জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি রোধে শিক্ষার্থীদের সামজিক উদ্যোগ
প্রকাশিত : ১৩:৫৪, ৫ মার্চ ২০১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন শুধু ক্যাম্পাসে নয়, সারাদেশে সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সামাজের সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মাদক ও বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করছে। এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটি ‘শিক্ষা ও সামজিক উন্নয়নের জন্য বৃত্তি’ এই অঙ্গীকার নিয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইতোমধ্যে ৭০৪ জন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে চার বছর মেয়াদী প্রতিমাসে প্রত্যেকেই দুই হাজার ৫০০ টাকা করে বৃত্তি প্রদান করে আসছে।
বৃত্তির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম শীর্ষক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে।
এবিষয় জানতে চাইলে সংগঠনের সহাসচিব রঞ্জন কর্মকার একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার লক্ষ্যে আমরা গত বছর সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এবং বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করি। তারা নিজ নিজ গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিরোধ ও সচেতনমূলক বিভিন্ন সেমিনার করে অংশ নেন।
শীতকালীন ছুটিতে গত বছর ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং যুব সমাজের সঙ্গে উল্লেখিত জনগণের সচেতন করে গড়ে তোলার কাজ করেন।
রঞ্জন কর্মকার আরও জানান, অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তিপ্রাপ্ত মোট ৬১০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে ছাত্রী ২২৫ এবং ছাত্র ৩৮৫ জন। তারা মোট ১৬০টি গ্রুপে আট বিভাগের ৬০ জেলায় একা হাজার ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং এক হাজার ৬০০ গ্রামে এ প্রচারাভিযান অংশ নেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামী গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আরও ৬০০ শিক্ষার্থীকে এ অভিযানে যুক্ত করবো আশা করি।
সামজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময়কালে বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের সঙ্গে জড়িত। বাল্য বিবাহের কুফল সর্ম্পকে এখানও গ্রামের মানুষের অজানা। আমার চার থেকে পাঁচটা বাল্য বিবাহ ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের বড় অর্জন। আমরা গ্রামের মানুষকে বুঝাতে পেয়েছি, বাল্য বিবাহ সবার জন্য ক্ষতিকর। বুঝাতে সক্ষম হয়েছি উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে অভিভাকদের সচেতন হতে হবে।
এবিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়কালে নবনিতা সরকার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যে নারী পুরুষ সমান অধিকারের কথা বলি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি শহরে নারীর কিছুটা উন্নতি হলেও গ্রামের নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে। সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হলে পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
অভিজ্ঞতা শেয়ারকালে মিতু নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সামাজিক কাজ করতে গিয়ে আমরা কিছু সমস্যা চিহৃত করেছি। যেগুলো হলো- গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেটের আসক্তি ভয়াবহ আকার বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুব সমাজের মধ্যে মাদকাশক্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। নেতিবাচক ধর্মীয় গোড়ামি, কারিগরি শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্যতার কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে গতানুগতিক শিক্ষার বাহিরে জীবনমুখী শিক্ষার অভাবে পাঠ্যপুস্তুকের প্রতি আনীহা দেখা দিয়েছে গ্রামের শিক্ষার্থীদের। এসব সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।
এসএইচ/
আরও পড়ুন