ঘুরে আসুন স্বাধীনতা জাদুঘর
প্রকাশিত : ১৯:০১, ২৫ মার্চ ২০১৮
বাঙালি স্বাধীনতা প্রিয় জাতি। পরাধীনতার বিরুদ্ধে এ জাতিকে লড়াই করতে হয়েছে চিরকাল। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অসংখ্য লড়াইয়ের ফসল আজকের বাংলাদেশ। এই ইতিহাসকে ধরে রাখার তাগিদে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা যাদুঘর। মোঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালির প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামের চিত্র ধারণ করা আছে এ জাদুঘরটি। এ উদ্যানেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। আবার এখানেই পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পন করেছিল। সেই চিন্তা থেকেই স্বাধীনতা জাদুঘর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর
সোহরাওয়ার্দীতে নির্মিত একটি বিশাল পরিকল্পনার অন্যতম অংশ এ জাদুঘর। এই নকশায় রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, তিনটি জলাধার, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্রবিশিষ্ট একটি ম্যুরাল এবং ১৫৫ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম। তবে পুরো নকশাটির প্রধান বিষয় হল একটি ৫০ মিটার বিশিষ্ট আলোক স্তম্ভ, যা স্বাধীনতা স্তম্ভ নামে পরিচিত। স্তম্ভটি কাচের প্যানেল দ্বারা নির্মিত। জাদুঘরটি এই স্তম্ভের নিচে অবস্থিত। পুরো জাদুঘরটি ভূগর্ভস্থ। এটিই বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর। জাদুঘর প্লাজাটি ৫৬৬৯ বর্গমিটার বিশিষ্ট টাইল দ্বারা আবৃত স্থান। জাদুঘরের মাঝখানে রয়েছে একটি ঝর্ণা, যাতে উপর থেকে পানি পড়ে।
যা আছে স্বাধীনতা জাদুঘরে
১৪৪টি কাচের প্যানেলে ৩০০-এরও বেশি ঐতিহাসিক আলোকচিত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা জাদুঘর। ঐতিহাসিক আলোকচিত্রের পাশাপাশি যুদ্ধের ঘটনা সম্বলিত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনও প্রদর্শিত হচ্ছে এসব কাচের প্যানেলে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিলিপি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে প্রচারণা সৃষ্টিতে তৈরিকৃত বিভিন্ন পোস্টারও জাদুঘরটিতে প্রদর্শীত হচ্ছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং স্থাপনার চিত্রও রয়েছে এখানে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে যে টেবিলে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব জোনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণ করে স্বাক্ষর করেন, তার একটি অনুলিপি রয়েছে জাদুঘরটিতে। তবে মূল টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে বলে জানালেন জাদুঘরের ব্যবস্থাপক গোলাম কাউসার।
কাটিয়ে উঠতে পারেনি সকল সীমাবদ্ধতা
স্বাধীনতা জাদুঘর এখনো সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও এখনো অনেক দৈন্যতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি জাদুঘরটির। কাচের প্যানেলে ঐতিহাসিক চিত্র ছাড়াও এখানে বড় পরিসরে নানা স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত নানা ধরনের বিষয় সংযুক্ত রাখার সুযোগ ছিল। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র রাখার ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু এখনো তা না হওয়ায় অনেক নিয়মিত দর্শনার্থী হতাশ।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন গোলাম কাউসার। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, অতি শীঘ্রই সেখানে টর্চার সেলের আদলে আরো কিছু স্থাপত্য কর্ম সংযুক্ত করা হবে। থ্রি ডি সিনেমা হলের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানালেন ব্যবস্থাপক গোলাম কাউসার। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সেখানে দৈনিক গড়ে ৭০০ জন দর্শনার্থী আসে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দৈনিক গড়ে ১০০ জন। তবে শীঘ্রই এই সংখ্যাকে আরো বড় করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কখন কীভাবে যাবেন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৫টি ফটক দিয়ে স্বাধীনতা জাদুঘরে যাওয়া যায়। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের কাছের ফটক এবং চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিপরীতে ছবির হাটের ফটক দিয়ে সহজে যাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে সময়সূচী প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হলেও শীতকালে জাদুঘরটি খোলা থাকে সকাল ন`টা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। শুক্রবার বিকেল আড়াইটা থেকে স্বাধীনতা জাদুঘর সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। জাদুঘরটিতে প্রাপ্তবয়স্ক দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ২০ টাকা, শিশু-কিশোরদের জন্য ১০ টাকা, বিদেশীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা নেওয়া হয়।
আআ/টিকে
আরও পড়ুন