নারী দিবসে একুশের আয়োজন
প্রকাশিত : ২০:৫৬, ৮ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৪২, ৯ মার্চ ২০১৯
বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতার মতো মহীয়সী নারীদের দেখানো পথ এগিয়ে নিতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, এসব মহীয়সীরা নারী জাগরণের যে পথ দেখিয়েছিলেন, সে পথ ধরেই আজ আমরা রাষ্ট্রীয় অঙ্গন থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছি। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এর উদ্যোগে নারী উন্নয়ন নীতিমালা তৈরির পর থেকে নারীদের এ অগ্রযাত্রা বেগবান হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার একুশে টেলিভিশনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) মোহম্মদ আলী শিকদার সকল নারীকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ, শিল্পী সামিনা চৌধুরী।
একুশে পরিবারের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ৬৫জন নারী সংবাদ কর্মী ও কর্মকর্তাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রঞ্জন সেন, বার্তা সম্পাদক ও অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর দেবাশীষ রায়, অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোহসিনা রহমান, মার্কেটিং বিভাগের প্রধান সিরাজুম মুনিরা ডালিয়া, জিএম নাসির হোসেন, ডিসিএফও সাত্বিক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নারীরা আজ রাষ্ট্রীয় অঙ্গন থেকে সমাজের সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৭ সালে নারী নীতিমালা করার পর থেকে নারীর অগ্রযাত্রায় নানা বাধা দূর হয়েছে। তিনি বলেন, একুশে টেলিভিশনে যারা কাজ করেন, তাদের শতকরা ২০ ভাগ নারী জেনে আমি আনন্দিত। আমাদের সংসদে এখন নারী ২০ ভাগের চেয়ে একটু বেশি। রাজনীতি করে সংসদে আসার ক্ষেত্রে নারীরা অন্যদের তুলনায় সুযোগ একটু কম পায়। সেখানেও যখন আমরা ২০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছি, তখন বলবো স্বাধীনতার পর নারী আজ অনেক এগিয়েছে। তবে একুশে টেলিভিশনেও নারী ২০ ভাগ হয়েছে এ জন্য তাদের অভিনন্দন। কিন্তু এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।
মেয়েরা আজকে রাজনীতি, অর্থনীতি বা বিজ্ঞানের জগৎ সব ক্ষেত্রেই যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের নিজ গুণেই তা আগাচ্ছে। এখন প্রয়োজন তাদের অধিকার নিশ্চিত করা। তাদের প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, আমাদের জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা করেছিলেন। তারপর থেকে নারীদের অগ্রযাত্রা অনেক বেগবান হয়েছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, গত দেড়শো বছর ধরে যারা আমাদের এই পথ তৈরি করেছেন, সেই বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ আজকের অগ্রজ নারী সবার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। পুরুষদের প্রতিও আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। কারণ আজকাল পুরুষদের চিন্তায়ও পরিবর্তন এসেছে। এতোদিন যে কাজগুলো আমরা শুধু নারীর বলে মনে করতাম, এখন সেসব কাজে পুরুষও নারীর পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে।
নারী-পুরুষ উভয়ই সমান এই বিষয়টি আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক এবং তারা একে অন্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশাপাশি এগিয়ে যাবেন। একে অন্যের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেবেন। আমাদের সমাজসহ সারা বিশ্বে নারীর প্রতি যে সহিংসতা, যে প্রতিবন্ধকতা সেটা আমরা দূর করতে চাই। সেই জন্য মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস-দুর্নীতি এই সমাজ থেকে দূর করতে হবে।
এ সময় বিশেষ অতিথি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা বাংলাদেশে নারী দিবস উৎযাপন করতে পারছি। এর আগে কিন্তু পারিনি। আমরা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসছি। নারীর আকাঙ্খাকে, নারীকে সম্মান জানাতে হবে। নারী কখনও ছোট নয়। নারী পূর্ণাঙ্গ মানুষ। নারীর অধিকারই মানবাধিকার। মানুষের অধিকার নিয়েই আমরা বাঁচবো। একটা স্বাধীন-স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাব। ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবো। নারীদের আজ সময় আসছে দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাবার। মানবিক অধিকার নিয়ে বাঁচবার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. অধ্যাপক নাসরীন আহমেদ বলেন, একুশে টেলিভিশনে এতো সংখ্যক মেয়েরা কাজ করে আমরা আগে জানতাম না। কর্মক্ষেত্রে নারীর এ সংখ্যাধিক্যে বোঝা যাচ্ছে স্বাধীনতার পর কর্মক্ষেত্রে আমাদের মেয়েদের অবস্থান অনেক বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আজ গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই দৃশ্যমান। আজ নারীরা সর্বত্রই যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। এ জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ দেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে। এখন আমরা যেমন নারীবান্ধব সরকার পেয়েছি, সেটা আগে কখনও পায়নি। তাই সব নারীর কাছে আমার আহ্বান নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে এক সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শিল্পী সামিনা চৌধুরী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে পৃথকীকরণ না করে আমরা একসাথেই সবাই হেঁটে যেতে চাই। আমি আমার স্বামী, ভাই-বোনের সাথে এভাবে একইসাথে হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারলেই আমাদের ছেলে-মেয়ে বিভেদটা আর থাকবে না। আমরা এক সঙ্গে সবাই আগাবো, আমরা ভালো থাকবো। মনে রাখতে হবে নারী স্বাধীনতা মানে কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নয়, মেয়ে মানেই আমরা একটু বেশি কাজ করতে পারি। আমরা ভাবতে পারি বেশি। আমাদের সেই শক্তিটা আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেভাবেই চলবো যেন পুরুষরা বলতে না পারে যে স্বাধীনতা মানে নারী স্বেচ্ছাচারি হয়ে গেছে। এরপর তিনি কোরাস গান শুরু করেন- জাগো নারী জাগো বহ্নি শিখা, জাগো শাহা সীমান্তে রক্তে টিকা...।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) মোহম্মদ আলী শিকদার বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস সারা বিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও সর্বোচ্চ ও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। আমরা একুশে পরিবার অত্যন্ত স্বল্প এবং ছোট আয়োজনের মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করার চেষ্টা করছি।
আমাদের এ ছোট্ট পরিসরে আমরা এমন অতিথিদের পেয়েছি। যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অঙ্গন থেকে সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। সেখানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ আমরা দেখছি না। আমরা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সহ সব অতিথিদের স্বাগত জানাই। আপনাদের আগমনে আমরা অভিভূত-আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি আমাদের যারা নারী কর্মকর্তা আছেন, তারা উৎসাহিত হবেন, আনন্দিত হবেন। আগামীতে আরো ভালো কাজ করার জন্য অনুপ্রাণীত হবেন।
তিনি আরো বলেন, একুশ একটি চেতনার নাম। একটি আদর্শের নাম। একটি দর্শনের নাম। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযু্দ্ধের অপর নাম একুশ। সেই একুশ নামের প্রতীক হিসেবে আমরা কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি। বঙ্গবন্ধুর কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলি। এই আদর্শকে ধারণ করেই এগিয়ে যাব। আমরা সবাই মিলে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাব। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ দেখতে চাই।
সবশেষে ৫২, একুশ সর্বোপরী ৭১ এর চেতনার আলোকে একুশে টেলিভিশন পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে একুশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নারীকে এগিয়ে নিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।
এ সময় মহীয়সী নারীরা যে পথ দেখিয়ে গেছেন তাদের আদর্শ ধারণ করেই নারীদের আরো এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনেরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে নারী-পুরুষ সর্বোপরী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তারা।
অর্থনীতি, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই যোগ্যতার সাথে অবদান রাখছেন নারীরা, এ অগ্রযাত্রাকে বাধাহীন ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা চান একুশে টেলিভিশনের বিভিন্ন বিভাগের নারীরা।
আরকে//এসি
আরও পড়ুন