ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪

একদিনে কুমিল্লার ‘শালবন বিহার’ ভ্রমণ

মাজহারুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত : ১৫:৪৪, ২৫ আগস্ট ২০২২

শালবন বৌদ্ধ বিহার

শালবন বৌদ্ধ বিহার

ঋতুর পালাবদলে আর কয়েক মাস পরই আসছে শীতকাল। যাকে আমরা ভ্রমণের মৌসুমও বলতে পারি। এ সময় ভ্রমণপিয়াসী লোকজন ঘুরে বেড়ান নানা জায়গায়। অনেকেই আছেন যারা সময় স্বল্পতার কারণে ঘুরতে যেতে পারেন না। সে কারণেই একদিনে গিয়ে সব দেখে আবার ওই দিনই ফিরে আসা যাবে এমন জায়গাই পছন্দ অনেকের।

ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে একদিনে ঘোরার জন্য অনেক জায়গাই আছে। তবে আমি এমন এক জায়গার নাম বলব, যেখানে আপনি একদিনেই অনেক কিছু দেখতে পারবেন, পাবেন ঐতিহ্য ও প্রকৃতির ছোঁয়া। 

স্থানটি হলো- কুমিল্লার ‘শালবন বিহার’। এখানে প্রতিবছর শীতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়। 

‘শালবন বৌদ্ধ বিহার’ বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট। 

১৮৭৫ সালের শেষ দিকে বর্তমান কোটবাড়ি এলাকায় একটি সড়ক তৈরির সময় একটি ইমারতের ধ্বংশাবশেষ উন্মোচিত হয়। সে সময় আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষকে একটি দূর্গ বলে অনুমান করা হয়েছিল। ১৯১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধ্যক্ষ নলিনী কান্ত ভট্টশালী সে এলাকায় যান এবং অনুসন্ধান পরিচালনাকালে ধ্বংসাবশেষটিকে রণবংকমল্ল হরিকেল দেবের তাম্রশাসনের (খৃষ্টীয় ১৩ শতক) দূর্গ ও বিহার পরিবেষ্টিত পট্টিকেরা নগর বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যদিও অন্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এটি ছিল জয়কর্মান্ত বসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ।

শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। আকারে চৌকো শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। ধারণা করা হয়, এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন এবং ধর্মচর্চ্চা করতেন। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে যেখানে অতীতে প্রতিমা বা তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। অন্যদিকে চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার বাই ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে। 

নানা সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে।

এই বিহার থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ প্রত্নসম্পদ ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

টিকেট মূল্য
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারের পৃথক টিকেট ২০ টাকা করে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের জন্য টিকেটমূল্য পাঁচ টাকা করে। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য টিকেটমূল্য ১০০ টাকা। অন্য বিদেশি নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা করে টিকেট বিক্রি করা হয়।

যাতায়াত ও রাত্রিযাপন
আপনি ঢাকা বা চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে কুমিল্লা এসে নামবেন। এরপর আপনি কুমিল্লা শহর থেকে চলে যান টমছম ব্রীজ বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে সিএনজি স্ট্যান্ড পাবেন। লোকালে গেলে লাগবে ১০ টাকা আর যদি রিজার্ভ করে যেতে চান সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। আপনাকে নামাবে কোটবাড়িতে। সেখান থেকে অটোরিকশা করে যেতে হবে শালবন বিহার। ভাড়া নিবে ৫ টাকা।

এবার আসি, সেখানে গিয়ে যদি কেউ রাত্রিযাপন করেন, সে বিষয়ে- 

কেউ যদি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তাহলে আপনার জন্য কোনো চিন্তা হবে না থাকার ব্যাপারে।
এছাড়া কুমিল্লা ক্লাব, কুমিল্লা সিটি ক্লাবসহ বেশকিছু হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে এখানে। এসি কিংবা নন-এসি সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতি কক্ষে প্রতি রাত্রিযাপন খরচ হবে এক হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। 

এছাড়াও থাকার জন্য আছে- হোটেল চন্দ্রিমা, হোটেল সোনালী, হোটেল, শালবন, হোটেল, নিদ্রাবাগ, আশীক রেস্ট হাউস ইত্যাদি। ভাড়া ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।

লেখক: শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ।

এনএস//এএইচএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি