ঘুরে আসুন কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত : ১৭:১০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২০:৪১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ভ্রমণ পিপাসুরা যেতে পারেন কুড়িগ্রাম জেলায়। সেখানে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম- চান্দামারী মসজিদ, শাহী মসজিদ, চণ্ডী মন্দির, দোলমঞ্চ মন্দির, ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি, চিলমারী বন্দর, মোগলবাসা ভাটলার সুইচগেট, ধরলা ব্রিজের পাড়- পিকনিক ষ্পট, ঘোগাদহ বাজার। কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা। দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ধুবড়ী জেলা ও দক্ষিণ শালমারা মানকার চর জেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলা অবস্থিত।
চিলমারী বন্দরঃ
চিলমারী বন্দর বিভিন্ন উৎসবে লাখো মানুষের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠে। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমন পিপাসুরা ছুটে আসে। সব বয়সী মনুষের পছন্দের জায়গা এটি। চিলমারি বন্দর সংলগ্ন ব্রক্ষপুত্র দিয়ে ব্রিটিশ আমলের মতো বড় বড় জাহাজ চলাচল না করলেও নৌপরিবহন ব্যবসাটি এখনোও টিকে আছে।
কিভাবে যাওয়া যায়: কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ৩৫ কিমি দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত চিলমারী বন্দর। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটো (ইজি বাইক) যোগে সরাসরি যাওয়া যাবে চিলমারীর বন্দরে।
সুইচগেটঃ
বিভিন্ন উৎসবে দর্শনার্থীদের ভীড় বেশি থাকলেও ভ্রমনের জন্য বছরের যে কোন সময়ই যাওয়া যায়। বৃষ্টির সময় নদীতে পানি অনেক বেশি হয়ে বন্যার আশংকা দেখা দিলে গেইটটি বন্ধ করে দিয়ে নদীরে পানির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর দক্ষিনে লম্বা গেইটটিতে সর্বমোট ১৬ টি গেইট রয়েছে।
কিভাবে যাওয়া যায়: কুড়িগ্রামের মোগলবাসার ৬ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই সুইচ গেইট, অটোরিক্সা যোগে খুব সহজেই যেতে পারে্ন গেইটটি দেখতে।
চান্দামারী মসজিদঃ
দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চান্দামারী। মসজিদটিতে সুলতানী আমলের শিল্প বৈশিষ্ট্য ও মোগল স্থাপত্যকলার সমন্বয় ঘটেছে। মোঘল আমলের এই মসজিদটিতে রয়েছে তিনটি গম্ভুজ ও তিনটি মেহরাব। মসজিদটির অবস্থান কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়ায়। সড়কপথে রাজারহাট উপজেলা থেকে ৪ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মসজিদটি অবস্থিত।
ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে করে কুড়িগ্রাম যেতে পারেন। কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে নেমে অটোরিক্সায় করে যেতে হবে রাজাবাজার হাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, কার্যালয়ের কাছেই রয়েছে মসজিদটি। চান্দামারী মসজিদ ছাড়াও কুড়িগ্রামে আরো অনেক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শাহী মসজিদ।
চন্ডি মন্দিরঃ
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত মন্দিরটি দেখতে অনেকটা কালীমন্দিরের ন্যায়। ভূমিকম্পে এটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখানে নতুন একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। বাহারবন্দ পরগণার সদর দপ্তর এবং জমিদার ছিলেন রাণী সত্যবর্তী। তিনি এখানেই ছিলেন। কালীমন্দির নামে আরেকটি মন্দির ধামশ্রেণীতে সিদ্ধেশ্বরী রয়েছে।
চন্ডিমন্দিরটি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিমি পূর্বদিকে ধামশ্রেণী নামক স্থানে অবস্থিত। ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে করে কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়, কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটোরিক্সায় করে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় যাবেন, তার পাশেই মন্দিরটি রয়েছে।
শাহী মসজিদঃ
মসজিদের সামনেই রয়েছে মনোরম সুন্দর দিঘি। চারপাশে ৩ ফুট উঁচু প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত মসজিদের সামনে রয়েছে ৩টি দরজা ছাড়াও একটি সুদৃশ্য প্রবেশ তোরণ, ২টি মিনার এবং চার কোণায় ৪টি উচুঁ মিনার রয়েছে। মিনারগুলোর পাশে আছে আরো ৮টি ছোট ছোট মিনার । ৩টি বড় আকৃতির গম্বুজ রয়েছে ছাদের মাঝখানে। মসজিদটিতে কোন শিলালিপি না থাকলেও অনুমান করা হয় মোগল স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত মসজিদটি ২০০ বছরের পুরাতন ।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা সদর থেকে ১ কিমি উত্তর-পূর্ব দিকে ব্যাপারীপাড়া শাহী মসজিদ অবস্থিত। যাতায়াতের জন্য রিক্সা ও অটোরিক্ষা রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় অনেক দৃষ্টিনন্দন মন্দির রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চন্ডি মন্দির।
ভিতরবন্দ জমিদার বাড়িঃ
জমিদারবাড়িটি কাঠের তৈরি। বাড়ির অর্ধেকটা ব্যবহার করা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় হিসাবে, আর বাকি অর্ধেকটা এখন আর নেই। ইংরেজ আমলের শুরুর দিকে রাশাহীতে ছিল ভিতরবন্দ গরগণার সদর দপ্তর। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অব্যবহিত পরে এই পরগণার সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয় নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দে।
জমিদারবাড়িটি কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ১৬ কিমি দূরে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভিতরবন্দ গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে করে কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়, কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটোরিক্সায় করে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের সামনে যেতে হবে। তার কাছেই রয়েছে ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ি।
সোনাহাট স্থলবন্দরঃ
নদীর তীরবর্তী হওয়ার কারণে ব্রিটিশ আমলে সোনাহাট স্থল বন্দরটি বিখ্যাত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। এখনো এর গুরুত্ব কমেমি। সোনাহাট স্থল বন্ধরটি ভারতের আসাম এবং পশ্চিম বঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত যা ভারতের সেভেন সিষ্টার বলে খ্যাত অঙ্গ রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে। এ বন্দর দিয়ে ভারত, আসাম ও নেপাল হতে কয়লা, কাঠ, টিম্বার, পাথর, সিমেন্ট, চায়না ক্লে, বল ক্লে, কোয়ার্টজ, রাসায়নিক সার, কসমেটিক সামগ্রী, পশু খাদ্য, বিভিন্ন ধরণের ফলমূল, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, ডাল, গম, বিভিন্ন ধরণের বীজ, তামাক ডাটা প্রভৃতি মালামাল আমদানী করা হয়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় ইলিশ মাছ, মেলামাইনের তৈরী বাসনপত্র এবং ঔষধ সহ কতিপয় মালামাল।
কিভাবে যাওয়া যায়: ভূরুঙ্গামারী উপজেলা হতে সোনাহাট স্থল বন্দরের দুরত্ব ১২কিলোমিটার। এই দুরত্বের মাঝখানে ১৮৮৭ সালে তৈরি ৪৫০মিটার লম্বা একটি লোহার তৈরি রেলওয়ে ব্রিজ অবস্থিত। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের সোনাহাট সীমান্তে এ স্থল বন্দর অবস্থিত।
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রামে এসে অথবা ঢাকা টু ভুরুঙ্গামারীর ডে ও নাইট কোচে ভুরুঙ্গামারীতে নেমে মাত্র ২০ টাকা অটোরিক্সা ভাড়ায় সোনাহাট স্থল বন্দর যেতে পারেন।
বর্ডারহাটঃ
বাংলাদেশের বর্ডারহাট গুলোর মধ্যে রাজিপুর সীমান্তে একটি রয়েছে। পাহাড় এবং নদীর ঠিক মধ্যখানেই এই হাট। সপ্তাহে ২দিন এখানে বাজার বসে। খুব সহজে পাশ সংগ্রহ করে আপনিও যেতে পারেন বর্ডার হাটে।
কিভাবে যাবেন- বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত হতে সহজেই কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়। কুড়িগ্রাম যাওয়ার পর বাস অথবা অটো সিএনজি যোগে রাজীবপুর হয়ে যেতে পারেন বালিয়ামারী সীমান্ত হাট।
এসি
আরও পড়ুন