ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘুরে এলাম ইউরোপের শেষ প্রান্ত ‘ক্যাবো দা রোকা’

এনামুল হক, পর্তুগাল

প্রকাশিত : ২০:৪১, ৭ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ২০:৪২, ৭ নভেম্বর ২০২১

পর্তুগাল এবং ইউরোপ মহাদেশের পশ্চিমের সর্বশেষ বিন্দু হল ‘ক্যাবো দা রোকা’। এই দশর্নীয় স্থানটি সিনট্রা পৌরসভার লিসবন জেলায় অবস্থিত। এই স্থানটি ইউরোপের সর্বশেষ বিন্দু হওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য বেশি আকর্ষণ করে।

পর্তুগালে বসবাস করছি প্রায় তিন বছর ধরে। ঘুরে বেড়ানোর শখটা এখনও রয়ে গেছে। বহু দিনের শখ ইউরোপের শেষ প্রান্ত দেখার। কিন্তু সেই সময় আর সুযোগ হয়ে উঠেনি। দু’একবার চেষ্টা করেও রওয়ানা দিতে পারিনি। এরই মধ্যে চলে আসলো বিশ্ব মহামারি করোনা। করোনায় সকলের জীবন যাত্রা একেবারে থেমে যায়। বর্তমানে পর্তুগালের করোনার পরিস্থিতি বেশ ভালো। 

পর্তুগাল সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে লক ডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ প্রায় তুলে নিয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্তুগালের সৌন্দর্য্য দেখার জন্য আসছে ভ্রমনপ্রিয় মানুষজন। রৌদ্রময় আকাশ দেখে মনে হয় এখনই সময় ঘুরে বেড়ানোর। কয়েকজন বন্ধু মিলে রওনা হলাম ক্যাবো দ্যা রোকা দেখার উদ্দেশ্যে। বাহিরের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রী। দুপুরের খাবার শেষ করে ঠিক ২টার সময় আমরা ছুটে চলা শুরু করলাম। সফর সঙ্গী হিসেবে আমার সাথে আছে, ছোট ভাই মাহাবুব আলম, তানভীরুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন ও নজরুল ইসলাম। 

পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে কেপ রোকায় (ক্যাবো দা রোকা) ৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লিসবন থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ১ঘন্টা ৩০মিনিট। আমাদের যাত্রা লিসবনের কায়েস দ্যা সদরে থেকে কাসকাইসের উদ্দেশ্যে। কাসকাইস পৌঁছাতে ট্রেনে করে সময় লেগেছে প্রায় এক ঘন্টা। কাসকাইস থেকে ৪০৩ নাম্বার বাসে কাবো দ্যা রোকা যেতে হয়। এই বাস ভ্রমনটি কেপ রোকার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও আনন্দময় যাত্রা। গাড়ি চলছে পাহাড় ঘেষা আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে। এক সাথে উপভোগ করছি উঁচু পাহাড় আর বিশাল আটলান্টিক মহাসগরের সৌন্দর্য্য। একপাশে সারি সারি উঁচু নীচু পাহাড় প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য অন্যপাশে দৃষ্টিনন্দন সচ্ছ জলরাশি ও সাগরের গর্জন দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম কেপ রোকায়।

সারি বদ্ধভাবে বাস থেকে নেমে পড়লাম আমাদের কাঙ্খিত জায়গা কেপ রোকায়। এই অঞ্চলটি আটলান্টিক মহাসাগরকে ঘেঁষে ১৪০ মিটার উপরে অবস্থিত। চারপাশ সবুজ ঘাসের উপর বিশাল পাথরের মাঝে দুটি রাস্তা চলে গেছে শেষ সীমানা। এই পথ ধরে আমরা সবাই সামনের দিকে যাচ্ছি। দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে উত্তল জলরাশির গর্জন। কিছু সময়ের মধ্যে চলে গেলাম শেষ প্রান্তে। উত্তাল আটলান্টিকের বিশাল ঢেউ এসে আঁচড়ে পড়ছে। 

সমুদ্রের ঢেউ বেশিরভাগ মানুষেরই মন ভালো করে দেয়৷ সমুদ্রের পানি জলকনা হয়ে বাতাসের সাথে মিশে শরীরে পড়ছে। অসাধারণ অনুভূতি কিছু সময়ের মধ্যে শীত শীত অনুভব করছি। যে যার মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছবি তুলছে। আবার কেউ ভিডিও করছে। ধীরে ধীরে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ২ঘন্টার মধ্যেই ঘুরে বেড়ানো শেষ করলাম। 

এই সুন্দর অঞ্চলটিতে রয়েছে একটি বাতিঘর, একটি বিশাল পাথর ক্রস, স্মারক পাথর, সমাধিস্থল, বোকা ডো ইনফার্নো (পাথরের গুহা), কাবো দ্যা রোকা ট্রেইল, কাবো দ্যা রোকা ক্লিফট এবং উদ্ভিদ বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন গভেষণার বস্তু। এছাড়াও সেখানে একটি স্যুভেনিরের দোকান এবং একটি ক্যাফে ও আবাসিক হোটেল রয়েছে।

এই স্থানটি সম্পর্কে পর্তুগিজ কবি লুইস কামেস বলেছেন ‘এটি সেই জায়গা যেখানেই ভূমি শেষ হয় এবং সমুদ্র শুরু হয়’। এই জায়গটি সূর্যাস্তের সময় বেশি জনপ্রিয়। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই মূহুর্তটি আমরা উপভোগ করতে পারিনি। কারণ এখানে সবসময় বাতাস থাকে, ধীরে ধীরে শীত বৃদ্ধি পায় সুতরাং শীতের পোষাক ছাড়া এখানে দীর্ঘ সময় ধরে না থাকাই ভালো। তাই দ্রুত আমাদের ফিরতে হল।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি