অগ্নিঝরা ১৯ মার্চ: প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ জয়দেবপুরে
প্রকাশিত : ২০:১০, ১৯ মার্চ ২০২০
আজ ১৯ তারিখ। অগ্নিঝরা মার্চের ১৯তম দিন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় জয়দেবপুরে (গাজীপুর)। সেখানে ৫০ জন শহীদ এবং দুই শতাধিক আহত হন।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশজুড়ে স্লোগান ওঠে- ‘জয়দেবপুরের পথ ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। হাজার হাজার মানুষ লাঠি-সোটা, বর্শা-বল্লম নিয়ে রাজপথে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।
জয়দেবপুরে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়। একদিন বিরতির পর সকালে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে তৃতীয় দফা একান্ত বৈঠক হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কোনো সহকারী উপস্থিত ছিলেন না।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি- বেসরকারি ভবন ও বাসভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ-তরুণীদের কুজকাওয়াজ ও অস্ত্রচালন প্রশিক্ষণ চলে।
সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক হয়। ২ ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস, জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন।
ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় এসে সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন।
সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তার নেই। করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখতে পাবেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় তাতে সারা দেশই হয়ে উঠে অগ্নিগর্ভ।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ মার্চ জয়দেবপুর থেকেই সর্ব প্রথম শুরু হয়েছিল বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। এ দিনটি প্রথম হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল স্বাধীনতার জন্য গাজীপুরের সংগ্রামী জনতার হাতের অস্ত্রে প্রথম গুলি।
দেশের সমগ্র জাতিকে সেদিন গাজীপুরবাসী দেখিয়েছিলেন মুক্তির পথ আর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার বলীয়ান। মহান মুক্তিযুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট ও মহিমান্বিত দিকটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। বিজয়ের গৌরবদীপ্ত মহিমান্বিত দিনটি অবিস্মরণীয় তাৎপর্যে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে বাঙালির জাতীয় জীবনে।
এসি