নারী বিপ্লবের পথনির্দেশক রাসিমণি হাজং (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ৮ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ১৫:৪৪, ৮ মার্চ ২০২২
নারী বিপ্লবের পথনির্দেশক গৌরবোজ্জ্বল টঙ্ক কৃষক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের প্রথম শহীদ রাসিমণি হাজং। নিঃসন্তান হয়েও হাজংমাতা গেল আট দশক ধরে পূজনীয়। বীরত্বের জন্য রাসিমণিকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার ও তার সহযোদ্ধা কুমুদিনী হাজংকে একুশে পদকে ভূষিত করে রাষ্টীয় মর্যাদার দাবি হাজং নেতাদের।
বিপ্লবীনেতা মণি সিংহের পরেই টঙ্ক আন্দোলনে অবদান রেখেছেন রাসিমনি হাজং ও কুমুদিনী হাজং। রাসিমনি শহীদ হওয়ার পর নেতৃত্ব দেন কুমুদিনী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও ৭৬ বছর আগের সেদিনের স্মৃতি বুকে ধারণ করেই নেত্রকোনার নিভৃত পল্লী বিরিশিরিতে বেঁচে আছেন আজও।
ফসল হোক বা না হোক, জমিদারকে খাজনা দেবার ঘুণ্য টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসীদের নেতৃত্বে ১৯৩৭ সালে শুরু হয় কৃষক আন্দোলন। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে রাসিমনিসহ বেশ কয়েকজন হাজং নারী-পুরুষ শহীদ হলে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
উনিশ শতকের শেষভাগে গারো পাহাড়ের পাদদেশে জন্ম রাসিমণি হাজং-এর। ধাত্রীবিদ্যায় পারদর্শী এই নারীনেত্রী শুধু অধিকার আদায়ের আন্দোলনে-সংগ্রামেই নয়, হতদরিদ্র-অসহায় আদিবাসীদের রোগে-শোকেও ছিলেন নির্ভরতা ও আশ্রয়স্থল।
হাজংমাতা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সদস্য মতি লাল হাজং বলেন, “অন্যায়-অত্যাচার সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে যে এগুলো আসলেই রুখে দেওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ রাসিমণি হাজং।”
হাজংমাতা মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট সদস্য স্বরবিন্দু হাজং বলেন, “ব্রিটিশদের বিতারিত করার জন্য তার যথেষ্ট ভূমিকা আছে। যেগুলো আমরা ইতিহাস থেকে পেয়েছি। এখন এই জায়গাটাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আশা করছি।”
১৯৫০ সালে টঙ্ক ও জমিদারি প্রথা উচ্ছেদে সমাপ্তি ঘটে টঙ্ক আন্দোলনের। তেভাগা, নানকার ও নাচোল কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি এটিও বাংলার কৃষকদের অধিকার আদায়ে রেখেছে অবিস্মরণীয় অবদান।
দুর্গাপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারার একাডেমি পরিচালক সুজন কুমার হাজং বলেন, “তাকে যদি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয় তাহলে রাষ্ট্র সম্মানিত হবে, এ দেশ সম্মানিত হবে এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনধারা ও তাদের সংস্কৃতি আলোকিত হবে।”
শুধু গারো পাহাড়ের পাদদেশেই নয়, রাসিমণি আজ সারাদেশেরই নারী ও কৃষক সংগ্রামের প্রেরণা। আত্মত্যাগের ঘটনাস্থল দুর্গাপুরের বহেরাতলি গ্রামে ২০০০ সালে নির্মিত স্মৃতিসৌধে প্রতি বছরের ৩১ জানুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় হাজংমাতাসহ শহীদদের প্রতি।
এএইচ/
আরও পড়ুন