বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চর্চায় ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব
প্রকাশিত : ১৪:৫৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
বাংলাদেশের সুদীর্ঘ সময়ের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বীজ বুননের অন্যতম রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সোনার বাংলা তথা বাংলাদেশকে স্বর্গভূমি বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন বাঙালি জাতি ভালো মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে নিজস্ব একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি এবং মানবিক মানুষের দেশের পরিচিতি লাভ করবে। যেখানে থাকবে না ক্ষুধা-দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা আর বৈষম্য।
স্বাধীনতা অর্জন হলেও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপান্তরের আগেই স্বাধীনতা বিরোধীরা সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে। আশার বিষয়, দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই। অন্য এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। তার নেতৃত্বেই ‘ভালো মানুষ ভালো দেশ-স্বর্গভূমি সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা সম্ভব।
একসময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারে বাংলাদেশকে বলেছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ি। আজ তাদের মুখেই প্রশংসার ফুলঝুড়ি। এই সেদিনও বাজেট তৈরির সময়ে বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হতো। আর এখন বাজেট তৈরি হচ্ছে নিজেদের অর্থে। পদ্মা সেতুর ন্যায় বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজেদের টাকায়। বলা যায়, উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে বলে রাখা প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে দেশে যদি সৎ, মানবিক ও ইতিবাচক, উদার দৃষ্টিসম্পন্ন ভালো মানুষ না হয় তাহলে সত্যিকারের ভালো দেশ হয়ে ওঠা যাবে না।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল মানুষের জীবনেও পড়ছে। এ সময়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে দ্রুত বদলে যাওয়ার উত্তাপ লেগেছে। প্রযুক্তির প্রসার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে অনেক মন্দ বা ক্ষতিকর কিছুতে সহজে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। জীবনযাত্রার মান বাড়ার ফলে আমরা নিজেদের অনেক ঐতিহ্য-আভিজাত্য হারিয়ে ফেলছি। পারিবারিক শিক্ষা-দীক্ষায় শুদ্ধাচার, শিষ্টাচার, নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতি-নৈতিকতা ও সৎ মানুষ বানানোর পরিবর্তে শুধু সনদ অর্জনই অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের অন্যতম প্রধান উপাদান ছিল সততা, উদরতা, মানবতা। ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবরে পিজি হাসপাতালে তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘আপনাদের মানবতাবোধ থাকা দরকার, মনুষ্যত্ব থাকা দরকার, সততা থাকা দরকার- না হলে কোনো জাতি কোনোদিন বড় হতে পারে না।’ ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে ছাত্রলীগের সম্মেলনে স্পষ্টভাবে তিনি বলেছিলেন, ‘যতদিন এ দেশের দুঃখী মানুষ পেট ভরে খেতে না পারে, যতদিন অত্যাচার ও অবিচারের হাত থেকে তারা না বাঁচবে, যতদিন না শোষণমুক্ত সমাজ হবে, ততদিন সত্যিকারের স্বাধীনতা আসতে পারে না।’
আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর জীবন দেখি, তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে, সত্যিকারের দেশপ্রেম কাকে বলে। সততা, নৈতিকতা, শুদ্ধাচার, অসাম্প্রদায়িকতা, দেশপ্রেম সকল দিক থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিরল দৃষ্টান্ত।
আমাদের ভরসার জায়গাটা তারুণ্য। আমাদের দেশে এখন জনশক্তির বোনাসকাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) চলছে। অর্থাৎ এসময়ে মোট জনশক্তির মধ্যে তরুণ জনশক্তি বেশি। আমার বিশ্বাস এই তরুণরাই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত উত্তরাধিকারী হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারে।
তাই আজ আমাদের নতুন প্রজন্মকে, তারুণ্যকে বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ মানবিক, সৎ স্বপ্নবিলাসী জীবন সম্পর্কে জানতে হবে। কীভাবে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন, দেশ, জাতি নিয়ে তাঁর স্বপ্ন, চিন্তা, কাজ সবকিছু বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে।
একসঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, পারিবারিক-সামাজিক বন্ধন সবকিছুই। অর্থাৎ আমরা এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সাথে সাথে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব।
জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা পদ্ধতি নেই চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। এ সময়ে তারা শুধু শিষ্টাচার ও নৈতিকার শিক্ষা দিয়ে থাকে। জাপানের অপরাধ শূন্য শতাংশ। জাপানিদের এমন সুন্দর সমাজব্যবস্থার ভিত্তি হলো নৈতিকতা, যা দেশটির প্রতি নাগরিক স্কুল জীবনেই পেয়ে থাকে।
ভালো মানুষের সংজ্ঞা কী- এ বিষয়ে শহীদ আল বোখারী মহাজাতক সম্পাদিত ‘শুদ্ধাচার’ গ্রন্থ থেকে এখানে কয়েকটি লাইন তুলে ধরছি- ‘নীতি নৈতিকতাবান শুদ্ধাচারী মানুষই ভালো মানুষ। যা কিছু ভালো, যা কিছু কল্যাণকর তাই শুদ্ধ। যা কিছু মন্দ, যা কিছু অকল্যাণকর তাই অশুদ্ধ। যা কিছু সত্য, সুন্দর ও শুভ তাই শুদ্ধ। যা কিছু অসত্য, পঙ্কিল ও অশুভ তা-ই অশুদ্ধ। যা কিছু ন্যায় ও মানবিক তাই শুদ্ধ। যা কিছু অন্যায়, জুলুম ও অমানবিক তাই অশুদ্ধ। যা শুদ্ধ ও কল্যাণকর তাই ধর্ম আর অশুদ্ধ ও অকল্যাণকর তাই অধর্ম’।
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন