মানব সেবায় নিয়োজিত প্রবাসী সোহাগের গল্প
প্রকাশিত : ২২:৫৪, ১১ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০২, ১৩ মে ২০১৮
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাব হয়তো অনেক। কিন্তু সেটিকে যদি ভালো কাজে বা ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় তাহলে তা বয়ে আনে মানবকল্যাণ। ফেসবুক ব্যবহার করে মানব কল্যাণের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ইরাক প্রবাসী বাংলাদেশের সোহাগ মিয়া।
ফেসবুকে একটি পেইজ দেখাশুনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উজানিয়া গ্রামের ছেলে সোহাগ। পেইজটির নাম ‘মাই স্পোর্টস টিভি’। ইউটিউবেও আছে তার একটি চ্যানেল। এসব পেইজ ও চ্যানেলে সোহাগের অনুসারী আছেন প্রায় দশ লক্ষ। এর বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী।
এই ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন অসহায়, অসুস্থ অথবা অন্য কোন কারণে সাহায্য প্রার্থী এমন ব্যক্তিদের ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। সাহায্য প্রার্থীদের বর্তমান অবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন এবং সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করেন তিনি। সাহায্যপ্রার্থীরা তাদের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার বা বিকাশ নাম্বার দিয়ে দেন।
তার ভিডিও দেখে অনেকেই তখন আর্থিকভাবে সাহায্য করেন এসব সাহায্য প্রার্থীদের। আর এই মানবিক কাজগুলো সোহাগ করেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকের প্রবাস জীবনে থেকেই।
৩ বছর আগে ভাগ্যের সন্ধানে ইরাকে পাড়ি জমান সোহাগ মিয়া। সেখানকার একটি কনস্ট্রাকশন খাতে চাকরি শুরু করেন। আর বছর দেড় আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সেবামূলক কাজ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে ছুটিতে বাংলাদেশে অবস্থান করা সোহাগ ইটিভি অনলাইনকে জানান, “ইরাকে থাকার সময় অনেক প্রবাসীর মাধ্যমে প্রবাসী ও দেশের বিভিন্ন মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনতাম। এগুলো নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হলো যে, এমন একটি কাজ করি না কেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা নিজেদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলি। তাই সবার সহযোগিতায় এদেরকে সাহায্য করা সম্ভব মনে করে ফেসবুকে পেইজটি খুলে ফেলি”।
সাহায্য প্রার্থীদের সাহায্যের জন্য অর্থ কারা দেয় এবং সেই অর্থ কীভাবে তাদের কাছে পৌছায়; এমন প্রশ্নের উত্তরে সাগর জানান, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরাই মূলত এসব অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, “এসব অর্থ সরাসরি সাহায্য প্রার্থীদের ব্যাংক অথবা বিকাশ একাউন্টে জমা হয়। আমার ভিডিওতে সেই নম্বর দেওয়া থাকে। এমনকি যারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক তারা যেন ভুক্তভোগীদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন তাই তাদের যোগাযোগ নম্বরও আমি সেখানে দিয়ে দেই। পাশাপাশি সাহায্যকারীর প্রতি আমার অনুরোধ থাকে যে, তারা যেন সম্ভব হলে বিষয়গুলো যাচাইও করে নেন”।
এসব বিষয়ে প্রতারণার অভিযোগ শোনা যায় মাঝে মাঝে। এ বিষয়ে সোহাগ বলেন, “অনেকেই এভাবে প্রতারণা করেন। কিন্তু আমি এখানে কোন অর্থ নেই না। তাই প্রতারণাও করি না। যিনি সাহায্য করবেন তার অর্থ সরাসরি সাহায্য প্রার্থীর একাউন্টে জমা হয়। আর তাও বৈধ পথে”।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অসহায়দের সেবায় এমন কাজ করেন বলেও জানান সোহাগ।
গত দেড় বছরে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন অসুস্থ, অসহায় মানুষকে সেবা দিয়েছেন বলে জানান সোহাগ। এছাড়াও প্রবাসীদের দান করা অর্থ দিয়ে নিজ এলাকায় মাদ্রাসাও নির্মাণ করেছেন তিনি।
ভবিষ্যতেও এভাবে জন মানুষের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সোহাগ মিয়া।
//এস এইচ এস//টিকে
আরও পড়ুন