ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

অজগর কখন মানুষ গিলে খায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৬, ১৮ জুন ২০১৮

বৈচিত্র্যময় প্রাণীতে ঠাসা এ পৃথিবী। তার একটি অজগর। অজগর সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণী গিলে খায়। ছোট ইঁদুর দিয়ে অল্প বয়সী অজগর খাদ্য তালিকা শুরু করলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাদ্য তালিকায় আকারে বড় প্রাণী স্থান করে নেয়। সেখানে গরু যেমন থাকে তেমনি থাকে কুমির। তবে হ্যাঁ, মানুষ ও যে বাদ পড়েনা তা প্রমাণ হলো সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা থেকে।

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি প্রদেশের মুনা দ্বীপের বাসিন্দা ৫৪ বছরের ওয়া থিবা প্রতিদিনের মতো কাজ করতে গিয়েছিলেন বাড়ির কাছের সবজি ক্ষেতে। কিন্তু এই যাওয়া যে শেষ যাওয়া হবে তা আর কে জানত?

নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ী না ফিরলে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। গ্রামবাসী পরের দিন তার ক্ষেতের কাছে জঙ্গলে ঐ নারীর পায়ের স্যান্ডেল এবং হাতের ছুরিটি দেখতে পায়। আর তার খানিকটা দূরে দেখতে পায় দূরে শুয়ে পেট মোটা বিশাল এক ডোরাকাটা অজগর সাপ। গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। প্রতিশোধের আগুন মেটাতেই তারা সাপটিকে হত্যা করে। তারপর পেট চিরে দেখতে পায় তার ভেতর ঐ নারীর মরদেহ।

অজগরের পেট থেকে বের করা হচ্ছে নারীর মৃতদেহ- এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৫ সালে ফ্লোরিডায় একটি বার্মিজ অজগর, যেটিকে অজগর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় বলে ধরা হয়, একটি কুমির ধরে খেতে গেলে দুটিরই জীবন যায়। শিকার ধরার ব্যাপারে অজগর কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলে। পছন্দ সই খাবার না পেলে অনাহারে থাকতে পছন্দ করে এই বিশাল প্রাণীটি।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার নারী কী প্রথম মানুষ যিনি অজগরের পেটে গেলেন? না। গবেষকদের বক্তব্য অনুযায়ী না। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পাহাড়ি অজগর (রক পাইথন) ১০ বছরের একটি বালককে গিলে খায়।

গত বছর মার্চ মাসে সুলায়েসিতেই ২১ ফুট লম্বা একটি অজগর এক কৃষককে খেয়ে ফেলে। ২৫ বছরের ঐ যুবক বাড়ির কাছে পাম বাগানে গেলে করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে।

গত বছর ইন্দোনেশিয়ারই সুমাত্রা প্রদেশে প্রায় ২৪ ফুট লম্বা এক অজগর একটি পাম বাগানে এক কৃষকের ওপর চড়াও হয়। অনেক যুদ্ধ করে মারাত্মক জখম নিয়ে সে অবশ্য প্রাণে বেঁচে যায়।

নৃবিজ্ঞানী টমাস হেডল্যান্ডের ভাষ্যমতে, ফিলিপিনের জঙ্গলে ২৫ শতাংশ পুরুষ জীবনে কোন না কোন সময় অজগরের আক্রমণের শিকার হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার ব্রাওয়িজায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্প বিশেষজ্ঞ নিয়া কুরনিয়াওয়ান দাবি করেছেন, অজগর সাপ কম্পন, শব্দ বা বাতির আলো থেকে নিঃসরিত তাপের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর। বেশিরভাগ সময়ে তারা মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে।

কিন্তু সুবিধাজনক অবস্থানে পেলে খাবার হিসাবে মানুষকে টার্গেট করা অজগরের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।

শুরুতে ইন্দোনেশিয়ার যে অজগরটির কথা বলেছিলাম সেটি ছিল বিশাল আকৃতির ডোরাকাটা প্রজাতির। এই ধরণের অজগরগুলো সর্বোচ্চ ৩২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। শিকার বাগে পেলে এরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারপর দ্রুত শিকারকে শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলে প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকে। ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যে শিকারটি দম বন্ধ হয়ে বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। অজগর শিকার গিলে খায়। এই প্রাণীটির চোয়ালের পেশীগুলো নমনীয় হওয়ার ফলে শিকারের আকৃতি বড় হলেও সেটিকে আস্ত মুখের ভেতরে নিতে সমস্যা হয়না।

তবে সিঙ্গাপুরে বন্যপ্রাণী গবেষক মেরি রুথ-লো দাবি করেন, মানুষের কাঁধের হাড় সমস্যা তৈরি করে, কারণ ঐ হাড় বাঁকেনা।

/আআ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি