অঞ্জু ঘোষের অজানা কথা
প্রকাশিত : ২০:৪৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৫৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী ছিলেন অঞ্জু ঘোষ। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এ নায়িকা। তার মোহময়ী হাসিতে দুই বাংলার পুরুষরা ছিল পাগলপারা। যাত্রাপালার মাধ্যমে পথ চলা শুরু হলেও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন। ওই সময় গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে অঞ্জু ঘোষ মানেই সিনেমা হিট। তাকে দেখার জন্য, তার মন ভোলানো হাসির জন্য সিনেমা হলে ভিড় লেগে থাকতো।
অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি ঘোষ। ১৯৫৬ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার জন্ম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই অঞ্জু এবং তার পরিবার চলে আসেন চট্টগ্রামে। সেখানকার কৃষ্ণকুমারী গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হন। আর তখন থেকেই শুরু হয় তার নাচ শেখা। এরপর অঞ্জু ঘোষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন শুরু করেন। তারপর একটু একটু করে অঞ্জু ঘোষ সেলিব্রেটি হতে থাকেন। নাচ গান যাত্রাপালা আর মানুষের ধাওয়া খাওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৮২ সালে এফ কবির চৌধুরী পরিচালিত‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে পা রাখেন রুপলী পর্দায়। তারপর আর পেছনে ফেরা নয়, অঞ্জুর শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে চলা। তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ভক্ত দর্শকরা তাকে পর্দায় দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকতেন।
এরপর ১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ করে রাতারাতি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যান অঞ্জু ঘোষ। এই সিনেমাটি রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করেছিল। বাংলাদেশের শহর-বন্দর থেকে একেবারে গ্রামে-গঞ্জে মানুষের মুখে মুখে ছিল বেদের মেয়ে জোসনা। তখন অঞ্জুর ছবি মানেই হিট ছবি। হাতে আসতে থাকে একের পর এক ছবি। তার হিট ছবির মধ্যে ‘সওদাগর’ ‘নরম গরম’ ‘আবে হায়াত’ রাজ সিংহাসন’ চন্দনদ্বীপের রাজকন্যা’ ‘রাজার মেয়ে পারুল’ ‘অর্জন’ ‘দুর্নাম’ ‘কুরবানি’ ‘বেরহম’ ‘আশা নিরাশা’ ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ ‘আশীর্বাদ’ ‘মালা বদল’ অন্যতম।
এছাড়া অভিনয় করেছিলেন ‘বড় ভাল লোক ছিল’ ‘আয়না বিবির পালা’ ‘জাদুমহল’‘দায়ী কে? এসব সিনেমাতেও। বাংলাদেশ ছাড়াও কলকাতায়ও বেশ কিছু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন।
নব্বই দশকের সাড়া জাগানো এ নায়িকা এরপর হঠাৎ করেই চলে যান অন্তরালে। দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান কলকাতায়। সেখানেই গড়ে তোলেন নিজের স্থায়ী আবাস। তার হঠাৎ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। অনেকেই মনে করেন ভুল বুঝে চলে গেছেন।
কিন্তু অঞ্জু ঘোষ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ওই সময় যে ধরনের অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব আসছিল সেটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। সাজ পোষাক সব কিছুতে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। তাই সিনেমা করা ছেড়ে দিলাম।’
অঞ্জুর ঘোষের বয়স এখন ৬২। এ বয়সে তার দেশের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতে তার কাছে মধুর মতো মনে হয়। কারণ এ শহরেই তার বেড়ে ওঠা। এখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। অনেকেই তাকে বাংলাদেশে আনতে চাইলেও অঞ্জু ঘোষ আসতে রাজি হননি। কারণ এর পেছনেও তার একটা অভিমান ছিল।
তার ভাষায়, ‘আমার খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি আমাকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ভুল খবর বের হয়। আমি নাকি খেতে পাই না। কাজ না করেই আমি বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছি। এসব নোংরা কথায় আমার খুব রাগ হয়।’
দীর্ঘ ২২ বছর পর অঞ্জু ঘোষের সেই রাগ ভেঙেছে। তিনি ফিরে এসেছেন বাংলার কোলে। এ জন্য তিনি আবেগাপ্লুত। তার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এর সঙ্গেও হলো দেখা। এফডিসিতে এসে করেছেন স্মৃতিচারণ। অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘আমি যখন চলচ্চিত্রে আসি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। সেই থেকে অনেক বছর এখানেই কাজ করেছি। এ দেশের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। কোনো ক্ষোভ নেই। আমি বাংলাদেশকে অনেক ভালোবাসি। এদেশেই আমার জন্ম। আমি সবাইকে খুব মিস করি। এই এফডিসিই ছিল আমাদের ঘরবাড়ি। এটাই ছিল সংসার।’
অঞ্জু ঘোষ তার ক্যারিয়ারে প্রায় ৫০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। বাংলাদেশের নায়ক রাজরাজ্জাক, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন থেকে শুরু করে ওপার বাংলার রঞ্জিত মল্লিক, চিরঞ্জিত, প্রসেনজিৎসহ অনেকের সঙ্গে তিনি স্ত্রীন শেয়ার করেছেন।
বর্তমানে অঞ্জু ঘোষের সময় কাটে ধর্মচর্চা আর সংগীতচর্চা করে। তিনি কলকাতার সল্টলেকে ফ্ল্যাট কিনেছেন। ঘরের কাজ কর্ম তিনি নিজেই করতে পছন্দ করেন। টেলিভিশনে খবর দেখেন তবে টিভি সিরিয়াল দেখা তিনি পছন্দ করেন না। অবসর সময়টা ভাগ করে নেন নিজের ভাইয়ের বাচ্চাদের সঙ্গে। তবে অঞ্জু ঘোষ জানালেন, তিনি আর ক্যামেরার সামনে কখনোই দাঁড়াবেন না।
এসি