ব্রাক্ষণবাড়িয়ার দর্শণীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে চাইলে…
প্রকাশিত : ১৮:১৮, ৯ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ২৩:০৪, ২৪ মার্চ ২০২২
ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় রয়েছে অনেক দর্শণীয় স্থপনা ও স্থান। এখানে মনোমুগ্ধকর অনেক কিছুই দেখার রেয়েছে। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এই জেলার সুনাম অনেক। জেলায় রয়েছে অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী ও দর্শণীয় স্থান। সময় ও সুযোগ থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এই জেলার দর্শণীয় ও মনোমুদ্ধকর জায়গুলো।
সতীদাহ মন্দির
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিদ্যাকুল ইউনিয়নের অন্যতম ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান এই মন্দির। আনুমানিক ১৭০০ সালের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে স্মৃতিসৌধ সতীদাহ মন্দির নির্মাণ করা হয়। সতীদাহ প্রথা ১৯২৯ সালের আগস্ট মাসের ১ তারিখ বাতিল করা করা হয়, তার আগে বিদ্যাকুট গ্রামের দেওয়ান বাড়ির ভরতদ্যাজ রায় বর্মন সম্প্রদায় ভূক্ত স্বর্গীয় কীর্ত্তি চন্দ্র রায় বর্মনের স্ত্রী স্বর্গীয় চন্দ্রকলা রায় বর্মন স্বামীর সঙ্গে সহমরণ করেন।
যেভাবে যাবেন- মন্দিরটি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের বিদ্যাকুট গ্রামের পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত। উপজেলা সদর হতে মাত্র ১৫ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে মেরকুটা বাজার পর্যন্ত যেতে হবে, সেখান থেকে ২০ টাকার রিকসা ভাড়া দিয়ে মন্দির পর্যন্ত যাওয়া যায় ।
নাসিরনগর মেদিনী হাওড় অঞ্চল
ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার উপজেলা নাসির নগর একটি প্রাচীন জনপদ। এর অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক মেদিনী হাওড়। মেদিনী হাওড় পরিচিতি পেয়েছে মেদীর হাওড় নামে। বাল্যাজুড়ি, শিংজুড়ি, উত্তর বাল্যাসহ কয়েকটি ছোট ছোট হাওড়ের মিলিত নাম মেদিনী হাওড়। অপূর্ব হাওড়ের আকর্ষণে সারা বছরই দর্শনার্থীরা এখনে ছুটে আসে। একেক ঋতুতে একেক সাজে সেজে উঠে হাওড়টি। তীব্র খরায় খাঁ খাঁ করা মাঠ সেজে উঠে বৃষ্টিস্নাত সবুজ গালিচায়। কখনো ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে। কখনোবা ভেসে যায় শ্রাবন ঢলে, বর্ষায় হাওড়টি যখন তার পরিপূর্ণরুপ প্রকাশ করে তখন পাশের গ্রামগুলিকে মনে হয় পানির উপরে ভাসছে। আর রাতের বেলা মনে হয় আকাশের তারাগুলি হাওড়ের জলে মিট মিট করে জ্বলছে। মাছ ধরার ছোট ছোট নৌকাগুলি মাছ ধরা ব্যস্ত। রাতটা কখনো জোস্না মাখা আবার কখনো আলো আধাঁরী লুকোচুরি।
ইচ্ছে করলে নাসিরনগর উপজেলায় একটি ডাক বাংলোতে থাকতে পারেন।
যেভাবে যাবেন- ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে নাসিরনগর উপজেলা সদর হয়ে ডাক বাংলোর পাশে গেলেই দেখতে পাবেন বিশালাকার মেদিনী হাওড়।
এমপি টিলা
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ধরাভাঙ্গা গ্রামে এমপি টিলা অবস্থিত। প্রতিবছরই এখানে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন। বিভিন্ন ঋতুতে এমপি টিলা বিভিন্ন সাজে সেজে উঠে বলে বছরের সব সময়ই এখানে দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। এমপি টিলা খুব কাছ দিয়ে বয়ে চলেছে মেঘনা নদী , তাই এমপি টিলা ভ্রমণে গেলে মেঘনা নদীর সৌন্দর্য দেখে আসতে ভুলবেন না।
যেভাবে যাবেন: নবীনগর অথবা নরসিংদী হতে হতে লঞ্চে করে যাতায়াত করতে পারেন।
আরিফাইল মসজিদ
মসজিদটি মোঘল আমলে ঐতিহাসি নিদর্শন। ৭০ ফুট দৈর্ঘ আর ২০ ফুট প্রস্থের মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদটির স্থাপত্য কলা কৌশল ও অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর কারণে দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো হবে। মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন।
যেভাবে যাবেন: ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা চত্বর থেকে প্রায় ১ কি.মি. পশ্চিমে মসজিদটির রয়েছে। তাই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড মোড় এসে সেখান থেকে সিএনজি করে সরাসরি মসজিদ দেখতে যেতে পারেন। উপজেলা চত্বর থেকে রিকসা যোগে কিংবা একটু কষ্ট করে পায়ে হেটেও যেতে পারেন সেখানে।
হাতিরপুল
কথিত আছে দেওয়ানরা হাতির পিঠে করে এখান দিয়ে যাতায়াত করতে করতে যখন ক্লান্ত বোধ করতেন তখন পুলটির গোড়ায় হাতি নিয়ে বিশ্রাম নিতেন, আর এই জন্যে পুলটি হাতির পুল নামে পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয় সৌন্দর্য পিপাষুরা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার উৎসাহীরাও বিকেলবেলার খানিকটা সময় এখানে এসে কাটিয়ে যান। অনেকেই পুল থেকে নিচে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে নৌকা চলাচল করা দেখেন ।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বারিউড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১০০ গজ পূর্বদিকে রাস্তার বামপাশেই হাতিরপুলটি রয়েছে। তাই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড মোড় এসে সিএনজিতে করে সরাসরি যেতে পারেন উপজেলা চত্বর থেকে সিএনজিতে করেও হাতির পুল দেখতে যেতে পারেন ।
জয়কুমার জমিদার বাড়ি
প্রায় ১২০ বছরের পুরুনো এই বুড়িশ্বরের জমিদার বাড়িতে বসবার করে মাত্র চারজন লোক। জায়গটা এতই নির্জন যে কোন সাধারণ মানুষ এখানে যেতে সাহস দেখায় না। যারা সাহস করে যান তারা দেখতে পান বাড়ির পাশেই রয়েছে দুটি খুবই সুন্দর পুকুর।
যেভাবে যাবেন: ব্রাক্ষণবাড়িয়ার গংগানগর থেকে নৌপথে যেতে পারেন। অথবা ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বুড়িশ্বর থেকে ১০ মিনিট পায়ে হেটে জমিদার বাড়িতে যেতে পারেন এছাড়া বুড়িশ্বর ইউনিয়নের যেকোন স্থান থেকে যাতায়াতের জন্য অটোরিকসা অথবা সিএনজি পেয়ে যাবেন।
কেল্লা শহীদ মাজার
কেল্লা শহীদ মাজারটি কেল্লা শহীদের দরগাহ হিসেবে সমগ্র দেশব্যাপী পরিচিত। বছরের সব সময়ই মাজারের ভক্তগণ ও দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। আর প্রত্যেক বছর কেল্লা শহীদের মাজারে ওরসের সময় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এখানে। আর তাই প্রাণচঞ্চল পরিবেশ দেখতে ইচ্ছে হলে ওরশের সময় যাওয়া উত্তম, আর যদি চান নীরিবিলি পরিবেশে দেখতে তাহলে বছরের অন্য দেখে আসতে পারেন।
যেভাবে যাবেন: ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ার খড়মপুরে মাজারটি অবস্থিত। কাউতলী থেকে লোকাল সিএনজিতে করে যাতায়াত করা যায়।
এসএইচ/
আরও পড়ুন