নারীর পথে পথে বাধা
প্রকাশিত : ১১:১৯, ৮ মার্চ ২০২০
দিনে দিনে উন্নতি হচ্ছে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার। তার সঙ্গে বাড়ছে শিক্ষার হার। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রোভিসি, রাষ্ট্রদূত, নির্বাচন কমিশনার, তথ্য কমিশনার, সচিব-যুগ্মসচিব, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রভৃতি অবস্থানে নারীরা কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
সমাজের সব স্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় নারী আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি দৃশ্যমান। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের শতভাগ উপস্থিতি। আজ বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তার সিংহভাগ কৃতিত্ব আমাদের নারীদের। স্বাস্থ্যখাতে নারীর অংশগ্রহণ এখন অর্ধেকেরও বেশি। এদিকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের ৮০ শতাংশই নারী, যারা নানারকম ক্ষুদ্র উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত। সারাদেশের স্কুলগামী মেয়ে, শহরাঞ্চলের পোশাক কারখানার নারীশ্রমিক এবং গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা নারীরা মিলে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতিকে অনেকটাই বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এই তিন খাতের সঙ্গে যুক্ত কিশোরী ও নারীদের ঘরের বাইরে চলাফেরা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নারীর অগ্রযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এর বাইরে অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কর্মস্থল যথা সরকারি-বেসরকারি ও আধাসরকারি অফিস-আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। তারপরও কোথায় যেন একটি বাধা। নারীর অধিকার অর্জনের পথ এখনও মসৃণ নয়।
নারীনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে, নারীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। তবে সুযোগ ও অধিকারের বৈষম্যও বড়। দেশে এখনও নারীর আয় পুরুষের তুলনায় কম। সমতার চ্যালেঞ্জও সবখানে। নারীর উন্নয়নের প্রশ্নে দেশ অনেকটা এগিয়ে গেলেও সমতার প্রশ্নে এখনও আশাতীত সফলতা নেই।
সংবিধানের সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমতার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা ঘটে না। প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী ঘরে-বাইরে বিভিন্ন বৈষম্য-পার্থক্য-প্রভেদ-অসমতার শিকার হয়। ধর্মীয় আইনের অপব্যবহারের কারণেও তারা বৈষম্যের শিকার হয়। আর এইসব অসমতার কারণেই দিন দিন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
দেশী-বিদেশী বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও গবেষকদের মত, সবার আগে নারী তার ঘরেই মূল্যহীন। তারা গৃহস্থালির কাজে যে শ্রম দিচ্ছে তাতে তাদের অর্থনৈতিক মুল্যায়ন নেই। তাই সমাজে নারীর অবস্থানকে সুসংহত করতে এধরনের কাজে নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
আমাদের দেশে গৃহকর্মের ৮০ শতাংশই করেন নারীরা, কিন্তু তাদের কাজের স্বীকৃতি না থাকা তাদের ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম বাধা। বৈশ্বিকভাবে ৪২ শতাংশ নারী শুধুমাত্র পারিবারিক সেবার কাজেই নিয়োজিত।
সংশ্নিষ্টদের মতে, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে দূর করতে হবে নারী-পুরুষ বৈষম্য। পুরুষতন্ত্রকে উৎপাটন করতে হবে সমূলে।
তবে আশার কথা হচ্ছে দেশে নারীরা এখন অনেকটা এগিয়ে গেছে। তারা আজ সংসার সামলানোর পাশাপাশি রাষ্ট্র চালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বিশ্বে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল শীর্ষে। সে বছর বিশ্বের ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৪৮তম। ২০১৭ সালের তুলনায় এটা ছিল ২৮ ধাপ অগ্রগতি। প্রতিবেদনটি বলছে, এমনটা সম্ভব হয়েছে অর্থনৈতিক সুবিধা এবং অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে।
তারপরও নারীর ক্ষমতায়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। নইলে সার্বিকভাবে নারীর হতদরিদ্র অবস্থা ঘুচবে না। কেবল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়িয়ে এ উদ্দেশ্য সাধন করা যাবে না। নারী নিজেরটা নিজে করে খেতে সক্ষম। তার সে যোগ্যতা আছে। কেবল দরকার তার অধিকার ভোগের পথে থাকা অন্তরায়গুলো অপসারণ করা।
এসএ/
আরও পড়ুন