ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পল্লীকবির স্মৃতিঘেরা ফরিদপুরে একদিন

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ১৮:৪৬, ৪ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৯:৪৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ফরিদপুর বহু কারণেই বিখ্যাত। এই জেলায় রয়েছে বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দৃষ্টিনন্দন স্থান। পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের স্মৃতিবিজরিত ফরিদপুর বর্তমানে বহু ভ্রমণপিপাসুর গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সোজন বাধিয়ার ঘাট, জগদ্বন্ধু সুন্দর এর আশ্রম, ঐতিহাসিক সাতৈর মসজিদ, মথুরাপুর দেউল, পাতরাইল মসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরসহ নান্দনিক সব স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান দেখতে চাইলে বেরিয়ে পড়ুন আজ-ই।

ফরিদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে পল্লী কবি জসীম উদদীনের স্মৃতিবিজরিত বাড়ি। পুরনো এই  বাড়িটিতে ৪টি টিনের চার চালা ঘর ও কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র রয়েছে। বাড়ির চত্ত্বরে প্রদর্শন করা আছে কবির বিভিন্ন লেখা। পূর্ব ও পশ্চিমে পোর্শিদের বসতবাড়ী এবং দক্ষিণে ছোট একটি পুকুর রয়েছে। বাড়ীর উত্তরে কবির কবরস্থান। কবরস্থানের পাশ্বেই পাকা রাস্তা ও কুমার নদী আছে।

কবি  ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ জসীম উদ্দিনের মৃত্যু। বাড়িটির ডালিম গাছের নিচে শায়িত আছেন কবি। কবরস্থানে আরও শায়িত আছেন- কবির  বাবা আনছার উদ্দিন মোল্লা, মা আমেনা খাতুন, কবিপত্নী- বেগম মমতাজ জসীম উদ্দিন, ছেলে- কামাল আনোয়ার (হাসু),ছেলের স্ত্রী- জরীনা, কবির বড় ভাই মফিজ উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।

ফরিদপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্বে পল্লীকবি জসীম উদদীনের বাড়ীতে রিক্সা/ অটোরিক্সা এবং মাইক্রোবাস যোগে যাওয়া যায়। রিক্সা ভাড়া লাগবে ৫০টাকা। সেখান থেকে সোজন বাধিয়ার ঘাটে রিক্সায় যেতে ভাড়া লাগবে ২০ টাকা। সোজন বাধিয়ার ঘাটে গিয়ে দেখতে পাবেন নির্মল প্রকৃতি। ইট দিয়ে বাধানো এ ঘাটে পর‌্যটকদের ভিড় দেখা যায়।

 নদী গবেষনা ইনষ্টিটিউট

১৯৮৯ সালে ফরিদপুর শহরের উপকন্ঠে ৮৬ একর জমির উপর এক মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠে নদী গবেষণা ইনষ্টিটিউট। সেখানকার লাইব্রেরীতে হাইড্রলিক্স ও জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দেশী ও বিদেশী ১৩১৩টি বই, ২৫৭৫টি জার্নাল, ৫৮৩৫টি রিপোর্ট, প্রসিডিংসসহ ৩৯১১টি প্রকাশনা আছে। ফরিদপুর নতুন বাসষ্ট্যান্ড হতে ১ কিলোমিটার দূরত্বে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে নদী গবেষণা ইনষ্টিটিউটি অবস্থিত। রিক্সা / অটোরিক্সা / মাইক্রোবাস যোগে যাওয়া যায় সেখানে।

জগদ্বন্ধু সুন্দর এর আশ্রম

মহাবতারী শ্রী শ্রী প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের আবির্ভাব ২৮শে এপ্রিল ১৮৭১ সালে। মানবলীলা সংবরণ করেন ১৭ সেন্টেম্বর ১৯২১। তিনি শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা আষাঢ় ১৩০৬ রথযাত্রা উৎসবে। শ্রীরাম শ্রীঅঙ্গন মহানাম প্রচারের কেন্দ্রে পরিনণত হয়। তাঁর বিদ্যাজীবনের প্রথম আঠারো বছর বিদ্যাভাব, দশ বছর কর্মজীবন, পরবর্তী ষোল বৎসর আট মাস গম্ভীরালীলা নিমগ্ন থাকেন। মানবলীলা সংবরণের পরবর্তী মাসে বাংলা ১৩২৮ সনের ২ কার্তিক থেকে শ্রীধাম অঙ্গনে দিবস-রজনী অখন্ড মহানাম কীর্তন অব্যাহত রয়েছে।  তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ -হরিকথা, চন্দ্রপাত, ত্রিকাল ইত্যাদি।

ফরিদপুর পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন, ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে জগদ্বন্ধু সুন্দর এর আশ্রম অবস্থিত। রিক্সা / অটোরিক্সা / মাইক্রোবাস যোগে যাওয়া যায় সেখানে।

সাতৈর মসজিদ

মসজিদটি সম্পর্কে বহু গল্প এলাকায় প্রচলিত আছে।  যেমন, এক রাত্রে মাটি ফেটে গজিয়ে ওঠে মসজিদ খানা, মসজিদের ভিতরের খুঁটি হাসি-কান্না করে, যা আশা করা যায় তাই পাওয়া যায়, মসজিদের ইট বাড়িতে রাখলে উঁই পোকা লাগে না, যে কোনো ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় মসজিদের ধুলি গায়ে মাখলে, নিঃসন্তানদের সন্তান হয় মসজিদে এসে মানত করলে ইত্যাদি।  এ কথাগুলো বিশ্বাস করেই প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে বহু লোক এখানে আসেন। ফরিদপুর থেকে সড়কপথে মাঝাকান্দি হয়ে গোপালগঞ্জ মহাসড়কের সাতৈর নামক স্থানে মসজিদটি অবস্থিত।

মথুরাপুর দেউল

কারুকাজ খচিত প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট  দেউলটির গায়ে টেরাকোটার  দৃষ্টিনন্দন ও শৈল্পিক কাজ এবং শিলা খন্ডের ছাপচিত্র রয়েছে। রয়েছে মাটির ফলকের তৈরী অসংখ্য ছোট ছোট মুর্তি যা দশীনার্থীদের কাছে বেশ সমাদৃত। ফরিদপুর থেকে সড়ক পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মধুখালী-রাজবাড়ী ফিডার সড়কের দেড় কিলোমিটার উত্তরে দেউলটি অবস্থান।

পাতরাইল মসজিদ

মসজিদের আঙ্গিনায় আছেন মস্তান দরবেশ নাজিমদ্দিন দেওয়ানের মাজার। মাজারের দক্ষিণে ফকির ছলিমদ্দিন দেওয়ানের মাজার। জনশ্রুতি আছে যে, প্রজাদের পানীয় জলের সমস্যা নিরসনকল্পে ও ইবাদতের জন্য মসজিদের পার্শ্বে একটি দীঘি খনন করা হয়। পাতরাইল দীঘিরপাড় আউলিয়া মসজিদ নামেও সুপরিচিত। ফরিদপুর থেকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা গেলচত্ত্বর অঃতপর ভাঙ্গা-মাওয়া বিশ্বরোডে পূর্বদিকে পুলিয়া থেকে পাতরাইল মসজিদ যাওয়া যায়।

বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ এর অসাধারণ নৈপূন্য ও আত্মত্যাগের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালে স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামাতপুর গ্রামে এটি অবস্থিত। জাদুঘর ও পাঠাগারটিতে নানা ধরনের বইয়ের মধ্যে প্রতিটি বিষয়ের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা আলমারি। প্রতিটি আলমারির রয়েছে বিষয় ভিত্তিক নাম। আলমারিতে রয়েছে রয়েছে জীবনী, উপন্যাস, ধর্মীয়,বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, রচনাবলি, মুক্তিযুদ্ধ, সাধারণ জ্ঞান, শিশুসাহিত্য, কবিতাসমগ্রসহ নানা ধরনের বই। জাদুঘরে রউফের ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রীও রয়েছে। ঢাকার গাবতলী থেকে খুলনা রুটে চলাচলকারী যেকোনো পরিবহনের চেয়ারকোচে ভাড়া ২৫০ টাকা এবং সাধারণ ভাড়া ১৫০ টাকা। কামারখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশাভ্যানে জাদুঘর পর্যন্ত ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা।

কোথায় থাকবেন

ফরিদপুর শহড়ের ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশে থাকার জন্য ভাল মানের অনেক হোটেল রয়েছে। এসি-ননএসির রুম রয়েছে। ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

//এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি