ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪

সামাজিক সংগঠনের ইতিবাচক উদ্যোগেই এগিয়ে যাবে নারী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:২৫, ৮ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২৩, ১১ মার্চ ২০১৮

শবনম শেহনাজ চৌধুরী

শবনম শেহনাজ চৌধুরী

বর্তমানে নারীরা পরিবার ছাড়াও দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছেন। তাদের একনিষ্ট প্রচেষ্টায় অর্থনীতির চাকা দিন দিন আরও বেশি সচল হচ্ছে। বিশেষ করে চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে প্রশংসিতভাবে।

গত কয়েক বছর ধরেই সামগ্রিক অর্থনীতিতে নারীর অবদান ঊর্ধ্বমুখী। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও যে কাজগুলো শুধু ছেলেদের দ্বারাই করা সম্ভব বলে মনে করা হতো এমন কাজগুলো আজ নারীরা সফলভাবে করছেন। এছাড়া সামাজিক সংগঠনগুলো যদি ইতিবাচক উদ্যোগ নেয় তবে সমাজ, অর্থনীতি তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নারীর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে। এমনটিই মনে করেন ইভিন্স রিটেইল লিমিটেডের (নোয়া) ম্যানেজিং ডিরেক্টর শবনম শেহনাজ চৌধুরী

৮ মার্চ ‘বিশ্ব নারী দিবস’ উপলক্ষ্যে একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। শবনম শেহনাজ চৌধুরী আরগন ডেনিমস্ এবং ইভিন্স টেক্সটাইল লিমিটেডের যথাক্রমে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি ইভিন্স গার্মেন্টস, ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট, ইবিটেক্স এপারেলস এবং ইবিটেক্স ফ্যাশন এবং ইভিন্স লিমিটেডের ডেপুটি মেনেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন রিপোর্টার মাহমুদুল হাসান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কি ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী: একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় মূলধন তার নতুন কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছা। কত টাকা পূঁজি আছে বা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা কিন্তু নয়। একজনের অর্থনৈতিক-সামাজিক স্বচ্ছলতা না থাকতে পারে, কিন্তু  তার যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে তাহলে সে একদিন বড় উদ্যোক্তা হতে পারবে।  একজন উদ্যোক্তা তার রাস্তা নিজে তৈরি করেন। এখানে ঝুঁকির সম্ভাবনা শতভাগ। তাই যারা এপথে আসতে চায় তাদেরকে সবার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেওয়া উচিৎ। আমি মনে করি গ্রামের যে মা বোন হাস-মুরগী বা গরু-ছাগল লালন পালন করেন তারাও উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। তাদেরকেও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী: প্রথমেই যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেটি হলো প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত এবং সঠিক ধারণার অভাব। প্রথমদিকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি, কর প্রদান, ব্যাংক লোন বা সরকারি সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা এমন নানা বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আর এসব বিষয়ে নির্ভুল তথ্য পাওয়ার কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। এছাড়া নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জটিল পদ্ধতিকে অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে আমি মনে করি। স্বাভাবিকভাবেই, শুরুতে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পূঁজি কম থাকে, তাই প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ীর চেয়ে ব্যাংক ঋণ পাওয়া তার পক্ষে অনেক বেশি কঠিন হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ বা অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনেক সময় উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে। তবে বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্যোক্তা রয়েছে, যাদের কাছ থেকে নতুনরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা পেয়ে থাকেন। এছাড়া ইন্টারনেট ও যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণেও অনেক সহজ হয়েছে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নারীদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়া পেছনে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী: একজন পুরুষের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও, শুধু নারী হওয়ার কারণে তাকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি অনেক সময় পরিবারের দিক থেকেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতি প্রণয়নের অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থ আদান প্রদানের সহজ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এ সকল ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তবে বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নারীরা আগের মত সমস্যার মুখোমুখি হননা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নারীদের অগ্রগতিতে চাই নারী ‍উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় বলে আপনি মনে করেন?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী: নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপক সামাজিক স্বীকৃতি থাকলে নারীরা এ ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবে এবং নারীদের কাজে গতি আসবে। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে প্রশাসনিক জটিলতাগুলো দূর করার মাধ্যমেও নারীদের সামনে নিয়ে আসা সম্ভব। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব নীতিমালা প্রনয়ণ করতে হবে। নারী উদ্যোক্ততাদের বিনিয়োগের জন্য সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে তারা নিজেদের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে একটা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।

একুশে টিভি অনলাইন: নারীরা এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, এর কারণ কি?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী:  অনেক ক্ষেত্রে নারীরা তাদের নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন নয়। রাষ্ট্র কর্তৃক তাদের অধিকার এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের অধিকার আদায়ে তাদেরকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। 

একুশে টিভি অনলাইন: নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে আপনার পরামর্শ কী?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী: নারীর প্রতি বৈষম্য, নিষ্ঠুরতা, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নসহ সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ না করলে রাষ্ট্রের অগ্রগতি সম্ভব নয়। কেননা দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা এই নারী সমাজকে পিছিয়ে রেখে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। শিক্ষা, চাকরি ও রাজনীতিতে যে সকল নারী নিজ মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নেতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, আন্তরিকতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যৌতুকের মতো অভিশাপ প্রথা এখনো সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

শবনম শেহনাজ চৌধুরী: পারিবারিক সহিংসতার অনেকগুলো কারণের মধ্যে যৌতুক একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বর্তমানে এটি দরিদ্র পরিবার ছাড়াও স্বচ্ছল ও তথাকথিত শিক্ষিত পরিবারেও এর প্রভাব দেখা যায়। যৌতুক না পেলে শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যৌতুক নেওয়া বা দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও একে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। তাই আমি বলব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি আরও বেশি আন্তরিক হন তাহলে তা বন্ধ করা সম্ভব।

এমএইচ//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি