ব্যাংককের অভিনব অভিনন্দন ও বিদায়সম্ভাষণ!
প্রকাশিত : ০০:০৮, ৬ মার্চ ২০১৮
সম্মেলন উপলক্ষে যখন দেশের বাইরে কোথাও যাই তখন সাধারণত শহরের কেন্দ্রস্থলে কোনো হোটেলে উঠি। বেশিরভাগ সময় একই হোটেলে সেমিনারের আয়োজন করা হয়, অন্য সময় ঘটনাস্থল আশেপাশেই থাকে। যে ক’দিন থাকি, ইটপাথরের চাদরে মোড়ানো নগরীর কেন্দ্রবিন্দুতেই ব্যস্ত সময় পার করে দেই। জ্ঞানজাগতিক কাজকর্ম সাঙ্গ হলে বাক্সপেটরা গুছিয়ে আবার ঘরমুখো হই। প্রথম দিন উদ্বোধনী অধিবেশনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অতিথিদের আগমনী অভিনন্দন জানানো হয়। কিন্তু সমাপ্তিসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সম্ভাষণের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এটাই আজকালকার রেওয়াজ। অবশ্য এবার ব্যাংককে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। আগমন ও বিদায় সম্ভাষণ দু’টোই পেয়েছি। তবে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন্ পরিবেশে, ব্যতিক্রমী আঙ্গিকে! আর এ নিয়েই আমার আজকের এই ক্ষুদ্র রচনার অবতারণা।
সম্মেলনটি ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্রে ‘অ্যাম্বেসেডর’ হোটেলে শুক্র ও শনিবার যথাক্রমে চলতি বছরের ১৬ ও ১৭ফেব্রæয়ারি। তারপর আমার আরেকটি দাওয়াতি বক্তৃতা ছিল থাইল্যান্ডের অন্যতম পর্যটন নগরী ‘চিয়াং মাই’-তে অবস্থিত ‘চিয়াং মাই’ বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনিবার্য কারণবশত: শেষ মুহূর্তে কর্মসূচিটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় হাতে দু’দিন অবকাশ বেরিয়ে এলো, তাই আমি ঠিক করলাম ১৮ তারিখ রোববার এআইটি (এশিয়ান ইনিষ্টিটিউট অফ টেকনোলজি) লাইব্রেরিতে যাব। উদ্দেশ্য, জার্নাল সংক্রান্ত কিছু প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন (আপনারা অনেকেই জানেন, আমি অর্থনীতি বিষয়ে একটি জার্নাল ও তার আনুষঙ্গিক ব্যবসাবিষয় দেখাশোনা করি)। খবর নিয়ে দেখেছি, এআইটি লাইব্রেরি ছুটির দিনও খোলা থাকে। ঘটনাচক্রে এআইটির কাছেই সপরিবারে থাকে আমার এক মামাত বোন-শায়লা ও তার স্বামী-ফারুক। তাই এক সাথে ‘রথ দেখা ও কলা বেচার’ ব্যবস্থা আগে থেকেই করা ছিল। সম্মেলন শেষ হলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার সকালবেলা শায়লা আমার হোটেলে তাদের গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
গাড়িতে ওঠার পর যে দুই কারণে আমি বেশ উৎফুল্ল ছিলাম তার প্রথমটি হলো, আমার অনেক দিনের লালিত এআইটি দেখার স্বপ্ন পূরণের বিষয় এবং দ্বিতীয়টি ছিল শহরের বাইরে থাইল্যান্ডের প্রকৃতি, পরিবেশ ও পল্লিগ্রাম দেখার কৌত‚হল। নগরের বড় বড় স্থাপনা, স্কাইট্রেন, ফ্লাইওভার, সড়ক, মহাসড়ক ইত্যাদি পেরিয়ে শহর ছাড়িয়ে যখন গ্রামের দিকে চলে এলাম তখন মনে হলো থাইল্যান্ড অনেকটা বাংলাদেশেরই মতন। গাড়ির চালক স্থানীয় রাস্তা ধরে এঁকে বেঁকে অগ্রসর হতে শুরু করলে আমি দু’চোখ ভরে দেখছিলাম, মাঠে মাঠে ফসল, ঘাস, গাছপালা, পানি, ফুল ও পাখপাখালির মেলা। সবই চেনা চেনা লাগছে, অথচ কোনোটাই যেন চিনতে পারছি না! বলাই বাহুল্য, এ এক অনির্বচনীয় অনুভ‚তি!
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর এসে ঢুকলাম বিশেষভাবে নির্মিত এক অনন্য ও অনবদ্য আবাসিক এলাকায়, যেখানে ঘন বনের ফাঁকে ফাঁকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে প্রাসাদোপম বড় বড় বাড়ি। বুঝতে বাকি রইল না যে, এখানে দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে চাকরিরত বড় কর্তারা এবং বিত্তবান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা থাকেন। ঝোপঝাড়, গাছপালা, ফুল, প্রজাপতি ও মৌমাছিতে ভরপুর পুরো এলাকা। কলা, নারকেল, সুপারি আর কত জাতের চেনা অচেনা গাছ ও লতাপাতার আড়ালে বাড়িগুলো যেন লুকিয়ে লুকিয়ে উঁকি মারছে। রাস্তা থেকে ভালো করে দেখা যায় না। ধুলোবালিবিহীন এমন নির্মল পরিবেশে এসেই মনটা আনন্দে ভরে উঠলো! সেই আনন্দ আরও শতগুণ বাড়িয়ে দিল এক মধুর আগমনী অভিনন্দন! শায়লাদের বাড়ি পৌঁছার ঠিক আগে আগেই আমাকে সানন্দে চিৎকার করে বরণ করে নিল মাথার ওপরে ওড়াউড়ি করা বনের এক পাখি। বালকবেলায় যে কোকিলের কলতান শুনতে পেতাম আমাদের গ্রামের বাড়ির সামনের মরা ‘ধামাই’ গাঙের পাড়ে ফুলফোটা শিমুল গাছের তলে। বিদেশ-বিভঁ‚য়ে হাজার মাইল দূরে এসে সেই কোকিলের ‘কুহু কুহু’ ডাক শুনে আমি বিস্মিত, অভিভ‚ত ও আপ্লুত না হয়ে পারিনি! ব্যাংককে এসে এ কী অনন্য অভিনন্দনে ভূষিত হলাম! সব যেন স্বপ্নের মত লাগছে! তবু স্বপ্ন নয়, এ-তো বাস্তব অভিজ্ঞতা!
বাড়িতে ঢুকেই আমি আমার আত্মীয়দের বললাম, তোমাদের আগে মন মাতানো সুরে কুহু কুহু গান গেয়ে আমাকে আনন্দ-অভিবাদন জানিয়ে গেলো তোমাদের প্রতিবেশী মিষ্টিকণ্ঠী কোকিলটি; কোকিলের ডাক আরো জানিয়ে গেলো,
‘মধুর বসন্ত এসেছে....।’
দিন-তারিখ হিসেব করে দেখি, ঠিকই ফাল্গুনের ৬ তারিখ। অর্থাৎ বসন্তের পয়লা সপ্তাহ চলছে। ঊনিশ শ’ ঊনসত্তর সালে ম্যাট্রিক পাশ করে বাড়ি ছেড়ে কলেজে যাওয়ার পর প্রায় ৫০ বছর গড়িয়ে গেছে। এমন উচ্ছ¡সিত কোকিলের ডাক আর কোনো দিন কোথাও শুনিনি! আমার বিস্ময়বিমুগ্ধ অভিব্যক্তিকে ফারুক এই বলে স্বাভাবিক করতে চাইলো, ‘এখানে বারো মাস কোকিলের ডাক শোনা যায়’। এবার আমি আরও অবাক হলাম, বললাম, তাহলে এটা কোকিল নয়, কারণ কোকিল তো শুধু বসন্তেই আসে! না, তা-ই বা কী করে হয়! ফারুকের কথা মত থাইল্যান্ড চির বসন্তের দেশ হোক বা না হোক, কোকিলের কুহু ডাক চিনতে আমার বিন্দুমাত্র ভুল হয়নি; আর বসন্ত যে এসেছে, সে হিসেব তো দিন-পঞ্জিকায় মিলিয়ে নিয়েছি, তাতেও তো ভ্রান্তিবিলাসের কোনো সুযোগ নেই। এ গল্পের এখানেই শেষ নয়, শায়লা আবদার করলো, ‘ভাইয়া, আজ হোটেলে ফিরে না গিয়ে আমাদের বাড়িতে থেকে যান, সকালে ঘুঘুর গুব্ গুব্ ডাক শুনে আপনার ঘুম ভাঙবে। বাহ! কী সুন্দর কাব্যিক পরিবেশ! তুমি কি কবিতা লিখ? শায়লার প্রতি আমার সরাসরি প্রশ্ন। ‘না, ও’কাজটি একেবারেই আমার নয়’, বিনয়ের সাথে বোনটি উত্তর দিল। আমি বললাম, জানি, তুমি তো অঙ্ক পড়াও, কথা আছে না, ‘যারা অঙ্কে ভালো, তারা সাহিত্যে কাঁচাই হয়’। প্রসঙ্গের এখানেই শেষ।
হাতমুখ ধুয়ে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘মেড়া পিঠা’ (আমার আসার কথা শুনে মামী, শায়লাকে বলে দিয়েছেন, ‘লোকমান’-কে ‘মেড়া পিঠা’ বানিয়ে খাওয়াবে) দিয়ে চা-পানি খেলাম, বিশ্রাম নিলাম। ছুটির দিনে শায়লা তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্য কক্ষে চলে গেল, অঙ্ক বোঝাতে। ফারুক আমাকে সাথে করে পাড়া বেড়াতে বের হলো, তাদের বাড়ির পেছনে বড় জলাধারের চারদিকে গল্ফ কার্ট নিয়ে চক্কর দিল, আমেরিকান স্কুল দেখাল, স্টারবাক্স-এ কফি খাওয়াতে নিয়ে গেল, নিকটে একটি মসজিদেও গেলাম। এর মাঝে যা অবলোকন করলাম তাতে একটি বিষয় আমার দৃষ্টি কাড়ল। দেখলাম, গাছের আগায় নারকেলের থোকা জাল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ফারুককে জিজ্ঞেস করলাম, এমন ব্যবস্থা তো অন্য কোথাও দেখিনি! এর কারণ কী? তার উত্তর শুনে একটু তাজ্জবই হলাম! বলল, পাকা ঝুনা নারকেল নাকি পথচারীর মাথায় ও চলমান গাড়ির ওপর পড়ে যায়, তাই। মনে মনে ভাবলাম, ভালোই হলো, থাইল্যান্ডের নেড়ারা ‘বেলতলায়’ এক বার গেলেও ‘নারকেলতলায়’ বার বার যেতে পারবে! ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরির পর আমরা বাসায় ফিরে এলাম। তারপর ফারুক, শায়লা এবং আমি এআইটিতে গেলাম।
আমার অজান্তে সেখানে অধ্যাপক ফজলে করিম সাহেবের বাড়িতে দুপুরে খাওয়ার আয়োজন হয়েছে। দেখলাম, টেবিল ভর্তি খাবার। ভাবি দিল-দরাজ আয়োজন করেছেন! শাকসবজি, মাছ, গোশ্ত, কাবাব, হালুয়া-মিষ্টি, ফলফলাদি কোনো কিছুই বাদ যায়নি। সবাই খুব মজা করে খেলাম। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগল মেকং ডেল্টার সুস্বাদু তাজা পাবদার দোপেয়াজা ও লাল রঙের কচমচে জামরুল! খাওয়া দাওয়ার পর সংক্ষিপ্ত হলেও ফারুক ও করিম ভাইদের সাথে আড্ডাটা জমেছিল বেশ! কাচের প্যাটিও ডোর দিয়ে বাসার পেছনটা দেখে মনে হচ্ছিল আমি যেন বাংলাদেশের গ্রামের কোনো বিত্তবান মধ্যবিত্তের সাজানো গুছানো কাছারি ঘরে বসে আছি। আগাছাবিহীন পরিষ্কার বাগানে আম, কলা, জামরুল, লেবু ও জাম্বুরা গাছ শোভা পাচ্ছে। মৃদুমন্দ দখিন হাওয়ায় ‘লেমন গ্রাস’-এর ঝোপ ডানে বাঁয়ে দোল খাচ্ছে। বাগানের লাগোয়া গা ঘেষে আছে ধীর স্থির পানি ভরা টইটুম্বুর কৃত্রিম খাল। খালের ওপারে ঘন সবুজ ঘাস ও জঙলি গাছপালা যত্রতত্র বেড়ে উঠেছে। খালপাড়ে দু’একটা গরু-ছাগল চরতে দেখলে কতই না ভালো লাগত! আর রাখাল বালকটি যদি বাঁশী বাজাত, তাহলে তো কথাই নেই! রোদের তেজ কমে এলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। বাগানের ফলজ গাছের সাথে ছবি তুললাম। ছোট্ট আমগাছে সাদা সাদা পলিথিনে মোড়ানো থোকা থোকা আম ঝুলে আছে। পাখি নাকি ঠুকরে ঠুকরে আম খেয়ে ফেলে, তাই এ নিরাপত্তাব্যবস্থা। ভাবি, পাখির ঠুকরানো একটি আম এনে দেখালেন। করিম ভাই তাঁর জামরুল গাছে নবজাত ফুলের কলি দেখালেন। খালের পাড়ে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ খানিকক্ষণ কথাও বললাম।
এমন সময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে হলো লাইব্রেরির কাজটা সেরে ফেলা দরকার। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফারুকের গাড়িতে করে করিম ভাই ও ভাবীসহ আমরা পাঁচ জনই সেখানে চলে গেলাম। গ্রন্থাগারের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং এক ফাঁকে আমার কাজটিও সেরে ফেললাম। তারপর করিম ভাইদেরকে তাঁদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমরা শায়লাদের বাসায় ফিরে এলাম। অবশ্য এ দু’য়ের মাঝখানে আমার আমন্ত্রয়িতারা আমাকে নিয়ে গেল ব্যাংককের বিখ্যাত পাইকারি বাজারে (আঞ্চলিক নাম-অঃয ঞধষধঃয ঞযধর)। ঢাকার কাওরান বাজারকে ২০ দিয়ে গুণ করলেও এর সমান হবে কি না সন্দেহ আছে। শায়লা ও ফারুক কিছু কেনাকাটা করল, আমি শুধু দেখলাম। ফুল, ফলমূল, শাকসবজি, তরিতরকারি ও মাছ-গোশ্তের এত বিশাল হাটে যাওয়ার সুযোগ এর আগে আমার জীবনে আর কখনো জুটেনি।
বাসায় ফিরে এসে বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদে গেলাম। দেখলাম ষাণ¥াসিক চাঁদা-আদায় উপলক্ষে মসজিদ প্রাঙ্গনে উৎসবমুখর মেলা বসেছে! মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম, ফারুক বিভিন্ন স্টল থেকে থাই খাবার কিনে খাওয়ালো। এরপর মাগরিবের নামাজ পড়লাম। থাই ইমাম সাহেবের মর্মস্পর্শী ক্বিরাত শুনে হৃদয় জুড়িয়ে গেল! দোয়াদুরুদ শেষে বাড়িতে ফিরে এলাম। আবার বিশ্রাম, তারপর রাতের খাওয়দাওয়া। খেতে খেতে আমি রীতিমত ক্লান্ত! খাদ্যদ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগিতা শূন্যে না এনে ওঠার বান্দা আমি নই! ডাটাশাক, বর্বটি ভর্তা, মাষকলাইর ডাল, গোশ্ত ভুনা কোনোটাই বাদ দেইনি। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প ও আড্ডা তো চললোই। এই করতে করতে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল। ইতিমধ্যে ড্রাইভার বাড়ি চলে গেছে। আমি ট্যাক্সি নিতে চাইলাম, ফারুক কোনো মতেই রাজি হলো না। তারা দু’জন আমাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে গেল। ভোরবেলা থাইল্যান্ডে ঘুঘুর ডাক আর শোনা হলো না!
দু’দিন পর আমার ফিরে আসার পালা, একই রকম আরেকটি অপ্রত্যশিত ও কাকতলীয় অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে শহর ডিঙিয়ে এয়ারপোর্টে এসে উঠলাম। বিশ তারিখ রাত সাড়ে দশটায় আমার ফিরতি ফ্লাইট। ব্যাংককের ট্র্যাফিক জ্যামের কথা অনেক শুনেছি, তাই আমি হোটেল থেকে রওয়ানা দিয়েছি পাঁচ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে। সপ্তাহবার বলে সর্বত্রই ভীড়। শুরু থেকেই ট্র্যাফিক জ্যাম ঠেলে ঠেলে আস্তে আস্তে গাড়ি এগোচ্ছে। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে, তখনও আমি মূল শহর পার হতে পারিনি। এক জায়গায় গাড়ি ট্র্যাফিক জ্যামে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় মুহূর্তের জন্য নগরজীবনের ধোঁয়া ও ধুলিমাখা কোলাহলকে স্তব্ধ করে দিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে দূর থেকে করুণ সুরে আবার কোকিল গেয়ে উঠলো, ‘কুহু কুহু’, ‘কুহু কুহু’, একবার নয়, কয়েক বারই শুনলাম। এ কেমন বাস্তবতা! এ-ও কি বিশ্বাসযোগ্য! যেখানে রাস্তা ভরা গাড়ি আর গাড়ি, চারদিকে স্টিল আর কংক্রিটের উঁচু-নিচু দালান; পানি নেই, ফুল নেই, ফল নেই, পাখি নেই, তরু নেই, ছায়া নেই সেখানে কোকিলের কাকলি! কোথা থেকে এলো এ পাখি? আমি তো ভুল করিনি, ঠিকই শুনেছি! এ যে কোকিলের ‘কুহু’ ডাক নয়! এ তো আমার প্রতি ব্যাংককের বিষাদমাখা বিদায়সম্ভাষণ!
‘হোম! সুইট হোম!’ অবশেষে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে পরবাসে নিজ বাসায় ফিরে এসেছি। থাইল্যান্ডে হয়ত আর কোনো দিন যাব না, কিন্তু বসন্তের সেই কোকিলের উচ্ছ¡াস ভরা কুহু ডাক এবং বিদায়বেলার করুণ সুর বাকি জীবনভর মনে থাকবে, মাঝে মাঝে কানেও বাজবে, অপরিসীম তৃপ্তিবোধ ও আনন্দানুভূতিতে হৃদয়কে সিক্ত করে দিয়ে যাবে!
লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর: জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ
Email: awahid2569@gmail.com
আরও পড়ুন