যেকোনো আঘাতে আমাদের মন খারাপ হয়।তবে সময়ের সঙ্গে সেটি কেটেও যায়। একেই কি বিষণ্ণতা বলা যাবে? কিংবা সময়ের সঙ্গে দুঃখ কেটে গেলেই কি বিষণ্নতা কেটে যায়?
আমাদের বোধহয় প্রচলিত ধারণা ভেঙ্গে একটু জানা উচিত, ভাবা উচিত নতুন করে। কারণ বিষণ্ণতা শুধুই সাময়িক দুঃখ বা মনখারাপ নয়, বরং এটি একটি বোধ যা আমাদের করুণ পরিণতি ডেকে আনে, নিঃশেষ করে দেয় তিলে তিলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। এই ডিপ্রেশন ক্যানসার বা হৃদরোগের মতোই একটি রোগের নাম। ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা যেহেতু মানসিক ব্যাধি, সেহেতু আমাদের উচিত সর্বপ্রথম সেটাকে নিজে থেকেই প্রতিকারের চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে যা করবেন-
রুটিন মেনে চলা
জীবনকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসুন। কেননা বিষণ্ণতা আপনার স্বাভাবিক কাজকর্মের নিয়মকে বদলে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিষণ্ণতা থাকলে প্রাত্যহিক জীবন অনেকটা এলোমেলো হয়ে পড়ে। তাই এ সময় কাজগুলোকে একটা ছকে বাঁধুন এবং সঠিক সময়ে করুন। সব কাজের জন্য একটি রুটিন মেনে চলুন।
কাজে ব্যস্ত থাকা
ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো- নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা। কারণ কাজে ব্যস্ত থাকলে নিজেদের অপ্রয়োজনীয় সমস্যার দিকে মনোযোগ কম থাকে।যেকোনো কারণে মন খারাপ বা ভালো এটা বোঝার জন্যও সময় দরকার। সেই সময়টা যদি আমরা নিজেদের ব্যস্ত রাখি তাহলে এটি আমাদের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আপনজন ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো
বিষণ্নতায় একা থাকার চেয়ে বরং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত যাদের সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে বা যাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা আরাম পাই।এমন অনেক বন্ধুমহলই থাকে যাদের সঙ্গে কখনো মন খারাপ করে থাকা যায় না, বরং সেখানে সব সময় হাসি-ঠাট্টা হয়। এমন বন্ধুমহলের সঙ্গে সময় কাটালে তা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এমনকি বিষণ্ণতার কারণ নিয়েও তাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো লাগতে পারে। আপনজনদের সঙ্গে গল্পগুজব করাটও মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট।
ইতিবাচকতা খোঁজা
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার প্রথম শর্তই হচ্ছে সব কিছুর খারাপ দিক চিন্তা করা, নেতিবাচকতা খোঁজা।যা করা উচিত তা হলো যত বাধাই থাকুক, যত নেতিবাচক চিন্তা ভাবনাই আসুক সবার আগে নিজের মধ্যে থেকেই ইতিবাচকতা খুঁজে বের করতে হবে। সেইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যেকোনো কাজ করতে হবে।
ধ্যান বা শরীরচর্চামূলক কাজ করা
আমরা সবাই জানি যে আমাদের শরীর ও মন পরস্পর সংযুক্ত। তাই মনকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের একটি সুস্থ শরীর বজায় রেখে চলতে হবে। এজন্য আমাদের দরকার উপযুক্ত খাদ্যের পাশাপাশি ধ্যান বা শরীরচর্চামূলক কাজ করা।
কিছু শারীরিকভাবে নিঃসৃত হরমন রয়েছে যেগুলো আমাদের মন ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের দেহ থেকে এ হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে। যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এজন্য আমরা বিষণ্ণতা কমানোর জন্য নিয়মিত সাইকেল চালানো, সাঁতার, ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি-এসব করতে পারি। এতে আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য দুটোই বেশ ভালো থাকবে।
সস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
হাভার্ড মেডিকাল কলেজের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি সুস্বাস্থ্যকর ডায়েট বিষণ্ণতা থেকে উত্তরণে বা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এজন্য বিষণ্ণতা দূরীকরণে আমাদের দৈনন্দিন খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। নিয়মিত শাকসবজি, ফলমূল বা ফলের জুস খেতে হবে। সেইসঙ্গে পরিমিত পরিমাণ পানিও পান করতে হবে।
পছন্দের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা
বিষণ্ণতায় আমাদের অপছন্দের বা কঠিন কাজ করতে ইচ্ছা করে না। স্বাভাবিকভাবেই সেসব কাজে আমাদের মন বসতে চায় না। এমন সময় আমাদের সেই কাজগুলো করা উচিত যা আমাদের আনন্দ দেয়, কঠিন কাজ হলেও করতে ভালো লাগে। এই কাজগুলো হতে পারে, ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা দেওয়া, বই পড়া, সিনেমা দেখা, গান শোনা, রান্না করা বা যেকোনো কাজ যা আপনার ভালো লাগে সেসব কিছুই বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমান
সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় আমাদের অতিরিক্ত ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করে সেই সময় অন্য কোনো ভালো লাগার কাজ করুন।
পর্যাপ্ত ঘুমান
ডিপ্রেশনের কারণে ঘুমের অভ্যাস বদলে যেতে পারে। অনেক সময় ঘুমানোই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তবে ভালো ঘুম খুবই প্রয়োজন এই অবস্থা কাটাতে। বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান।
প্রার্থনা
সাইকোলজিস্টদের মতে, বিষণ্ণতায় নিজ নিজ ধর্মের প্রার্থনা মন ভালো করতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।প্রতিটি মানু্ষই বাঁচে আশার মাধ্যমে। সাধারণত মানুষ যখন ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় ভোগে তখন তাদের কোনো আশার বিঘ্ন ঘটে যার ফলে তারা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করে। এমন সময় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করলে নিজের মধ্যে কনফিডেন্স তৈরি হয়। যা আপনার ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
টিআর/